আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস
করোনা প্রমাণ করল দূষণ নিয়ন্ত্রণ মানুষেরই হাতে
দেশে বায়ুদূষণ কমেছে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ, বিশ্বে ২৫ শতাংশ * পানির নমুনাও সংগ্রহ করেছি। সেটির বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চলমান আছে। তবে সাদা চোখে দেখা যাচ্ছে, ঢাকার চারপাশের নদীর পানি তুলনামূলক অনেক স্বচ্ছ -ড. একেএম রফিক আহাম্মদ
মুসতাক আহমদ
প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২০, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
করোনাভাইরাসের কারণে ৬৭ দিনের সাধারণ ছুটিতে ছিল দেশ। এ সময়ে হাটবাজার, দোকানপাট খোলা ছিল সীমিত আকারে। কিন্তু গণপরিবহন থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, কলকারখানা, ইটভাটা, গণজমায়েত, পর্যটন সবই ছিল বন্ধ। যদিও করোনায় এখনও প্রতিদিনই শনাক্ত আর মৃতের খবর উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। তবে এই দুঃসময়ে কিছু আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন পরিবেশবিদরা। সেটা হল- প্রকৃতিতে দূষণ কমেছে। বায়ুর মান বেড়েছে। বেড়েছে পানির মান। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে উষ্ণায়নে। কমেছে তাপপ্রবাহ। ফলে দেখা যাচ্ছে নানারকম পাখি ও কীটপতঙ্গ। সাগরে-নদীতে দেখা যাচ্ছে ডলফিনের খেলা। বেলাভূমিতে ডালপালা মেলেছে সাগরলতা, সাধারণ সময়ে যার দেখা মিলত না।
পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. একেএম রফিক আহাম্মদ বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ২০১৯ সালে বছরের প্রথমদিকে ঢাকার বায়ুতে যে পরিমাণ দূষণ ছিল, একই সময়ে এ বছর বায়ুর মানে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ উন্নতি দেখা যাচ্ছে। আমরা পানির নমুনাও সংগ্রহ করেছি। সেটির বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চলমান আছে। তবে সাদা চোখে দেখা যাচ্ছে, ঢাকার চারপাশের নদীর পানি তুলনামূলক অনেক স্বচ্ছ। কলকারখানা, নৌযান ইত্যাদি বন্ধ থাকায় পানির দূষণ কমেছে। করোনাকালে প্রাণ-প্রকৃতির এমন সুখবরের মধ্যে আজ বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে উদযাপিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘প্রকৃতিকে বাঁচানোর এখনই সময়’। করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাবের কারণে অবশ্য দিবসটি উদযাপনে এবার কর্মসূচি তেমন গ্রহণ করা হয়নি। পরিস্থিতির উন্নতি হলে সাধারণ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক। মহাপরিচালক আরও বলেন, করোনাকালে নীরব, নির্জন আর কোলাহলমুক্ত অবস্থা পেয়ে প্রকৃতি যেন আরও মায়াময় হয়ে আপন রূপ-সৌন্দর্য তুলে ধরছে। হালদা নদীতে মাছের পোনা উৎপাদনে রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। যদিও এ ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ আছে। কিন্তু করোনায় মানুষের চাঞ্চল্য কমে যাওয়ার ইতিবাচক প্রভাবও কাজ করেছে। সে কারণেই নদীটিতে দেখা গেছে দুর্লভ প্রজাতির ডলফিনের খেলা। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের অদূরেও ডলফিনের আনাগোনা দেখা গেছে। পরিযায়ী পাখির অবাধ বিচরণও বেড়েছে। সেন্টমার্টিনে কোরালগুলো আরও সমৃদ্ধ।
বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. একেএম সাইফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বে দূষণ কমেছে ১৭ থেকে ২৫ শতাংশ। বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ‘ন্যাচার’-এ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধ এমন তথ্য দিয়েছে। কেবল নিউইয়র্ক শহরে কার্বন মনোক্সাইড নিঃসরণ কমেছে ৫০ শতাংশ। এই গবেষক যুগান্তরকে বলেন, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও প্রকৃতি মূলত মানুষই ধ্বংস করে। লকডাউনকালে বাংলাদেশসহ বিশ্বে প্রাণ-প্রকৃতির আপন সুষমা ও সৌন্দর্যরাশির প্রকাশ এবং দূষণ কমে যাওয়ায় এটাই প্রমাণিত হয় যে, পরিবেশের উন্নতি-অবনতি মানুষের হাতেই। তবে মহামারী শেষ হওয়ার পর অর্থনীতি চাঙ্গা করতে গিয়ে দূষণ আবারও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
টিআইবির বিবৃতি : এদিকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস সামনে রেখে বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতি পাঠিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এতে বলা হয়, দিবসটির এবারের আন্তর্জাতিক প্রতিপাদ্য ‘জীববৈচিত্র্য’। বিবৃতিতে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ সুরক্ষায় সাংবিধানিক ও আইনগত বাধ্যবাধকতার কার্যকর প্রয়োগের আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি। বলেছে, জীববৈচিত্র্যের অমূল্য আধার সুন্দরবন বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে পরিবেশ রক্ষায় বিদ্যমান আইনি কাঠামোর যথাযথ প্রয়োগে ঘাটতির কারণে জীববৈচিত্র্য যেমন লোপ পাচ্ছে, তেমনি পরিবেশ দূষণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।