সাক্ষাৎকারে সেনা কল্যাণ ইন্সুরেন্সের সিইও
সেবার মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই
মনির হোসেন
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে সেনা কল্যাণ ইন্সুরেন্স কোম্পানি। নির্ধারিত সময়ে বিমাদাবি পরিশোধ ও নিয়মের মধ্য দিয়ে চলার কারণে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৭ বছরে গ্রাহকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। করোনার মধ্যেও এ বছর ১০ টাকার প্রতি শেয়ারের বিপরীতে প্রায় ৪ টাকা আয় হয়েছে। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে আগামী দিনে এ হার আরও বাড়বে।
সবকিছু মিলে সেবার মাধ্যমেই মানুষের কাছে পোঁছাতে চাই। যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে সেনা কল্যাণ ইন্সুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিক শামীম এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কোম্পানিটিকে শেয়ারবাজারে আসার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ৩ অক্টোবর থেকে আইপিও (প্রাথমিক শেয়ার) আবেদন শুরু হবে। আর শেয়ারবাজারে এলে সাধারণ বিনিয়োগকারী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রত্যাশা পূরণ করবে এ কোম্পানি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনির হোসেন
যুগান্তর : সামগ্রিকভাবে দেশের বিমা খাতে চ্যালেঞ্জ কী?
শফিক শামীম : দেশের বিমা খাতে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, আস্থার সংকট। এখনো মানুষ মনে করে, বিমা কোম্পানিগুলো প্রিমিয়াম নেওয়ার সময় ঠিক থাকে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সময় গড়িমসি করে। সম্প্রতি বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার (আইডিআরএ) পদক্ষেপের কারণে সংকট কিছুটা কাটতে শুরু করেছে। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হলো-ব্যাংকের মতো বিমা সেবাও যে জরুরি, সাধারণ মানুষের মধ্যে সেই সচেতনতা তৈরি হয়নি। উন্নত বিশ্বে ব্যাংক ও বিমা একসঙ্গে চলে। প্রত্যেক মানুষের জীবন, বাসস্থান, ঘরবাড়ি সবকিছুর বিমা মোটামুটিভাবে করা থাকে। বাংলাদেশে বাধ্য না হলে কেউ বিমা করতে চান না। তৃতীয় চ্যালেঞ্জ-বিভিন্ন রকম কমিশন ও অন্যান্য বাণিজ্য। একজন বিমাকারীর ১০০ টাকা প্রিমিয়ামের বিপরীতে ৪০ টাকা কমিশন দেওয়া হলে এ বিমাটা রি-ইন্সুরেন্স বা পুনঃবিমা করা হয় না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায় না। তবে বর্তমানে এ সমস্যা কিছুটা কাটতে শুরু করেছে।
যুগান্তর : এ চ্যালেঞ্জের মধ্যে আপনাদের কোম্পানির সম্ভাবনা কেমন?
শফিক শামীম : অন্যদের চেয়ে আমাদের কোম্পানিটি একটু ভিন্ন। এ কোম্পানির সব শেয়ারই প্রাতিষ্ঠানিক। অর্থাৎ এখানে কোনো ব্যক্তিগত শেয়ারহোল্ডার নেই। সব শেয়ারের মালিক সেনা কল্যাণ সংস্থা। এজন্য এখানে কোনো ব্যক্তিস্বার্থ কাজ না করায় আমরা সরকার ও আইডিআরের নিয়মগুলো মেনে চলতে পারি। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ কিছুটা মোকাবিলা করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, আমরা কমিশন দিই না। একই সঙ্গে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকি। এর মধ্যে নেপালে ইউএস বাংলার বিমান দুর্ঘটনা অন্যতম।
যুগান্তর : আপনাদের বিজনেসের মূল কৌশল কী?
শফিক শামীম : আমরা এ কার্যক্রমে দুটি বিষয় কাজে লাগাতে চাই। প্রথমত, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে। এ ইমেজকে আমরা কাজে লাগাই। পাশাপাশি এ ইমেজ যাতে আরও বৃদ্ধি পায়, আমরা সেই চেষ্টা করি। মানুষের কাছে আমাদের বার্তা হলো-যে কোনো বিপদে সশস্ত্র বাহিনীকে যেভাবে পাশে পেয়ে থাকেন, একইভাবে ঝুঁকিগ্রহণেও সেনা কল্যাণ ইন্সুরেন্সের ওপর ভরসা রাখতে পারেন। দ্বিতীয়ত, সেবার মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। দেশে আমরা সবচেয়ে কনিষ্ঠ বিমা কোম্পানি। কিন্তু ৭ বছরে আমরা দেখেছি, সময়মতো ক্ষতিপূরণ দেওয়ায় দিনদিন গ্রাহকসংখ্যা বাড়ছে। প্রথম বছর তারা আমাদের সঙ্গে থাকলে দ্বিতীয় বছর এমনিতে নবায়ন করছেন।
যুগান্তর : ৭ বছরে ব্যবসা প্রবৃদ্ধি কেমন?
শফিক শামীম : ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে আমরা লাইসেন্স পেয়েছি। কিন্তু ব্যবসা শুরু করেছি ২০১৪ সালে। শুরুর বছর অনেক খরচ থাকায় আমরা লাভজনক ছিলাম না। তবে ২০১৫ সাল থেকে মুনাফায় এসেছি। এ পর্যন্ত আমাদের মুনাফার গ্রাফ নিচের দিকে যায়নি। এমনকি যে বছর নেপাল বিমান দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে, ওই বছরও আমরা মুনাফা করেছি। সেটা আগের বছরের তুলনায় বেশি।
যুগান্তর : করোনায় আপনাদের কোম্পানিতে কী প্রভাব পড়েছে?
শফিক শামীম : শুরুতে যে ক্ষতির আশঙ্কা করেছিলাম বছর শেষে এসে দেখেছি, করোনা বিমা খাতকে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত করেনি। ২০২১ সালের মার্চের পর থেকে ব্যবসা কিছুটা কমেছিল। কিন্তু জুলাইয়ে এসে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এখন লকডাউন উঠে গেছে। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে করোনাও মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে। সে কারণে আশা করছি, গত বছরের মতো এ বছরও করোনা আমাদের ব্যবসায় ওই ধরনের প্রভাব ফেলবে না।
যুগান্তর : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে আপনাদের কোম্পানি। এক্ষেত্রে নতুন করে কী চ্যালেঞ্জ দেখছেন?
শফিক শামীম : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলে অবশ্যই আমাদের দায়িত্ব বেড়ে যাবে। এতদিন দায়িত্ব ছিল আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রতি। এখন সাধারণ হোল্ডারদের প্রতি দায়িত্ব বেড়ে যাবে। এ পরিকল্পনা থেকে আমাদের জনবল কাঠামো কিছুটা ঢেলে সাজিয়েছি। আলাদা শেয়ার, কমপ্লায়েন্স ও অডিট সেকশন করে এগোচ্ছি। আমাদের আরেকটি সুবিধা হলো, এ কোম্পানির মালিকপক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক হওয়ায় এখানে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। ফলে শুধু বাইরের শেয়ারহোল্ডারদের সহজেই এখানে আনতে পারব। এতে স্বার্থের কোনো দ্বন্দ্ব বা সংঘাত হবে না। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য বিএসইসিতে আবেদন করে খুব কম সময়ে আমরা অনুমোদন পেয়েছি। পারফরম্যান্স দেখেই তারা তাড়াতাড়ি অনুমোদন দিয়েছেন। আমাদের প্রতি তাদের অনেক আশা-একটি ভালো কোম্পানি হিসাবে আমরা বাজারে আসছি।
যুগান্তর : বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে আপনাদের বার্তা কী?
শফিক শামীম : বিনিয়োগকারীদের আমরা বলব, ২৫ থেকে ২৬টি কোম্পানির আগে আমরা শেয়ারবাজারে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছি। করোনার মধ্যেও আমাদের ইপিএস ৪ টাকার কাছাকাছি। বিনিয়োগে করলে মানুষ লাভবান হবেন। আমরা আশা করছি, করোনা কেটে গেলে এ কোম্পানি দ্রুত আরও লাভজনক অবস্থায় যাবে।
উল্লেখ্য, ১ কোটি ৬০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে শেয়ারবাজার থেকে ১৬ কোটি টাকা নেবে এ বিমা কোম্পানিটি। এ টাকা দিয়ে সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ, মেয়াদি আমানত, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ, নিজস্ব অফিস স্পেস কেনা ও আইপিও খরচে ব্যবহার করবে। কোম্পানির ইস্যু ম্যানেজার হিসাবে রয়েছে এএএ ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।