Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

ভরদুপুরে ‘রাতের আঁধার’, ঢাকায় দুর্ভোগ

এ অবস্থা ২-৩ দিন চলতে পারে * ৪৮ ঘণ্টা পর আকস্মিক বন্যার পূর্বাভাস সিলেটসহ দেশের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে

Icon

যুগান্তর রিপোর্ট

প্রকাশ: ০১ মে ২০১৮, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অব্যাহত আছে কালবৈশাখীর তাণ্ডব। পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে পুবালি বাতাসের সংমিশ্রণে তৈরি হচ্ছে বজ মেঘ। এ মেঘ থেকে হচ্ছে বজ ঝড়। সোমবারও দেশের অধিকাংশ স্থানে কালবৈশাখী আঘাত হানে। এদিন ভরদুপুরে রাজধানীতে ‘রাতের অন্ধকার’ নেমে আসে। গোটা আকাশ কালো মেঘে ঢাকা পড়ায় নগরবাসী ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় অঝোরধারার বৃষ্টি। কাটতে শুরু করে ঘন কালো আঁধার। আগের দিনের ধারাবাহিকতায় নগরবাসীকে পড়তে হয় ভোগান্তিতে। আগে থেকে চলে আসা উন্নয়ন কাজের সঙ্গে বৃষ্টির পানি মানুষের দুর্ভোগের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে সড়কে পানি জমে মানুষের চলাচলকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়।

আবহাওয়া অধিদফতরের (বিএমডি) কর্মকর্তারা বলছেন, সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া কালবৈশাখীর এমন পরিস্থিতি আগামী ৮ মে পর্যন্ত চলবে। তবে আগামী ২-৩ দিন ঝড়-বৃষ্টির আধিক্য থাকবে বেশি। বিপরীত দিকে উপমহাদেশী আবহাওয়া পরিস্থিতির দরুন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরায় কমবেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই। এ সময়ে ভারতের আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। বৃষ্টির পানির কারণে সিলেট বিভাগসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীতে পানি বেড়ে যেতে পারে। ৪৮ ঘণ্টা পরে আকস্মিক বন্যাও দেখা দিতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি)।

তবে এ পূর্বাভাসের সঙ্গে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করে বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে নদ-নদীর যে অবস্থা তাতে হয়তো আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা কম। তবে মৌসুম আসন্ন হওয়ায় এবং অসময়ে তুলনামূলক বেশি বৃষ্টি হওয়ায় পানির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। এই বজ ঝড়ের মধ্যে হাওরে ফসল কাটতে যাওয়া যাবে না। কেননা, হাওরে বজ পাতের হার বেশি। জীবন থেকে ফসল মূল্যবান হতে পারে না। তাই পরিস্থিতি বুঝে কৃষককে ফসল কাটতে যেতে হবে।

আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, সোমবার বৃষ্টি হলেও ঢাকায় রোববারের তুলনায় কম ছিল। এদিন ঢাকায় ১২ ঘণ্টায় ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। রোববার হয়েছিল ৬৮ মিলিমিটার। তবে সোমবার দুপুরে ৫৪ কিলোমিটার বেগের ঝড়ো হাওয়াসহ কালবৈশাখী আঘাত হানে রাজধানীতে। এরপর কিছুটা সময় ধরে বৃষ্টিপাত হয়। সেই বৃষ্টিই নগরবাসীর ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানান, প্রায় সারা দেশেই বৃষ্টিপাত হয়েছে। দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে শ্রীমঙ্গলে ৭৭ মিলিমিটার। এর পর রাজশাহীতে ৬৯ মিলিমিটার।

সরেজমিন দেখা গেছে, রোববার ঝড়ের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টার বর্ষণে রাজধানীতে যে পানি জমে গিয়েছিল সোমবারও সেসব এলাকা জলাবদ্ধ ছিল। ফলে সোমবারের ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টির পানির সঙ্গে আগের দিনের পানি যুক্ত হয়ে ওইসব এলাকায় নাকাল পরিস্থিতি তৈরি করে। ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বর থেকে ১৩ নম্বর পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে, ১৪ নম্বর সেকশন, শেওড়াপাড়া, ইব্রাহিমপুর, কচুক্ষেত এলাকার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। মিরপুরে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ চলায় সড়কে গাড়ি চলার জায়গা এমনিতেই কমে গেছে। তার মধ্যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ১০ নম্বর থেকে ফার্মগেটমুখী সড়কে দেখা যায় ব্যাপক যানজট। পশ্চিম রাজাবাজার, ইন্দিরা রোডের বিভিন্ন সড়কে নিষ্কাশন নালা উপচে ময়লা পানিতে রাস্তা সয়লাব হয়ে আছে। একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আগারগাঁও, মতিঝিল, মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকার আলাউদ্দিন রোড, নাজিম উদ্দিন রোড। এসব এলাকা পানির নিচে তলিয়ে ছিল। জলাবদ্ধতার পাশাপাশি বেশিরভাগ সড়কে উন্নয়ন কাজ চলায় হাঁটুসমান পানিতে তলিয়ে থাকা সড়কে চলাচল করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের বাসিন্দা বদরুল ইসলাম বলেন, এ এলাকার ড্রেনেজ পরিস্থিতি এমনই যে, বাসাবাড়িতে বেশি পানি ব্যবহার হলেও রাস্তায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। তবে মূল সড়কে বড় পাইপ স্থাপনের কাজ চলছে। পাইপ বসানো হয়ে গেলে এ পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটতে পারে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম