চুয়াডাঙ্গায় আজও আছে সেই ‘সেতাব মঞ্জিল’
দেখা হলো না ‘কবরী রোড’
আহাদ আলী মোল্লা, চুয়াডাঙ্গা
প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চিত্রনায়িকা মিষ্টি মেয়ে কবরী আর নেই। কিন্তু চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের কবরী রোড আর কবরীর স্মৃতিবিজড়িত সেই ‘সেতাব মঞ্জিল’ বাড়িটি আজও আছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের অনেক কিছুই বদলে গেছে। তবে সেই বাড়িটি প্রায় আগের মতোই আছে। যেই বাড়িতে কবরীসহ তার সহযোগী চলচিত্র শিল্পীরা প্রায় একমাস অবস্থান করেছিলেন। একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করতেই তারা ১৯৬৯ সালে এখানে এসেছিলেন। এই সিনেমার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন চুয়াডাঙ্গার কৃতী সন্তান বেবী ইসলাম। সিনেমার নাম ‘ক খ গ ঘ ঙ’। শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেছিলেন নায়করাজ প্রয়াত রাজ্জাক, কবরী, আনোয়ার হোসেন, রাজু আহমেদ, হাবা হাসমত, রহিমা খালা, নাজনিন, তন্দ্রা ইসলাম, আব্দুল আলী লালু, শিশু শিল্পী মাস্টার অঞ্জন ও চুয়াডাঙ্গার কৃতী অভিনেতা প্রয়াত নান্টুসহ আরও অনেকে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে বেবী ইসলাম একজন দক্ষ চিত্রগ্রাহক ছিলেন। তার আমন্ত্রণেই পরিচালক নারায়ণ ঘোষ মিতা চুয়াডাঙ্গায় এসে নির্মাণ করেছিলেন ব্যবসায় সফল সিনেমাটি। চিত্রগ্রাহক ছিলেন বেবী ইসলাম নিজেই। কবরীরা যে বাড়িতে থাকতেন বাড়িটি ছিল বেবী ইসলামের নানাবাড়ি। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা ও আলতাফ মাহমুদের সুরে ক খ গ ঘ ঙ সিনেমায় গান গেয়েছিলেন মো. আলী সিদ্দিকী, ফেরদৌসী রহমান, মো. আবদুল জব্বার, সাবিনা ইয়াসমিন ও আলতাফ মাহমুদ। সিনেমাটি ১৯৭০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায়। কিন্তু তার আগেই চুয়াডাঙ্গা শহরের একটি রোডের নাম হয়ে যায় কবরী রোড। আজ পর্যন্তও ওই রোড কবরী রোড নামেই পরিচিত।
কবরীর খুব ইচ্ছা ছিল একবারের জন্যও ফের চুয়াডাঙ্গায় যাবেন। ২০১৬ সালে মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পাওয়ার পর এক সাক্ষাৎকারে কবরী বলেছিলেন, ‘আমাকে বললে আমি যাব। নিজ খরচেই যাব। বেঁচে থাকতে রাস্তাটি দেখে যেতে চাই।’ চুয়াডাঙ্গা শহরের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তার নাম ‘কবরী রোড’। ৪০০ মিটার দীর্ঘ রাস্তাটি পৌর ভবন ও সরকারি কলেজকে সংযুক্ত করেছে। কবরীর নামে আপনা আপনিই ১৯৬৯ সালে সড়কটির নামকরণ হয় কবরী রোড। ভক্তদের ভালোবাসায় ৫২ বছর ধরে রাস্তাটি টিকে আছে। এই রাস্তায় রয়েছে সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি অফিস, অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সংসদ-সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দার ছেলুনের বাসভবন।
চুয়াডাঙ্গার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এম সানোয়ার হোসেন বলেন, সারাহ বেগম কবরী ওই সময় খুব জনপ্রিয় ছিলেন। ওই সিনেমাটি করার সময় মানুষ সেতাব মঞ্জিল বাড়িটির সামনে ভিড় জমাত কবরীকে একনজর দেখার জন্য। ছবির বেশিরভাগ শুটিং হয়েছিল ওই বাড়িতেই। এছাড়া জেলার জয়রামপুর রেলস্টেশন, শহরের সাতগাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে মাসব্যাপী শুটিং হয়। আমিসহ বেশ কয়েকজন ওই সময় কবরীকে দেখার জন্য সেতাব মঞ্জিলে গিয়েছিলাম ও আমাদেরকে কবরী নিজ হাতে মিষ্টি খাইয়েছিলেন। আলমডাঙ্গা উপজেলার ভোগাইলবগাদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মতিয়ার রহমান বলেন, ১৯৬৯ সালে আমি ক্লাস ফোরে পড়তাম। কবরীকে দেখার জন্য ওই সময় অনেকবার আমি চেষ্টা করেছি, কিন্তু বড়দের চাপে আমার কবরী দর্শন হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শী চুয়াডাঙ্গা কবরী রোডের বাসিন্দা আহসান আলী জোয়ার্দ্দার বলেন, আমি তখন ছোট ছিলাম। আমার বাড়ির পাশেই সেতাব মঞ্জিল। ওই বাড়িতে শুটিং হতে দেখেছি।
ক খ গ ঘ ঙ সিনেমার চিত্রগ্রাহক বেবী ইসলাম ২০১০ সালের ২৪ মে মারা যান। তার ভাতিজা চুয়াডাঙ্গা বেলগাছির মতিয়ার রহমান পান্নু ও হাসিবুল রেজা শামীম বলেন, বেবী ইসলামের স্ত্রী আমার চাচি তন্দ্রা ইসলাম ওই সিনেমায় আনোয়ার হোসেনের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তন্দ্রা ইসলাম বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। ছেলে জয় ও মেয়ে বাংলা দুজনই আমেরিকায় থাকেন। শুক্রবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে চিরবিদায় নেন কিংবদন্তি নায়িকা কবরী।