Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রতিবেদন

সরকারি চাকরি আইন প্রশাসনে বাধা হবে না

Icon

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জাতীয় সংসদে সম্প্রতি পাস হওয়া সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ কার্যকর করা হলে প্রশাসনের কাজে কোনো বাধা সৃষ্টি হবে না। তবে আইনটি কার্যকরের সঙ্গে নতুন দুটি বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে। ‘চাকরিজীবী শৃঙ্খলা’ এবং ‘উদ্বৃত্ত সরকারি কর্মচারী আত্তীকরণ’ দুটি আইনের আলোকে বিধিমালাগুলো করতে হবে। কারণ নতুন সরকারি চাকরি আইনে এগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পাশাপাশি বিদ্যমান সংশ্লিষ্ট ৬টি আইন স্থগিত করতে হবে। সরকারি চাকরি আইন সংক্রান্ত সরকার গঠিত ওয়ার্কিং গ্রুপের রিপোর্টে এসব সুপারিশ করা হয়েছে। সম্প্রতি এ রিপোর্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। প্রতিবেদনের সুপারিশে বিদ্যমান সার্ভিস অ্যাক্ট-১৯৭৫ আইন বাতিল করার প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়ার কথাও বলা হয়।

গত বছর ২৪ অক্টোবর সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ পাস হয়। ১৪ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি হয়। এ আইনের ৬১ ধারা মোতাবেক তা কার্যকর করা হলে সংশ্লিষ্ট পুরনো ৬টি আইন স্থগিত করতে হবে। কিন্তু আইনগুলো স্থগিত করার পর সরকারি অফিস-আদালত ও মন্ত্রণালয়, সংস্থা, দফতর, অধিদফতরের কার্যক্রমে বাধাবিঘ্ন হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ধরনের বাধাবিঘ্নতায় প্রশাসন পড়বে কি না, তার আশঙ্কা খতিয়ে দেখতে যুগ্ম সচিব (বিধি) প্রদীপ কুমার দাসকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়। গ্রুপের অন্য সদস্যরা হলেন- যুগ্ম সচিব (বাবাকো) আমেনা বেগম, উপসচিব (আইন), উপসচিব (শৃঙ্খলা) মোহাম্মদ তানভীর আজম ছিদ্দিকী ও উপসচিব (সিপি-১) মোহাম্মদ মুনসুর উদ্দিন। ওয়ার্কিং গ্রুপ এ বিষয়ে ৫টি বৈঠক করেছে। সেখানে সংশ্লিষ্ট ৬টি আইনের বিভিন্ন ধারা প্রায়োগিক বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হয়। আইনগুলো হচ্ছে- ‘গণকর্মচারী (অবসর) আইন-১৯৭৪, সার্ভিস অ্যাক্ট (রিঅর্গানাইজেশন এবং কন্ডিশনস) ১৯৭৫, সরকারি কর্মচারী বিশেষ বিধান অধ্যাদেশ-১৯৭৯, সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা অ্যাক্ট-১৯৮২, পাবলিক সার্ভেন্ট অ্যাক্ট-১৯৮৫ এবং উদ্বৃত্ত সরকারি কর্মচারী আত্তীকরণ আইন-২০১৬। উল্লিখিত আইনগুলোর বিকল্প হিসেবে কোনো বিধিমালা প্রণয়নের প্রয়োজন আছে কি না এবং আইনের বিভিন্ন ধারা প্রায়োগিক বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়। পরবর্তী সময়ে ওয়ার্কিং গ্রুপ এ বিষয়ে কয়েকটি সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওয়ার্কিং গ্রুপের সুপারিশে উল্লেখ করা হয়, নতুন সরকারি আইন কার্যকরের কারণে যে ৬টি আইন বাতিল করা হবে এর মধ্যে গণকর্মচারী (অবসর) আইন-১৯৭৪ এ ১২টি ধারা আছে। এ ধারাগুলোর মধ্যে ১১টি ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে নতুন আইনের ৪৩ থেকে ৫৩ পর্যন্ত বিধিতে। যে কারণে গণকর্মচারী (অবসর) আইনটি স্থগিত করা হলে কোন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হবে না। আর বাতিলের তালিকায় থাকা অপর আইন সার্ভিস (রিঅর্গানাইজেশন এবং কন্ডিশনস) অ্যাক্ট ১৯৭৫ প্রসঙ্গে সুপারিশে বলা হয়, এ আইনে মোট ১১টি ধারা আছে। এর মধ্যে ৪ নম্বর ধারাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সরকারি চাকরি আইনের (নতুন) ৫ নম্বর ধারায়। তবে সার্ভিস অ্যাক্টের ধারা ৫-এ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন স্কেল এবং গ্রেডের সমতা বিধানের বিষয়ে বলা আছে। এ ধারার ক্ষমতাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে নতুন আইনের ১৫ ধারায়। ফলে উল্লিখিত আইনটি স্থগিত করা হলেও প্রশাসনের দৈনন্দিন কার্যক্রমে কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি হবে না। তবে অধিক স্পষ্ট হওয়ার জন্য সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ কার্যকর করার আগে এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের মতামত নেয়া যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওয়ার্কিং গ্রুপের এ সুপারিশের আলোকে উল্লিখিত আইন প্রসঙ্গে মতামত চাওয়া হয়েছে অর্থ সচিবের কাছে।

এদিকে বাতিল হওয়া আইন ‘সরকারি কর্মচারী বিশেষ বিধান অধ্যাদেশ-১৯৭৯’ প্রসঙ্গে ওয়ার্কিং গ্রুপ বলেছে এ আইনে ধারা রয়েছে ৭টি, যা নতুন আইনের ৩০ থেকে ৩৯ ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তবে এ অধ্যাদেশে একটি ধারায় সুযোগ ছিল অভিযুক্ত চাকরিজীবীর ব্যাপারে বিভাগীয় ব্যবস্থায় গ্রহণের। কিন্তু সময়সীমাবদ্ধতার কারণে নতুন আইনে এ ধারা যুক্ত করা হয়নি। উল্লিখিত আইনটি বাতিল হওয়ায় সরকারি চাকরিজীবীরা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবেন। আইনটি রহিত করা হলে কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে না।

সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা আইন-১৯৮২ প্রসঙ্গে কমিটি বলেছে, এ আইনটি স্থগিত করার পর নতুন আইনের ২৯ ধারা মোতাবেক পুরনো আইন সংক্রান্ত সব ধরনের কার্যক্রম সম্পাদন সম্ভব হবে না। ফলে নতুন আইনের আওতায় একটি বিধি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। একই ধরনের সুপারিশ করা হয়েছে উদ্বৃত্ত সরকারি কর্মচারী আত্তীকরণ আইন-২০১৬ নিয়ে। এ আইন প্রসঙ্গে বলা হয়, নতুন আইনের মাধ্যমে উল্লিখিত আইনের সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে একটি নতুন বিধান প্রণয়ন করা প্রয়োজন। তবে পাবলিক সার্ভেন্ট অ্যাক্ট-১৯৮৫ স্থগিত করা হলে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।

প্রসঙ্গত, নতুন যে আইনটি কার্যকর করা হবে, সেখানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্র্মচারীরা ফৌজদারি অপরাধ করলে তাদের গ্রেফতারের আগে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। আইনে আরও বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে জনবল নিয়োগ হবে মেধা ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে। তবে সংবিধানের ২৯(৩) অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণ করতে সরকার ‘পদ সংরক্ষণ’ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে। আইনে সরকারকে সরকারি গেজেট আদেশ দ্বারা প্রজাতন্ত্রের যে কোনো কর্ম বা কর্ম বিভাগ সৃজন, সংযুক্তকরণ, একীভূতকরণ, বিলুপ্তিকরণসহ অন্য যে কোনোভাবে পুনর্গঠন করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কোনো বিদেশি নাগরিককে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত করা যাবে না মর্মে বিধান রাখা হয়েছে এই আইনে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সেবা গ্রহণকে কোনো অর্থেই প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বলে গণ্য করা যাবে না। আইনের ৩২ অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের লঘু ও গুরুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। লঘু শাস্তির মধ্যে রয়েছে- তিরস্কার, পদোন্নতি বা বেতন স্থগিত এবং ক্ষেত্রবিশেষ ক্ষতিপূরণ আদায়। গুরুদণ্ডের মধ্যে রয়েছে- পদাবনতি, বাধ্যতামূলক অবসর, অপসারণ ও চাকরি থেকে বরখাস্ত করা। কোনো সরকারি কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় মৃত্যুদণ্ড বা এক বছর মেয়াদের বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে রায় দেয়ার দিন থেকে চাকরি থেকে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত হবেন। তবে কর্মচারী এক বছর বা তার কম মেয়াদের জন্য দণ্ডিত হলে কর্তৃপক্ষ লঘুদণ্ড দেবেন। প্রজাতন্ত্রের কর্ম থেকে বরখাস্ত হয়েছেন, এমন কোনো ব্যক্তি ভবিষ্যতে প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মে বা রাষ্ট্রের অন্য কোনো কর্তৃপক্ষে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না। তবে এ আইনে যা-ই থাক না কেন, রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনক মনে হলে তিনি সাজা পাওয়া ব্যক্তিকে অব্যাহতি প্রদান করতে পারবেন এবং চাকরিতে পুনর্বহাল করতে পারবেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম