Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

রেলওয়ের সার্ভারে ত্রুটি

ঘণ্টার পর ঘণ্টায়ও মেলে না টিকিট

অনলাইন ও কাউন্টারে যাত্রী দুর্ভোগ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২২, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঘণ্টার পর ঘণ্টায়ও মেলে না টিকিট

রেলওয়ের সার্ভারে ত্রুটির কারণে শুধু কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টার নয়, অন্য ৭৬টি কাউন্টারেও যাত্রী দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও মিলছে না কাক্সিক্ষত টিকিট। একই সঙ্গে অনলাইনে টিকিট কাটতে গিয়েও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। স্বাভাবিক সময়ে টিকিট বিক্রিতে এমন চরম অব্যবস্থাপনায় যাত্রীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

জানা গেছে, ১৫ বছর ধরে টিকিট বিক্রিকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমকে (সিএনএস) বাদ দিয়ে আরেকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকমকে টিকিট বিক্রির দায়িত্ব দেওয়া হয়। শনিবার থেকে সহজ ডটকম টিকিট বিক্রি শুরু করে। কিন্তু, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। শনিবার ভোর থেকে ৭৭টি স্টেশনে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। টিকিট বিক্রি নিয়ে আগের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সাধারণ যাত্রীদের কাঁড়ি কাঁড়ি অভিযোগ ছিল। কিন্তু কোনো অভিযোগই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি।

সরেজমিন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে দেখা যায়, ঈদের মতো শত শত যাত্রী কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা করছেন। বহু যাত্রী মধ্যরাত ও ভোরে লাইনে দাঁড়িয়েও কাক্সিক্ষত টিকিট পাননি। আবার অনলাইনে যারা শত চেষ্টা করেও টিকিট কাটতে পারেননি তাদের অধিকাংশ স্থানীয় স্টেশনের কাউন্টারে দাঁড়িয়েছেন। এতে তাদের দুর্ভোগ দ্বিগুণ হয়েছে। রাজশাহীগামী শাহজাহান জানান, প্রায় ৩ ঘণ্টা অনলাইনে চেষ্টা করে টিকিট কাটতে পারেননি। অনলাইনে তিনি ঢুকতেই পারেননি। তাই বাধ্য হয়ে সকালে কাউন্টারে এসেছেন। কাউন্টারে এসেও তিনি টিকিট পাননি।

eticket.railway.gov.bd

ওয়েবসাইটে টিকিট বিক্রির অব্যবস্থাপনা চলছে। কিন্তু অভিযোগ-প্রতিবাদ কর্ণপাত করেনি সহজ ডটকম ও রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নতুন সিস্টেমের বিষয়ে বুকিং সহকারীদের প্রশিক্ষণ না থাকায় সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ঘুরেফিরে সব একই। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হলে যা হয়, কোনো জবাবদিহিতা নেই। আমাদেরও কিছুই করার নেই। আমরা শুধু সহকারী বুকিং মাস্টার দ্বারা টিকিট প্রিন্ট করে বিক্রি করি। এখন পুরো প্রক্রিয়াটি সহজ ডটকম করছে। সব কিছুই তাদের হাতে। অনলাইন অথবা কাউন্টারে টিকিট বিক্রির মূল কাজটি সহজের করার কথা। তিনি আরও বলেন, সকালের দিকে কাউন্টার থেকে কিছু টিকিট বিক্রি হলেও ঘণ্টাখানেক পর টিকিটেই সমস্যা দেখা দেয়। টিকিটের গায়ে প্রায় অর্ধেক শব্দই ভুল আসে।

জানা যায়, শনিবার প্রতিটি স্টেশনেই যাত্রীদের ভিড় ছিল। টিকিট কাটতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন যাত্রীরা। যারা টিকিট কাটতে পেরেছেন তাদের অনেকে আবার টিকিট ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ, বহু টিকিট ভুলেভরা ছিল। কোনো টিকিটে ট্রেনের নাম ভুল, কোনোটিতে ট্রেন ছাড়ার সময় ও টিকিটের মূল্যসহ নানা সমস্যা ছিল। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে মোবাইল ফোনে যাত্রী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নতুন প্রতিষ্ঠানের সিস্টেমে খুব সহজেই টিকিট কাটতে পারবেন এমন আশা নিয়ে বহু যাত্রী স্টেশনে এসেছিলেন। কিন্তু, বাস্তবে তার উলটো ঘটেছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকায় যাবেন বলে ভোর থেকে অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা করছিলেন। সেখানে না পেরে কাউন্টারে এসেছেন। এসে দেখেন সার্ভারে ত্রুটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনিয়র এক বুকিং মাস্টার জানান, ১৫ বছর ধরে সিএনএস টিকিট বিক্রি করেছিল। নতুন করে সহজ ডটকম টিকিট বিক্রির দায়িত্ব পেয়েছে। কিন্তু সমস্যা আগের চেয়েও খারাপ। তিনি বলেন, রেলওয়ে যতক্ষণ না নিজস্বভাবে টিকিট বিক্রি করতে পারবে ততক্ষণ সাধারণ যাত্রীরা উন্নত সেবা পাবে না। অন্যের দ্বারা যাত্রীরা যথাযথ সেবা পাবে না। বেসরকারি পর্যায়ে টিকিট বিক্রিতে সংশ্লিষ্টরা লাভবান হয়। সাধারণ যাত্রীরা সন্তোষজনক সেবা পায় না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডার দেওয়ার মধ্যে অনিয়ম-দুর্নীতি রয়েছে। ফলে শত দুর্ভোগের কথা জেনেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চুপ করে থাকেন। নতুন পদ্ধতিতে টিকিট বিক্রির শুরুর দিনে সহজ ডটকম অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে এমন অভিযোগ করেছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, প্রথম দিনে অনলাইনে প্রত্যাশিত সংখ্যক টিকিট বিক্রি করতে পারেনি সহজ। সকাল থেকে টিকিট বিক্রির হার পূর্বের যেকোনো সময় থেকে কম ছিল। বিষয়গুলো নিয়ে সহজ ডটকম-এর পাবলিক রিলেশন্সশিপ ম্যানেজার ফারহাত আহমেদ যুগান্তরকে জানান, পুরো বিষয়টি আমরা মাত্র ২১ দিনে সম্পন্ন করেছি। এতে পুরোপুরি সবকিছু যথাযথ হয়ে ওঠেনি। অনলাইন-কাউন্টারে টিকিট বিক্রিতে সমস্যা হচ্ছে স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, শুরুতে সার্ভার ভালোই ছিল। পরে অতিরিক্ত হিট পড়ায় সমস্যা দেখা দেয়। আমরা আশা করছি-অল্প সময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান করে যাত্রীদের প্রত্যাশিত সেবা দিতে পারব। তিনি আরও বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আমাদের ১৮ মাস সময় দিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে আমরা পুরো সার্ভার সিস্টেম শতভাগ উন্নত করব। এর মধ্যে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, ৭৭টি স্টেশন থেকে প্রতিদিন ১০৫টি আন্তঃনগর ট্রেনের প্রায় ৯০ হাজার টিকিট বিক্রির সক্ষমতা রয়েছে। মোট টিকিটের ৫০ শতাংশ কাউন্টার আর ৫০ শতাংশ অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম