প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন কাল
রেলপথে যোগ হচ্ছে নতুন তিন রুট
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র যুক্ত হবে রেলপথে

শিপন হাবীব
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে রেলপথ। চলমান ৩১১৮.৩৮ কিলোমিটার রেলপথে ৬৯.২০ কিলোমিটার নতুন পথ যুক্ত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জয়দেবপুর, রূপপুর ও শশীদল রুটে নতুন এ রেলপথ উদ্বোধন করবেন। এর আগে গত ১৩ বছরে বর্তমান সরকার ৫১৯.১৪ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করে। গুরুত্বপূর্ণ নতুন এ পথে যাত্রী পরিবহণে সময় কমে আসবে। লাইনগুলো ডুয়েলগেজ হওয়ায় একই লাইনে মিটার ও ব্রডগেজ ট্রেন পরিচালনা করা যাবে।
নতুন তিন রেলপথের মধ্যে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সিগন্যালিংসহ রেললাইন সংস্কার ও নির্মাণ’ প্রকল্পটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক খাতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রর ভারী মালামাল এবং স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের যন্ত্রাংশ আনা-নেওয়ায় এ পথ হবে নিয়ামক। এছাড়া নতুন এ তিনটি পথে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করায় সেবা বৃদ্ধির সঙ্গে দীর্ঘ পথের ক্লান্তি অনেকটাই কমাবে, বলছেন রেলওয়েসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন যুগান্তরকে বলেন, বর্তমান সরকার রেলে ব্যাপক উন্নয়ন করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেল উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। আমাদের চলমান প্রকল্পগুলো সমাপ্ত হলেই রেলে আমূল পরিবর্তন আসবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ৯ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী তিনটি রুটে প্রায় ৭০ কিলোমিটার নতুন ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধন শেষে এসব লাইনে মালবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে। এতে রেলের আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সেবা বাড়বে। ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে চলমান ট্রেনের সময়সীমা কমিয়ে আনাও সম্ভব হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রায় সবকটি ট্রেন টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে কমবেশি আটকা পড়ে। কখনো ২০ মিনিট, কখনো বা ১ ঘণ্টার বেশি। এ পথে সিঙ্গেল লাইন থাকায় একটি ট্রেন পার হওয়ার পর আরেকটি ট্রেন চালাতে হয়। আবার সিগন্যালিং পেতে প্রায়ই ঘণ্টার পর ঘণ্টা আউটারে দাঁড় করে রাখতে হয় বিভিন্ন ট্রেন। এমন বিড়ম্বনার ইতি টানতেই এ পথে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) অর্থায়নে নির্মিত ‘ঢাকা-জয়দেবপুর ৩য় ও ৪র্থ লাইন স্থাপন প্রকল্প’-এ মোট ৪২ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে টঙ্গী-জয়দেবপুর ১২ কিলোমিটার রেলপথ উদ্বোধন হচ্ছে কাল।
এ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী নাজনীন আরা কেয়া যুগান্তরকে বলেন, মোট প্রকল্পের মধ্যে টঙ্গী-জয়দেবপুর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার নতুন রেলপথের কাজ সমাপ্ত হয়েছে বেশ কয়েক মাস আগেই। এ পথ উদ্বোধনের মাধ্যমে ঢাকা-পশ্চিমাঞ্চল রেলপথে আরও গতি বাড়িয়ে ট্রেন পরিচালনা সম্ভব হবে। যুগ যুগ ধরে ডাবল লাইন না থাকায় ধীরাশ্রমসহ প্রকল্প এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেন দাঁড় করিয়ে রাখা হতো সিগ্যানাল এবং লাইন পেতে। উদ্বোধনের পরপরই এ পথে ট্রেন চলবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নতুন রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। প্রকল্পের ভারী মালামাল পরিবহণে রেলপথই সবচেয়ে জরুরি হয়ে ওঠে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে (৩৩৬ কোটি টাকা) সমাপ্ত এ প্রকল্প ঘিরে স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠছে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ বাণিজ্যিক-অর্থনৈতিক জোনও। রেলপথে বেনাপোল হয়ে ভারী মালামাল পৌঁছে যাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এছাড়া মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি ট্রেনে মাল পৌঁছবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে।
প্রকল্প পরিচালক পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুল হক যুগান্তরকে জানান, এ পথে রেলের আয় বাড়বে সবচেয়ে বেশি। বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভারী মালামাল পরিবহণে রেল পাবে সিংহভাগ অর্থ। মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ট্রেনে মালামাল পরিবহণে ব্যবসায়ীরাও বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এ পথে শুধু মালবাহী নয়, একই সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রেনও পরিচালনা করা হবে।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের পুরোটা ডাবল লাইন না হওয়ায় অতিরিক্ত ট্রেন চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ট্রেনের গতি বাড়িয়ে শিডিউল টাইম কমিয়ে আনাও সম্ভব হচ্ছিল না। আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয় ২০১৪ সালে। এ প্রকল্পের মধ্যে গত দুবছর আগে কুমিল্লা-লাকসাম পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণের উদ্বোধন করেন রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। বৃহস্পতিবার শশীদল থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত প্রায় ৩১ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ পথে ডাবল লাইন না থাকায় একটি ট্রেন অন্য একটি ট্রেনকে পাশ দিতে গিয়ে বিভিন্ন স্টেশন ও আউটারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেন দাঁড় করিয়ে রাখা হতো। এ লাইন উদ্বোধনের পর এমন সমস্যার সমাধান হবে।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী সুবক্তগীন যুগান্তরকে জানান, আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। তিনটি পর্বের মধ্যে ইতঃপূর্বে কুমিল্লা-লাকসাম পর্যন্ত লাইন উদ্বোধন হয়েছে। এখন শশীদল-কুমিল্লা পর্যন্ত নতুন লাইন উদ্বোধন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে নতুন লাইনে নতুন ট্রেন পরিচালনাসহ চলমান ট্রেনগুলো নির্ধারিত গতি নিয়ে চলাচল করতে পারবে। প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।