সিলেট বিভাগজুড়ে নৌকার ভরাডুবি
জেলার ১৮ ইউনিয়নের মধ্যে ফলাফল ১৬টির * ১০টিতে পরাজিত নৌকার প্রার্থীরা
আবদুর রশিদ রেনু, সিলেট
প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২২, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পঞ্চম ধাপে সিলেট বিভাগজুড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকধারী প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। বুধবার সিলেট বিভাগের চার জেলায় অনুষ্ঠিত হয় ৭৫টি ইউনিয়নের নির্বাচন।
দুটির নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। ফলাফল ঘোষিত ৭৩টির মধ্যে ৪৪টিতেই প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। এমন বিপর্যয়ের মধ্যে ২৯টিতে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। এছাড়াও ভোটাররা এবার পরিবর্তনের লক্ষ্যে ভোট দিয়েছেন। ফলে বুধবার বিভাগে অনুষ্ঠিত ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ বর্তমান চেয়ারম্যান পরাজিত হয়েছেন। বিজয়ের কেতন উড়িয়েছেন নতুনরা।
পঞ্চম ধাপে সিলেট জেলার ১৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ফলাফল হয়েছে ১৬টির। এর মধ্যে ১০টিতে পরাজিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। নৌকা হারিয়ে ২টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও ২টিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, স্বতন্ত্রের ব্যানারে ৩টিতে জামায়াত, ২টিতে বিএনপি ও ১টিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়লাভ করেছেন।
সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচিত হয়েছেন বারহালে জামায়াতের মোস্তাক আহমদ, বীরশ্রীতে আওয়ামী লীগের আবদুস সাত্তার, খলছড়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী জাতীয় পার্টি নেতা আবদুল হক, কসকনকপুরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আলতাফ হোসেন লস্কর, মানিকপুরে আওয়ামী লীগের আবু জাফর মো. রায়হান, বারঠাকুরীতে আওয়ামী লীগের মহসিন মুর্তজা চৌধুরী টিপু ও জকিগঞ্জ সদরে আওয়ামী লীগের মাওলানা আফতাব আহমদ। উপজেলার কাজলসার ও সুলতানপুর ইউনিয়নের নির্বাচনের সম্পন্ন হয়নি। কানাইঘাট উপজেলায় বিজয়ীরা হলেন লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের তমিজ উদ্দিন, লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নে জমিয়তের মাওলানা জামাল উদ্দিন, দিঘীরপাড়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আবদুল মোমিন চৌধুরী, সাতবাঁকে জামায়াতের আবু তায়্যিব শামীম, বড়চতুলে বিএনপির আবদুল মালিক চৌধুরী, কানাইঘাট সদরে আওয়ামী লীগের আফসার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, দক্ষিণ বাণীগ্রামে জামায়াতের মাস্টার লোকমান আহমদ, ঝিঙ্গাবাড়িতে বিএনপির মাস্টার আবু বকর ও রাজাগঞ্জে জমিয়তের মাওলানা শামসুল ইসলাম।
সুনামগঞ্জ জেলার তিন উপজেলার ১৮ ইউনিয়নের মধ্যে ৭টিতে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হলেও ১১টিতে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হন। ১১ ইউনিয়নের মধ্যে ৮ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী, ২ ইউনিয়নে বিএনপি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন ১টি ইউনিয়নে। জেলার শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নে বিএনপির আব্দুল্লাহ আল নোমান, হবিবপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী সুবল চন্দ্র দাস, বাহাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু এবং শাল্লা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের আব্দুছ ছাত্তার বিজয়ী হন। জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলীতে সুব্রত সামন্ত সরকার, ফেনারবাঁকে কাজল তালুকদার, সাচনা বাজারে বিএনপির মাসুক মিয়া, ভীমখালীতে বিএনপির আক্তারুজ্জামান তালুকদার বিজয়ী হন। ধর্মপাশা উপজেলায় ধর্মপাশা সদরে আওয়ামী লীগের জুবায়ের পাশা হিমু, সেলবরষে স্বতন্ত্র গোলাম ফরিদ খোকা, পাইকুরাটিতে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী মোজাম্মেল হক ইকবাল, জয়শ্রীতে আওয়ামী লীগের সঞ্জয় রায় চৌধুরী, সুখাইড় রাজাপুর উত্তরে আওয়ামী লীগের নাসরিন সুলতানা দীপা, সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মোকাররম হোসেন, মধ্যনগরে আ.লীগের বিদ্রোহী সঞ্জিব তালুকদার টিটু, চামরদানিতে আওয়ামী লীগের আলমগীর খসরু, বংশীকুণ্ডা দক্ষিণে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী রাসেল আহমেদ, বংশীকুণ্ডা উত্তরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী নুরুন্নবী বিজয়ী হন।
হবিগঞ্জ জেলার ২১টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ৬টিতে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকধারী প্রার্থী। বাকি ১৫টিতে নৌকার ভরাডুবি হয়েছেন। এর মধ্যে চুনারুঘাট উপজেলায় নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা হচ্ছেন গাজীপুরে বিএনপির মোহাম্মদ আলী, আহম্মদাবাদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী জাকির হোসেন পলাশ, দেওরগাছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মো. মহিতুর রহমান সুমন ফরাজি, পাইকপাড়ায় আওয়ামী লীগের ওয়াহেদ আলী মাস্টার, শানখলায় জামায়াত সমর্থিত অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, চুনারুঘাট সদরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, উবহাটায় বিএনপি নেতা এজাজ ঠাকুর চৌধুরী, সাটিয়াজুরী আওয়ামী লীগের আবদালুর রহমান, রানীগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের মোস্তাফিজুর রহমান রিপন, মিরাশিতে আওয়ামী লীগের মানিক সরকার।
মাধবপুর উপজেলায় বিজয়ীরা হচ্ছেন জগদীশপুরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মাসুদ খান, আন্দিউড়ায় আওয়ামী লীগের আতিকুর রহমান, বহরায় আওয়ামী লীগের মো. আলাউদ্দিন, বাঘাসুরায় স্বতন্ত্র সাহাব উদ্দিন, ধর্মঘরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ফারুক আহমেদ পারুল, চৌমুহনীতে বিএনপির মাহবুবুর রহমান সোহাগ, শাহজাহানপুরে বিএনপির পারভেজ আলম চৌধুরী, ছাতিয়াইনে বিএনপির মিনহাজ উদ্দিন আহমেদ কাসেদ, নোয়াপাড়ায় বিএনপির সৈয়দ সোহেল, আদাঐরে স্বতন্ত্র মীর খোর্শেদ আলম, বুল্লা ইউনিয়নে বিদ্রোহী মিজানুর রহমান।
মৌলভীবাজার জেলায় কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ১০টিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হন। বাকি ৮টিতে নৌকার ভরাডুবি হয়। যারা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন- কমলগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা হলেন রহিমপুরে আওয়ামী লীগের ইফতেখার আহমেদ বদরুল, পতনউষারে স্বতন্ত্র অলি আহমদ খান, মুন্সীবাজারে স্বতন্ত্র নাহিদ আহমদ তরফদার, শমসেরনগরে স্বতন্ত্র জুয়েল আহমদ, কমলগঞ্জ সদরে আওয়ামী লীগের আব্দুল হান্নান, আলীনগরে স্বতন্ত্র নিয়াজ মুর্শেদ রাজু, আদমপুরে স্বতন্ত্র আবদাল হোসেন, মাধবপুরে আওয়ামী লীগের আসিদ আলী ও ইসলামপুরে সুলেমান মিয়া এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুরে স্বতন্ত্র মিজলু আহমদ চৌধুরী, ভূনবীরে আওয়ামী লীগের আব্দুর রশীদ, সদরে স্বতন্ত্র দুদু মিয়া, সিন্দুরখানে স্বতন্ত্র ইয়াসিন আরাফাত রবিন, কালাপুরে আওয়ামী লীগের এমএ মতলিব, আশিদ্রোণে আওয়ামী লীগের রনেন্দ্র প্রসাদ বর্ধন, রাজঘাটে আওয়ামী লীগের বিজয় ব্যানার্জি, কালীঘাটে প্রাণেশ গোয়ালা ও সাতগাঁওয়ে দেবাশীষ দেব।