পিআরআইর ওয়েবিনারে বক্তারা
টেকসই উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব প্রবৃদ্ধির বিকল্প নেই
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ দরকার

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১ জুন ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
‘শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই শেষ কথা নয়, টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবেশবান্ধব প্রবৃদ্ধির বিকল্প নেই। এজন্য সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সব পক্ষকেই সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’ রোববার ‘বিল্ডিং ব্যাক এ গ্রিনার বাংলাদেশ’- শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপ যৌথভাবে আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সিনিয়র ইনভারমেন্টাল স্পেশালিস্ট ইউন ঝু আই। বক্তব্য দেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা প্রফেসর ম. তামিম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আইনুনন নিশাত, বিসিএএসের নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, পিআরআইর চেয়ারম্যান ড. জাইদী ছাত্তার, ভাইস প্রেসিডেন্ট সাদেক আহমেদ প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে ইউন ঝু আই বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং করোনাভাইরাস মহামারির ঝুঁকিতে রয়েছে প্রবৃদ্ধি (মোট দেশজ উৎপাদন)। এজন্য শিল্প ও মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ কার্বন নিঃসরণ কমানোর মতো প্রযুক্তি ব্যবহার জরুরি। করোনা মহামারির ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার অন্যতম পথ হতে পারে সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া। এক্ষেত্রে কোরিয়া একটি উদাহরণ হতে পারে।
কোরিয়া যেভাবে গ্রিন গ্রোথ করছে সেই মডেল কাজে লাগানো যেতে পারে। কোরিয়া প্রণোদনা দেওয়ার মাধ্যমে সবুজ প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, বেসরকারি খাত উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষা করতে পারে। এছাড়া কলম্বিয়ার উদাহরণও বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারে।
প্রফেসর ম. তামিম বলেন, আমাদের দেশে সামাজিক বনায়ন সফল হয়েছে। সরকার যে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা করেছে সেটির বাস্তবায়ন জরুরি। এছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। প্রত্যেক দেশের অভিজ্ঞতা এক নয়। তাই এ দেশের নিজস্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রিন গ্রোথ নিশ্চিত করতে হবে।
ড. আতিউর রহমান বলেন, সত্যিকারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন চাইলে সবুজ প্রবৃদ্ধির বিকল্প নেই। এখন সব কিছুই ডিজিটালাইজড হচ্ছে। কিন্তু সেটি হওয়া উচিত গ্রিন ডিজিটালাইজড। জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন জরুরি। যদিও দুঃখজনক হলেও সত্যি যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেটি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু এখন আবার ফিরে আসার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ আমাদের দেশের প্রবৃদ্ধির গতিকে ধীর করে দিয়েছে। আমাদের ভাবতে হবে পরিবেশকে রক্ষা করেই সবকিছু করতে হবে। সুন্দরবন ধ্বংস করে অবকাঠামো করা যাবে না। বেসরকারি খাত থেকে ৮০ ভাগ বিনিয়োগ আসা উচিত। অবকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে পরিবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও চান সবুজ রক্ষা করেই সবকিছু করা হোক। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা বাড়াতে হবে।
ড. জাইদী সাত্তার বলেন, দেশে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তবে চ্যালেঞ্জ হলো এ প্রবৃদ্ধিকে পরিবেশবান্ধব করা। ১৯৭২ সালে সবুজকে সঙ্গে নিয়েই শুরু হয়েছিল এদেশের অর্থনৈতিক যাত্রা। কিন্তু দিনে দিনে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও সবুজ কমেছে। দেশকে এগিয়ে নিতে প্রবৃদ্ধি বড় বিষয়, কিন্তু একই সঙ্গে পরিবেশ রক্ষাও জরুরি। শিল্প ও যানবাহন কার্বন নিঃসরণের জন্য বেশিরভাগই দায়ী। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে গ্রিন প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জকে বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জিডিপির বড় অংশ ব্যয় হবে। বাংলাদেশও পরিবেশ সংক্রান্ত ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে। এজন্য র্যাপিড, ইনক্লুসিভ ও গ্রিন প্রবৃদ্ধির বিকল্প নেই।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু অন্যতম প্রধান ইস্যু হলো সবুজায়ন। পরিবেশ বাঁচিয়ে প্রবৃদ্ধি করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। পরিবশেকে বাদ দিয়ে প্রবৃদ্ধি কখনও টেকসই হবে না।
প্রফেসর ড. আইনুনন নিশাত বলেন, পরিবেশ রক্ষায় দেশে অনেক নীতিমালা আছে। কিন্তু সেগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন হয় না। এক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি ও তদারকি বাড়ানো দরকার। সেই সঙ্গে আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। তাই সম্পদের কার্যকর ব্যবহার করতে হবে।