
পুরান ঢাকার চকবাজারের শঅহী জিলাপির কদর বেশি। ছবি: যুগান্তর
সারাদিন রোজা থাকার পর ইফতারির সঙ্গে এক টুকরো গরম মচমচে জিলাপি অন্যরকম তৃপ্তি এনে দেয়। তাই ইফতারির খাবারের পদ হিসেবে সবার প্রিয় এটি।
বছরের অন্য সময়টাতে জিলাপি খুব একটা খাওয়া না হলেও রোজায় কমবেশি সবারই খাওয়া হয়। যদিও ডায়াবেটিসের রোগীরা এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। কারণ জিলাপিতে প্রচুর পরিমাণে চিনির ব্যবহার হয়।
যাদের এ রোগ নেই তারা অনায়াসে জিলাপির স্বাদ উপভোগ করেন রমজানে। ইফতারির খাবার হিসেবে জিলাপি এতটাই জনপ্রিয় যে শহর থেকে শুরু করে মফস্বল বা গ্রাম সব জায়গাতেই পাওয়া যায় এটি।
রোজাদারদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে বাজারে বিভিন্ন ধরনের জিলাপি তৈরি করা হয়। এসব জিলাপির স্বাদ ও দামেও থাকে ভিন্নতা। রোজার সময় তৈরি জিলাপিগুলোর মধ্যে শাহী জিলাপি, বোম্বে জিলাপি, রেশমি জিলাপি, রেশমি জাফরানি জিলাপি, প্যাঁচ জিলাপি অন্যতম। তবে এ সময়ে রেশমি বা চিকন জিলাপির আলাদা কদর থাকে।
জিলাপি তৈরি করতে প্রথমে গুঁড়া দুধ, ময়দা, লবণ, বেকিং পাউডার দিয়ে খামির তৈরি করা হয়। তারপর সেই খামিরকে জিলাপির ধরন অনুযায়ী আকৃতি করে গরম তেলে গাঢ়ো বাদামি রং করে ভেজে নেয়া হয়।
অনেক প্রসিদ্ধ জায়গার জিলাপি ভাজতে ঘিয়েরও ব্যবহার করা হয়। অপরদিকে অন্য পাত্রে চিনি, পানি, দারুচিনি ও এলাচ দিয়ে সিরা তৈরি করা হয়। জিলাপি ভেজে সঙ্গে সঙ্গেই ছেড়ে দেয়া হয় গরম সিরায়। খেয়াল রাখতে হয় সিরা যাতে গরম থাকে।
নির্ধারিত সময় পর্যন্ত সিরায় রাখার পর গরম গরম জিলাপি উঠিয়ে অন্যপাত্রে রাখা হয়। এরপর তা পরিবেশন করা হয়।
বর্তমানে সবার প্রিয় জিলাপির কথা বললে গেলে রেশমি জিলাপির নাম চলে আসে। রাজধানীর গুলশান ২-এর খাজানা রেস্তোরাঁয় রেশমি জাফরানি জিলাপি নামে অত্যন্ত সুস্বাদু এক জিলাপি তৈরি করা হয়।
এই জিলাপি মূলত ভারতের রাজস্থানের খাবার, যাতে জাফরানের ব্যবহার করা হয়। এই জিলাপির দাম প্রতিকেজি ৯০০ টাকা। এ ছাড়াও রাজধানীর স্টার হোটেল অ্যান্ড কাবাব, ক্যাপিটাল, আম্বালা, সুইস, স্কাইলার্কসহ নানা রেস্তোরাঁ এবং কনফেকশনারিতে রেশমি বা চিকন জিলাপি তৈরি হয়।
যেগুলোর বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি। এই জিলাপি এতটাই জনপ্রিয় যে ইফতারির খাবার হিসেবে বিভিন্ন চাইনিজ রেস্টুরেন্টগুলোতেও বর্তমানে প্রস্তুত করা হয়।
একটি ভিন্ন পদ হিসেবে ঐতিহ্যবাহী নাম শাহী জিলাপি। এই জিলাপির উৎপত্তি চকবাজারে। যদিও এটি এখন ছড়িয়ে গেছে শহরের নানা প্রান্তে। চকের ইফতারির বাজারের যে দু-একটি খাবার এখনও কিছুটা মান ধরে রেখেছে তার মধ্যে শাহী জিলাপি একটি।
এই জিলাপি ওজনে ১ থেকে ৪-৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। বেশ মোটা, প্যাঁচানো এই জিলাপি মাসকলাইয়ের ডাল, বেসন, ঘি, ডালডা আর ময়দা দিয়ে তৈরি করা হয়। চকের শাহী জিলাপির দাম প্রতি কেজি ২০০ টাকা।
বোম্বে জিলাপি মোটা ও বেশ রসালো। রাজধানীর সব জায়গাতেই কমবেশি এই জিলাপি পাওয়া যায়। দাম ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি।
প্যাঁচ জিলাপি বলতে সাধারণত সব জায়গায় আড়াই প্যাঁচের যে জিলাপি তৈরি করা হয় তাকেই বোঝানো হয়ে থাকে। দেশের প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকানগুলোর বেশিরভাগই রোজায় এই জিলাপি তৈরি করে। এসব জিলাপি এলাকাভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি।
জিলাপি ছড়িয়ে গেছে দেশের বিভিন্ন মফস্বল ও গ্রামেও। আমিত্তির পাশাপাশি সেখানেও এখন জিলাপি তৈরি হয়। দাম রাজধানী ঢাকা বা শহরাঞ্চলের তুলনায় কিছুটা কম।