Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

৪৬৪ রেলস্টেশনেই যাত্রী দুর্ভোগ

প্লাটফর্ম থেকে ট্রেনের দরজা আড়াই থেকে তিন ফুট উঁচু

ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে ওঠে যাত্রীরা * শিগগিরই সমাধানের নির্দেশ রেলমন্ত্রীর * বিশেষ বগিগুলোও ব্যবহার করতে পারছে না প্রতিবন্ধীরা

Icon

শিপন হাবীব

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ০১:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্লাটফর্ম থেকে ট্রেনের দরজা আড়াই থেকে তিন ফুট উঁচু

রেলওয়েতে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। নতুন করে প্রকল্পও নেয়া হচ্ছে। কিন্তু যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তা পুরোপুরি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

স্বাধীনতার আগে ও পরে ১৫৭ বছরেও স্টেশনগুলো ‘আধুনিকায়ন’ করা হয়নি। বিশেষ করে ৪৬৪টি স্টেশন প্লাটফর্মের কোনোটাই যাত্রীবান্ধব করা হয়নি।

প্লাটফর্ম থেকে ট্রেনের দরজা দুই থেকে আড়াই ফুট উঁচু। অধিকাংশ ট্রেনের বগি প্লাটফর্ম বরাবর স্থান না হওয়ায়, পেছন এবং সামনে থাকা বগিগুলো লাইনে দাঁড়ায়। ফলে যাত্রীরা বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ট্রেনে উঠানামা করছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কিংবা দৃষ্টিহীন যাত্রীদের দুর্ভোগ তো আরও চরমে। প্লাটফর্ম থেকে ট্রেনে উঠা সহজীকরণ ও নিরাপদ না হওয়ায় যাত্রীরা প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। উনিশ থেকে বিশ হলেই পাদানি পিছলে আহত-নিহতের ঘটনা ঘটছে। সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন সব কয়টি প্লাটফর্ম উঁচু (প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনের দরজা পর্যন্ত) করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।

রেলওয়ে অর্থনীতিবিদ এসএম সলিমুল্লাহ বাহার যুগান্তরকে জানান, রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ইতিমধ্যে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন দেশের সব কয়টি রেলওয়ে স্টেশন যেন ট্রেনের দরজা সমান উঁচু করা হয়। যাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠকও করেছেন। বাহার বলেন, রেলওয়েতে মোট ৪৬৪টি স্টেশন চালু রয়েছে। অনেক স্টেশন বন্ধ রয়েছে।

চালু থাকা স্টেশনগুলোর বিশেষ করে প্লাটফর্ম উঁচুর কাজটি দ্রুত শুরু করার জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে। ট্রেনের দরজা সমান প্ল্যাটফর্ম উঁচু করে যাত্রীদের উঠানামা সহজীকরণ ও নিরাপদ করতে চাচ্ছি। একই সঙ্গে যে স্টেশনগুলোর প্লাটফর্ম ছোট, সেগুলো যথাযথ নির্মাণের মাধ্যমে বড় করা হবে। পুরো ট্রেন যেন প্ল্যাটর্ফমে থাকে, তা নিশ্চিত করতেও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

রেলওয়ে প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন যুগান্তরকে জানান, স্টেশন প্ল্যাটফর্মগুলো চলমান ট্রেনগুলোর দরজা সমান উঁচু না হওয়ায় যাত্রীদের পাদানি ব্যবহার করেই ট্রেনে উঠানামা করতে হয়। আমরা এখন নির্দেশনা পেয়েছি স্টেশন প্লাটফর্মগুলো ট্রেনের দরজা সমান উঁচু করতে। মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে। যেসব স্টেশন নতুন নির্মাণ করা হয়েছে, সেসব স্টেশন প্লাটফর্মগুলো নিয়েও অভিযোগ উঠছে। প্লাটফর্ম উঁচু না হওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ছে বলে অভিযোগ আসছে।

রেলওয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, প্লাটফর্ম উঁচু করা রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ে বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ইচ্ছাই যথেষ্ট। কিন্তু তারা বিষয়টিকে কোনো অবস্থাতেই গুরুত্ব দিচ্ছেন না। একাধিক স্টেশন মাস্টার বললেন, রেলওয়ে কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত সিঁড়ি ( লাল সিঁড়ি) রয়েছে। এসব সিঁড়ি ব্যবহার করেই রেলওয়ে মন্ত্রী, সবিচসহ কর্মকর্তারা ট্রেনে উঠানামা করে। ফলে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। প্রতিটি স্টেশনেই তাদের জন্য একাধিক লাল সিঁড়ি রয়েছে। ফলে বিপজ্জনক পাদানি ব্যবহার করতে হচ্ছে না কর্মকর্তাদের। কিংবা প্লাটফর্ম থেকে বাইরে লাইনে থাকা বগিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উঠতে হচ্ছে না।

খোদ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের এক কর্মকর্তা জানালেন, দেশের সবচেয়ে বড় স্টেশন হচ্ছে কমলাপুর। এ স্টেশনে মোট ১২টি প্লাটফর্ম রয়েছে। কোনো প্লাটফর্মই ট্রেনের দরজা সমান উঁচু নয়। নতুন যেসব ব্রড ও মিটারগেজ যাত্রীবাহী বগি নিয়ে ট্রেনগুলো চলছে, সেসব ট্রেনগুলোর দরজা প্লাটফর্ম থেকে আরও উঁচু। ব্রডগেজ এবং ডেমু ট্রেনের উঁচু প্রায় ৩ ফুট! পাদানিগুলো সোজা হওয়ায় যাত্রীদের উঠানামায় চরম ঝুঁকি হয়। ফলে প্রায় যাত্রীই বিশেষ করে লাফ দিয়ে ট্রেন থেকে প্লাটফর্মে পড়তে গিয়ে আহত হয়।

রেলপথমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব, বিচারপতিসহ ভিআইপিদের সিঁড়ি দেয়া বন্ধ করে দেয়া হলে বহু আগেই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যেত- ক্ষোভ উগরে বললেন, এ কর্মকর্তা। নতুন যে স্টেশনগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে সেগুলোও যাত্রীবান্ধব করা হচ্ছে। খুলনার পুরনো রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে প্লাটফর্ম এতই নিচু যে যাত্রীদের ট্রেনে উঠার জন্য সিঁড়ি ভাড়া করতে হতো। নতুন এ স্টেশন তৈরি করতে গিয়ে কর্তৃপক্ষ সাধারণ যাত্রীদের কথা চিন্তা করেননি, এমন অভিযোগ যাত্রীদের। পুরাতন স্টেশনগুলো উঁচু করা যেখানে বহু বছর আগেরই পরিকল্পনা হওয়ার কথা, সেখানে নতুন স্টেশন প্লাটফর্মগুলো নির্মাণেও ভুল করা হয়েছে।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা আতিকুর রহমান জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের সিটিজেন চার্টারে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে রেলকর্তৃপক্ষ যাত্রী সাধারণকে ট্রেনে উঠানামা সহজীকরণ ও নিরাপদ করবে। অথচ সিটিজেন চার্টারের এই সেবা শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। নতুন যে স্টেশনগুলো নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলোও যাত্রীবান্ধব নয়। প্রয়োজনে পাইলট প্রজেক্টের মাধ্যমে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যা সমাধান করতে হবে।

রেলপথ সচিব মোফাজ্জেল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমাদের মন্ত্রী মহোদয় (নূরুল ইসলাম সুজন) ইতিমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রথম পর্যায়ে মিটারগেজ ট্রেনের দরজাসম প্লাটফর্মগুলো করা হবে। পর্যায়ক্রমে সবক’টি প্লাটফর্ম উঁচু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্লাটফর্মগুলো উঁচু না হওয়ায় যাত্রীদের উঠানামায় দুর্ভোগ হচ্ছে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, নতুন যেসব বগি আনা হয়েছে, সেসব বগির মধ্যে কিছু বগি রয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যাত্রীদের উপযোগী। প্লাটফর্ম উঁচু না হওয়ায় আধুনিক এসব বগিতে বিশেষ যাত্রীরা (প্রতিবন্ধী ব্যক্তি) ব্যবহার করতে পারছেন না। এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত কাজ চলছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম