Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে

আর্থিক উপদেষ্টা দপ্তরে ভেটিংয়ের নামে হয়রানি

আটকে আছে বিভিন্ন প্রকল্পের কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আর্থিক উপদেষ্টা দপ্তরে ভেটিংয়ের নামে হয়রানি

ফাইল ছবি

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের আর্থিক উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব কর্মকর্তার (এফএ অ্যান্ড সিএও) বিরুদ্ধে শতাধিক টেন্ডার ফাইল আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। ইজিপি টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে ভেটিং বা আর্থিক সম্মতির প্রয়োজন হয় প্রধান হিসাব কর্মকর্তার। কিন্তু কোনো ঠিকাদার দেখা করে সমঝোতা না করলে তিনি কোনো ফাইল ছাড়ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পশ্চিমাঞ্চল রেলের একাধিক কর্মকর্তাও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। এর ফলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ আটকে আছে। এতে নির্ধারিত অর্থবছরের মধ্যে কাজগুলো সম্পন্ন না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, এফএ অ্যান্ড সিএও অফিসে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, ই-জিপি টেন্ডার সূক্ষ্মভাবে ও বিধিবদ্ধ পদ্ধতিতে মূল্যায়ন হয়। এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় ক্রয় প্রক্রিয়াকরণ কারিগরি ইউনিট (সিপিটিইউ) ছাড়াও রেলওয়ের নির্ধারিত টেন্ডার কমিটির মূল্যায়নের পর ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের কারসাজির আশঙ্কাও থাকে না।

এদিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান হিসাব কর্মকর্তা একাধারে আর্থিক উপদেষ্টা ও স্থানীয় টেন্ডার কমিটির সদস্য। টেন্ডার প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে তার ভেটিং বা সম্মতির প্রয়োজন হয়। একইভাবে পশ্চিমাঞ্চল রেলের দুই রেল বিভাগ পাকশী ও লালমনিরহাটে অতিরিক্ত প্রধান হিসাব কর্মকর্তা ও আর্থিক উপদেষ্টা পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় পর্যায়ের টেন্ডার কমিটির সদস্য। কারিগরি মূল্যায়ন শেষে স্থানীয় টেন্ডার কমিটির সদস্যরা মন্তব্যসহ পর্যায়ক্রমে মতামতসহ অনুমোদনের জন্য পরবর্তী ধাপ প্রধান হিসাব কর্মকর্তার কাছে পাঠান। প্রক্রিয়া শেষে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়ে থাকে।

সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে ভেটিং বা আর্থিক সম্মতির জন্য পশ্চিম রেলের বিভিন্ন বিভাগের বেশকিছু প্রকল্পের টেন্ডার প্রধান হিসাব কর্মকর্তা ও আর্থিক উপদেষ্টার দপ্তরে পড়ে আছে অনেকদিন ধরে। সংশ্লিষ্ট টেন্ডার কমিটির প্রধানরা ভেটিং দিয়ে দ্রুত ফাইল ছেড়ে দেওয়ার তাগিদ দিলেও প্রধান হিসাব কর্মকর্তা তা ছাড়ছেন না। একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক নাম প্রকাশ না করে বলেন, ভেটিংয়ের নামে ঠিকাদারদের জিম্মি করে ফেলেছেন প্রধান হিসাব কর্মকর্তা। তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমঝোতায় না এলে কোনো ফাইল তিনি ছাড়ছেন না। এর ফলে রেলের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শুরু করতে যেমন বিলম্ব হচ্ছে, তেমনই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। এজন্য ঠিকাদারসহ রেল কর্মকর্তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

শুধু টেন্ডার ফাইলই নয়, বিভিন্ন বিল ছাড়করণেও সমস্যা তৈরি করছেন প্রধান হিসাব কর্মকর্তা বলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী কয়েক ঠিকাদার জানান, কাজ শেষে বিলের জন্য প্রধান হিসাব কর্মকর্তার দপ্তরে ফাইল গেলে সেই ফাইল সহজে নড়ে না। বিশেষ করে কর্মচারীদের বেতন ছাড়করণেও তাকে টাকা না দিলে বিল ছাড় করছেন না তিনি। এতে কম বেতনের ছোট কর্মচারীরা বিপাকে পড়ছেন। টেন্ডার প্রাক্কলনের সময় একদফা হিসাব বিভাগের আর্থিক সম্মতি নেওয়া হয়ে থাকে। ফলে টেন্ডার মূল্যায়নের পরও পুনরায় হিসাব বিভাগের ভেটিংয়ের প্রয়োজন নেই বলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কর্মকর্তারা মনে করেন। ১৩ অক্টোবর পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী ডিভিশনের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মন্ডলের দেওয়া এক পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, পিপিআর-২০০৩ মোতাবেক বিভিন্ন ক্রয়কার্য সম্পাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য চুক্তি সম্পাদনের পর ব্যয় কার্যক্রম প্রস্তাবের ওপর হিসাব বিভাগের ভেটিং নেওয়ার প্রচলন আছে। কিন্তু পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ক্রয় কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির (সিপিটিইউ) ২০০৫ সালের ১৬ মের পত্রে বলা হয়েছে, দরপত্র মূল্যায়নের পর অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপনের আগে মূল্যায়ন কমিটির সদস্য নয়-রেলওয়ের হিসাব বিভাগের এমন কর্মকর্তার কাছ থেকে নোট গ্রহণের অবকাশ নেই। সেই মোতাবেক ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের চুক্তিপত্র সম্পাদনের ক্ষেত্রে আর্থিক বা হিসাব বিভাগের সম্মতি গ্রহণের প্রয়োজন নেই। এটা সংশোধিত ক্রয় বিধিমালা-২০০৮-এর বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

ভুক্তভোগী রেলওয়ের কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা অভিযোগে বলেন, পশ্চিম রেলের পাকশী ও লালমনিরহাট ডিভিশনের বিভাগীয় হিসাব কর্মকর্তা ও আর্থিক উপদেষ্টারা পিপিআর বিধিমালা অনুযায়ী ক্রয়কার্যে ভেটিং প্রদানের ক্ষমতা রাখেন না। কিন্তু তারাও ভেটিংয়ের নামে ফাইল আটকে ঠিকাদারের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করছেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পশ্চিম রেলের আর্থিক উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, আমার দপ্তরে কোনো ফাইল আটকে থাকে না। এখনো নেই। আমি বিধিমালা অনুযায়ী রেলওয়ের আওতাভুক্ত সব ক্রয়কার্য ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের টেন্ডারে ভেটিং করে থাকি। আর্থিক উপদেষ্টা ও প্রধান কর্মকর্তার এটা দেখার দায়িত্ব নির্দিষ্ট আইন ও বিধিমালা দ্বারা স্বীকৃত। অনেকেই এই ধাপটি এড়িয়ে যেতে চান। কারও ফাইল আটকে কোনো ধরনের সুবিধা গ্রহণের কোনো ঘটনা ঘটে না। সবকিছুই স্বচ্ছভাবে করা হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম