
প্রিন্ট: ২৯ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৫ এএম
নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন
রাজশাহীতে কবির-সাঈদকে নিয়ে টেনশনে মিনু-মিলন
গুরু-শিষ্যের পুরাতন দ্বন্দ্ব সামনে আসার আশঙ্কা

তানজিমুল হক, রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০১৮, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
রাজশাহীতে বিএনপির দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে জেলার শীর্ষ চার নেতার মধ্যে চলছে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব। রাজশাহী-২ ও ৩ আসনে মনোনয়ন চাইছেন এ চার নেতা। তারা হলেন- বিএনপির চেয়ারপারসনের দুই উপদেষ্টা কবীর হোসেন ও মিজানুর রহমান মিনু, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন এবং বিএনপি নেতা সাঈদ হাসান। ফলে কবির ও সাঈদকে নিয়ে টেনশনে রয়েছেন দীর্ঘ সময় ধরে রাজশাহীতে বিএনপির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণকারী দুই নেতা মিনু ও মিলন। এ নিয়ে গুরু-শিষ্য হিসেবে পরিচিত কবির ও মিনুর মধ্যে পুরাতন দ্বন্দ্বও সামনে আসার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।
জানা গেছে, রাজশাহী-২ (সদর) আসনে দলীয় মনোনয়নের জন্য সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মিজানুর রহমান মিনু এবং রাজশাহী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি সাঈদ হাসান। ইতিমধ্যে তারা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছেন।
এ ব্যাপারে রাজশাহী সদর আসনের সাবেক এমপি এবং সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেন, সাঈদ আমার ছোট ভাই। দলীয় মনোনয়ন যে কেউ চাইতে পারেন। তিনিও চেয়েছেন। এটি স্বাভাবিক। আর কবির হোসেন আমার বড় ভাই। তিনি আমাদের অভিভাবক। উনার ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না। তবে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বিএনপিতে বিরোধের কোনো আশঙ্কা দেখা দিয়েছে কিনা সে ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
অপরদিকে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের পরিস্থিতি আরও জটিল। এ আসনটিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা প্রবীণ বিএনপি নেতা কবীর হোসেন। তবে তিনি দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করেননি। অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন দলীয় সাক্ষাৎকারে অংশ নেয়ার পাশাপাশি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্রও নিয়েছিন। এ ছাড়া রাজশাহী-২ আসনের পাশাপাশি সাঈদ হাসান এ আসনেও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন। এ আসনটিতে বিএনপির আরও ১৬ জন নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী। সব মিলিয়ে চাপের মধ্যে পড়েছেন মিলন।
এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন যুগান্তরকে বলেন, সাঈদ হাসান দীর্ঘ ২২ বছর ধরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। বিএনপির দুঃসময়ে তিনি নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রাখেননি। বর্তমানে দলীয় কোনো পদে নেই। তবে নির্বাচন এবং দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে সাঈদ চাঙ্গা হয়েছেন। তাকে সাধুবাদ জানাই। আর কবির হোসেন সিনিয়র নেতা। তার সম্পর্কে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে পুরাতন বিরোধ আবার সামনে আসতে পারে কি না- এ ব্যাপারেও কোনো কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান মিলন।
এ ব্যাপারে সাঈদ হাসান বলেন, আমি মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি ছিলাম। ’৯০-এ গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছি। জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পরবর্তী কমিটিতে সিন্ডিকেট করে আমাকে মহানগর কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। মহানগর বিএনপিকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করেন দু’জন নেতা। তারা রাজপথে থাক আর না থাক নিজেদের স্বার্থে দলকে ব্যবহার করেন। দলের দুঃসময়ে সব নেতাকর্মীর কাছে আমার আহ্বান, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি।
বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, কবির হোসেনের মাধ্যমেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি মিজানুর রহমান মিনুর। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে রাসিক মেয়রের দায়িত্ব পান মিনু। একটানা ২০০৭ সাল পর্যন্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছিলেন রাজশাহী সদরের এমপি। কিন্তু মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার পরই কবির হোসেনের সঙ্গে মিজানুর রহমান মিনুর রাজনৈতিক দূরত্ব তৈরি হয়। প্রকাশ্যে আসে গুরু-শিষ্যের বিরোধ। দীর্ঘদিন এ বিরোধ অন্তরালে থাকলেও মনোনয়নকে কেন্দ্র করে তা আবারও চাঙ্গা হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে।
রাজশাহীতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন কবির হোসেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত একটানা তিনবার বিএনপির টিকিটে এমপি ছিলেন তিনি। ছিলেন ভূমি প্রতিমন্ত্রী। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। এরপর চলে যান অন্তরালে। রাজনীতিতে তাকে অনেকেই ‘রহস্যময়’ ব্যক্তিত্ব বলে থাকেন। বর্তমানে বয়স ৮০ পেরিয়েছে। বার্ধক্যজনিত কারণে শারীরিকভাবেও তিনি অসুস্থ।
আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কবির হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। আমরা শত প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চাই। আর তিনি নির্বাচনে অংশ নিলে দলীয় কোন্দলের সৃষ্টি হবে না বলেও দাবি করেন এ নেতা।