নিজেকে উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে
মো. ইলিয়াছ হোসেন ও তমা সাহা
প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০১৯, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। ছবি: যুগান্তর
বিশ্বমানের নাগরিক হতে হলে তথ্যনিষ্ঠ, জ্ঞাননিষ্ঠ, প্রযুক্তিনির্ভর ও মানবকল্যাণধর্মী চিন্তা-ভাবনায় নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে। তরুণদের উদ্দেশে এ কথা বলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।
পরিকল্পনা কমিশনে নিজ কার্যালয়ে যুগান্তরের সঙ্গে তার বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়। ড. শামসুল আলম আরও বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক বিস্তৃতি ঘটছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিক্ষার মান অর্জন করতে হবে।
তথ্য-জ্ঞান-প্রযুক্তিনির্ভর এ পৃথিবীতে নিজেদের আগামীর উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য নিবিড়ভাবে লেগে থাকতে হবে। তরুণরা যদি যোগ্য হয়ে উঠে তাহলে চাকরি তাদেরকে খুঁজে বেড়াবে।
ড. শামসুল আলম ১৯৫১ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে শামসুল আলম তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অর্থনীতি স্নাতক কোর্সে ভর্তি হন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে এমএসসি পাস করেন। ১৯৮৩ সালে ব্যাংককের থাম্মাসাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ অর্থনীতি ও ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসেল আপন টাইন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ড. আলম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও শিক্ষকতায় ১৯৭৪ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত নিয়োজিত ছিলেন। অধ্যাপনা জীবনে তিনি ২০০৮ সালে জার্মানির হোমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বেলজিয়ামের ঘেণ্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও নেদারল্যান্ডসের ভাগিনিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট ইকনোমিকস স্কুলে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি হিসেবে কৃষি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষকতায় যুক্ত ছিলেন।
শামসুল আলম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে পরপর তৃতীয় মেয়াদে, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্টস বোর্ডে (চতুর্থ মেয়াদে), সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে (চতুর্থ মেয়াদ), সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে (তৃতীয় মেয়াদে) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের (দ্বিতীয় মেয়াদে) সম্মানিত সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিসের গভর্নিং বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ড. আলম জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় মার্চ ২০০২ থেকে ডিসেম্বর ২০০৫ পর্যন্ত পূর্ণকালীন জাতীয় কনসালটেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
পঁয়ত্রিশ বছরের অধ্যাপনা শেষে প্রেষণ ছুটিতে ড. শামসুল আলম ১ জুলাই ২০০৯ সালে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে তিনি এখনও কর্মরত আছেন। ড. আলম ২০১৬ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে যান।
তিনি ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির ১০% কোটায় ক্যাডার সার্ভিসের বাইরে প্রথম সিনিয়র সচিব পদমর্যাদা অর্জন করেন। পরিকল্পনা কমিশনে তার প্রাপ্ত প্রথম দায়িত্বের মধ্যে ছিল দ্বিতীয় দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র (২০০৯-১১), সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে সংশোধন পুনবির্ন্যাস করা।
ড. আলমের নেতৃত্বে প্রণীত বাংলাদেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক (২০১৬-২০২০) পরিকল্পনার বাস্তবায়ন এখন এগিয়ে চলেছে। পরিকল্পনা কমিশনে ড. আলমের কার্যকালীন অন্যসবের মধ্যে বাংলাদেশে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনবিষয়ক ১৫টি গ্রন্থ, বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন কৌশলপত্র (২০১১-২০২১) ও বাংলাদেশের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র (২০১৫-২০২৫) প্রণীত হয়েছে। ড. আলমের অংশগ্রহণে ও নেতৃত্বে বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণীত হয়েছে (২০১৮)।
শামসুল আলম ২০১৮ সালে ‘সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনোমিক মডেলিং’ বাংলাদেশে ‘Economist of Influence Award’ অর্জন করেন। ড. আলমের গবেষণা গ্রন্থ, পাঠ্যপুস্তকসহ অর্থনীতিবিষয়ক প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ১২টি। দেশে-বিদেশে প্রকাশিত সম্পাদিত গ্রন্থ সংখ্যা ১৮টি।
দেশ-বিদেশে প্রকাশিত জার্নালে গবেষণা নিবন্ধ ৪৮টি। কৃষি অর্থনীতি বিষয়ে দক্ষতা ও অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি ১৬তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ২০১৮ সালে ড. আলমকে স্বর্ণপদকে ভূষিত করেন।
সরকার অনুমোদিত বাংলাদেশ শিক্ষা পর্যবেক্ষণ সোসাইটি ড. আলমকে ‘বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিপদক ২০১৮’ তে ভূষিত করেছেন। পারিবারিক জীবনে তার স্ত্রী, দুই পুত্র সন্তান ও এক নাতনি রয়েছে।