আরমানিটোলায় স্কুলের শ্রেণিকক্ষ ভেঙে দোকান
কাওসার মাহমুদ
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হাম্মাদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ভেঙে দোকান নির্মাণ করে নামমাত্র মূল্যে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। জানা গেছে, চলমান করোনা মহামারির প্রকোপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সুযোগে দোকান ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে দুটি শ্রেণিকক্ষ ভেঙে একত্রিত করে ১ হাজার দুইশ বর্গফুট গোডাউন করা হয়। এ গোডাউন ৬ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে ২৫ হাজার টাকা মাসিক চুক্তিতে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। নাসির উদ্দিন নামে একজন ব্যবসায়ী ওই গোডাউনটি ভাড়া নিয়েছেন। আরেকটি দোকান বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির
সদস্য রাকিব হাসান হিটলারের চাচা কামরুল ইসলামের কাছে নামমাত্র মূল্যে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। প্রায় আড়াইশ বর্গফুটের দোকানটি ২৫ হাজার টাকা অগ্রিম ও ৩ হাজার টাকা মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩শ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে তিন বছরের জন্য ওই চুক্তিপত্র সম্পাদন করা হয়েছে। ওই চুক্তিপত্রে বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সদস্যরা সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন। এ সংক্রান্ত নথিপত্র যুগান্তরের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
স্কুলের প্রধান ফটকসংলগ্ন এ দোকানে ঝালাইসহ লোহার ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। অন্য পাশের গোডাউন হিসাবে ভাড়া দেওয়া শ্রেণিকক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহৃত টুল-টেবিলগুলো বের করে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। ওই কক্ষগুলোতে কাগজের ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে একটি কাগজের মার্কেট রয়েছে। ওই মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, একজন ব্যবসায়ী কিছুদিন আগে ৭০ বর্গফুটের একটি দোকান ২৫ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে প্রতি মাসে ৫৫ হাজার টাকা ভাড়া নেন। ওই দোকানটি মার্কেটের ভেতরে হওয়ায় ভাড়া একটু কম। সড়কের পাশে এমন একটি দোকান ভাড়া নিতে ন্যূনতম ৩৫ লাখ টাকা অগ্রিম ও ৭০ হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হবে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, বর্তমান স্কুল পরিচালনা পর্ষদ মোটা অঙ্কের অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ভেঙে দোকান ও গোডাউন বানিয়ে ভাড়া দিয়েছে। তাছাড়া নামমাত্র ভাড়ায় দোকান ঘর ভাড়া দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই বলে জানান তারা।
তাদের দাবি, দোকান ঘর বানাতে বর্তমান অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক আহসানুল হক ওরফে প্রিন্স রবিন স্থানীয় সংসদ সদস্যের মদদপুষ্ট হওয়ায় তিনি যা ইচ্ছা তাই করছেন। তিনি বিদ্যালয় পরিচালনাকালীন আশঙ্কাজনক হারে শিক্ষার্থী সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। ওই স্কুলটি বাণিজ্যিক এলাকায় হওয়ায় পরিচালনা পর্ষদের আহ্বায়ক ও বর্তমান প্রধান শিক্ষক মিলে এর আগেও একাধিকবার শ্রেণিকক্ষ ভেঙে দোকান ঘর বানাতে তৎপরতা চালান। কিন্তু এর আগে তারা ব্যর্থ হন। প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সুলতান নুরী ও অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক আহসানুল হক ওরফে প্রিন্স রবিন অভিন্ন বক্তব্য উপস্থাপন করে যুগান্তরকে বলেন, ওই কক্ষগুলো দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। করোনাকালীন বিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে ওই কক্ষগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তবে বাজার মূল্য থেকে এত কম ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) মো. বেলাল হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি সরকারি সম্পত্তি। কেবল টিউশন ফি থেকে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়া যাবে। তাছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে বিদ্যালয়ের ভেতর কোনো মার্কেট কিংবা দোকান বানানো বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ সংক্রান্ত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।