ঢাকা পূর্ব-পশ্চিমের সড়ক উন্নত হচ্ছে
মাদানী এভিনিউ শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত সড়ক ৬ লেন হচ্ছে * এক হাজার ২৫৯ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব
হামিদ-উজ-জামান
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকা শহরের পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হচ্ছে। মাদানী এভিনিউ থেকে বালুনদী পর্যন্ত বিদ্যমান সড়ককে ৬ লেনে পরিণত করা হবে।
এছাড়া বালু নদী থেকে শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত নতুন সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এজন্য পরিকল্পনা কমিশনে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে দেশের পূর্বাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ উন্নত হবে।
‘মাদানী এভিনিউ থেকে বালু নদী পর্যন্ত প্রশস্তকরণ এবং বালু নদী থেকে শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ (প্রথম পর্ব)’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এক হাজার ২৫৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয় হবে। একই সঙ্গে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ সড়ক স্থাপন, ঢাকা মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র থেকে বহির্গামী ও অন্তর্মুখী যানবাহন প্রবাহ কমিয়ে ঢাকা শহরের যানজটের তীব্রতা কমানো ও সড়ক ব্যবহারকারীদের সময় কমিয়ে আনা যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। টেকসই মহাসড়ক ও নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থাও গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটি নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বেশকিছু সুপারিশ পূরণের শর্তে প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়। গুরুত্ব বিবেচনা করে ইতিমধ্যে প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হতে পারে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যৌথভাবে এটি বাস্তবায়ন করবে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার বুধবার যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকা শহরের পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ উন্নত হবে।
নিরবচ্ছিন্ন যানবাহন প্রবাহ বজায় রেখে দুই অংশের মধ্যে যোগাযোগে গতিশীলতা আসবে। এছাড়া প্রকল্প এলাকার আশপাশে ব্যাপক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা শহরের জনসংখ্যা এবং যানবাহন সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় ঢাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অপ্রতুল। বিশেষ করে ঢাকার পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে উত্তর-দক্ষিণেও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
সার্বিকভাবে যানজটে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা শহরে মাত্র ৮ ভাগ জমি সড়ক যোগাযোগর জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু একটি আদর্শ শহরে ২৫ ভাগ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকতে হয়। ঢাকা ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানে প্রদর্শিত মেজর রোড-৫, মেজর রোড-৫ ‘ক’ এবং মেজর রোড-৫ ‘খ’ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ভুলতা ইন্টারসেকশন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যুক্ত হয়েছে।
এ তিনটি সড়ক উন্নয়ন হলে ঢাকা শহরের পূর্বাংশের অনেক সড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের দ্রুত সমাধানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সড়কের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে মেজর রোড-৫ এবং মেজর রোড-৫ ‘ক’ নির্মাণে প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় প্রথম কার্যক্রমে ৩ দশমিক ৭৯ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ৪ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার বিদ্যমান সড়ককে ৬ লেনে উন্নীত করা হবে। অন্যসব কাজের মধ্যে রয়েছে- ১০০ একর জমি অধিগ্রহণ, ১৩ হাজার ৩৯৪ মিটার ইলেকট্রিক্যাল কাজ, ৯০ মিটার ব্রিজ প্রশস্তকরণ, ২১০ মিটার চারটি ব্রিজ প্রশস্তকরণ, ২০০ মিটারের দুটি ব্রিজ নির্মাণ, ২ হাজার ৩৮৪ মিটারের চারটি আন্ডারপাস নির্মাণ, ৯০০ মিটার একটি ইউলুপ, ৫০ মিটার ফুট ওভারব্রিজ, ২ হাজার মিটার নদীর তীর রক্ষা কাজ, পরাশর্মক সেবা, যানবাহন ক্রয় এবং ইউটিলিটি সিফটিংসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- ভবিষ্যতে যানবাহনের চাপের কথা বিবেচনায় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ৮ লেনে উন্নীত করতে ভূমি অধিগ্রহণ ও মাটি ভরাট করা, ধীরগতির যানবাহনের জন্য দু’দিকে দুটি সার্ভিস লেন এবং মূল সড়ক চার লেনে টেকসই আকারে নির্মাণ করা। তবে ব্রিজ বা ইন্টারসেকশনগুলো ৮ লেনের করা যেতে পারে।
এছাড়া ঢাকার ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানে প্রদর্শিত প্রধান সড়কগুলোর মধ্যে যেগুলো এখনও নির্মাণ করা হয়নি, সেগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমের জন্য শিগগিরই প্রকল্প প্রণয়নের তাগিদ দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত সড়কটি নির্মাণ ও প্রশস্তকরণের সময় মেট্রো রেলের এমআরটি লাইনের জন্য পর্যাপ্ত স্থান রাখতে বলা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়- প্রকল্পের জন্য গঠিত স্টিয়ারিং কমিটি এবং বাস্তবায়ন কমিটিতে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বালু নদীর ওপর প্রস্তাবিত ২০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণের আগে মরফোলজিক্যাল স্টাডি করতে হবে।
এছাড়া ব্রিজের নকশা তৈরির সময় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল কর্তৃপক্ষের নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স সংগ্রহ করতে হবে। একই সঙ্গে প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত ব্রিজগুলো নান্দনিক আকারে নির্মাণ করতে হবে।