ঢাকা-বরিশাল রুটে বিমান সার্ভিস বন্ধের ষড়যন্ত্র!
আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকা-বরিশাল রুটে বিমান সার্ভিস বন্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। পদ্মা সেতু চালুর পর যাত্রী সংকটের অজুহাতে এ রুটে বিমানের দৈনিক ফ্লাইটের সংখ্যা সপ্তাহে তিন দিন কমিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া মহানগর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বিমানের যাত্রী আনা-নেওয়ার সার্ভিসটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে শীতকালীন শিডিউলে সপ্তাহে ছয় দিন বিমান চালানোর ঘোষণা দিয়েও তা থেকে সরে এসেছে বিমান। অথচ এ রুটে যাত্রীসংখ্যা খুব একটা কমেনি।
জানা যায়, পদ্মা সেতু চালুর পর প্রথমদিকে কিছুটা কমলেও বর্তমানে স্বাভাবিক হয়েছে। প্রতি ট্রিপে শতকরা ৭০-৭৫ ভাগ আসন পূর্ণ থাকছে। অন্যদিকে বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা নিয়মিত দৈনিক ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত বছরের মার্চে বিমানের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু হয়। সেসময় ঢাকা-বরিশাল রুটে সপ্তাহে ২৮টি ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দেয় ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ার। অথচ এ রুট বাদ দিয়ে বিমান শিডিউল ঘোষণা করে। বিষয়টি জানতে পেরে বিমানকে ফ্লাইট পরিচালনার নির্দেশনা দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তথ্যানুযায়ী-প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় তার দপ্তর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী-২৬ মার্চ থেকে বিমান দৈনিক ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে।
এদিকে ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালুর পর আকাশপথের যাত্রীদের সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পায়। সংশ্লিষ্টরা বলে আসছিলেন-এ সংকট সাময়িক। পদ্মা সেতু নিয়ে আনন্দের ক্ষণ পেরুলে আকাশপথের যাত্রীসংখ্যা বাড়বে। কিন্তু এতে কান না দিয়ে ৫ আগস্ট থেকে এ রুটে দৈনিক ফ্লাইটের জায়গায় সপ্তাহে তিন দিন ফ্লাইট চালাতে শুরু করে বিমান। বরিশাল নগর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের বিমানবন্দরে যাত্রী আনা-নেওয়ার সার্ভিস ১ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মাসখানেক আগে বিমানের ওয়েবসাইটে দেওয়া শীতকালীন শিডিউলে সপ্তাহে ছয় দিন ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দিয়েও তা বাতিল করা হয়েছে। বর্তমানের তিন দিনের শিডিউল বহাল রাখা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে এ রুটের যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। এদিকে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের দৈনিক ফ্লাইটে আসা-যাওয়া মিলিয়ে গড়ে ১২০-১৩০ জন করে যাত্রী পাচ্ছি।
বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকা-বরিশাল রুটের দূরত্ব ৬১ অ্যারোনটিক্যাল মাইল। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের দূরত্ব ১০০ অ্যারোনটিক্যাল মাইলেরও বেশি। অথচ দুই রুটের যাত্রীরা প্রায় সমান ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করেন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকা-যশোর রুটে প্রায় ৬০ শতাংশ যাত্রী কমেছে। এ রুটে ফ্লাইট কমেনি। তাহলে বরিশাল কী দোষ করল? ফর এভার লিভিং সোসাইটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, আমার প্রশ্ন, ফ্লাইট কমানোর ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যাহিদ হোসেন বলেন, ‘বিজনেস পলিসি তো আমি বুঝি। যাত্রী কম হওয়ায় সপ্তাহে তিন দিন ফ্লাইট চালানো হচ্ছে। এর বেশি বাড়ানো সম্ভব নয়।’ বরিশাল বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক আবদুর রহিম তালুকদার বলেন, জুলাইয়ে যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা কমলেও আগস্টে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সেপ্টেম্বরে অবস্থা আরও ভালো।
বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য রুবিনা মীরা বলেন, কমিটির পরবর্তী সভায় বিষয়টি তুলব। জবাবদিহিতাও চাইব। অবশ্যই এ রুটে বিমানের নিয়মিত ফ্লাইট চালু করতে হবে। বিমানমন্ত্রী ও সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমি কথা বলব।