
প্রিন্ট: ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৫৫ পিএম
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের নতুন ভবন
মামলা জটিলতায় কাজ বন্ধ
১৫০ বছরের পুরনো ভবনে কার্যক্রম

যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: যুগান্তর
আরও পড়ুন
দেশের অন্যতম প্রাচীন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম চলছে ১৫০ বছরের পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনে। এ ভবনের পলেস্তরা খসে পড়ে প্রায় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
কলেজটিতে শ্রেণীকক্ষ, ল্যাব, অডিটোরিয়াম ও শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এছাড়া কলেজের একমাত্র খেলার মাঠটি দীর্ঘদিন ধরে বে-দখলে রয়েছে। এ মেডিকেল কলেজে ১৫ বছর আগে একটি ৮ তলা ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হলেও বেইজমেন্ট নির্মাণের পরপরই মামলাজনিত কারণে থেমে গেছে নির্মাণ কাজ।
দীর্ঘদিন ধরে ওই ভবনের পিলারগুলোতে লতাগুল্ম জড়িয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ করে এসব সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের প্রাচীনতম চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ১৬শ’ ছাত্রছাত্রী শিক্ষা গ্রহণ করছে। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের পাঠদান, ব্যবহারিক ও সেমিনার করার জন্য ১৫০ বছরের পুরাতন একাডেমিক ভবনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
ব্যবহার অনুপযোগী এ ভবনটি যে কোন মুহূর্তে ধসে পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এসব কারণে শিক্ষার্থীরা কলেজের শ্রেণীকক্ষে বসে পাঠদান ও আবাসিক হলগুলোতে থাকতে ভয় পাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী আত্মীয়-স্বজনের বাসা ও মেস বাড়িতে ভাড়া থেকে কলেজে ক্লাস করছে।
জানা যায়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য ২০০৩ সালে একটি ৮ তলা ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার। ওই ভবনের পাইলিং কাজ শেষ হয়ে বেজমেন্ট ফ্লোরের সব কয়টি কলাম নির্মাণ শেষ হয়।
এরপর সম্পত্তি নিয়ে মামলাজনিত কারণে নির্মাণ কাজ থেমে যায়। দীর্ঘ ১৫ বছরেও আইনি লড়াই শেষ করে ওই ভবনটি পুনঃনির্মাণ করতে পারেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এতে নির্মিত অংশে লতাগুল্ম জড়িয়ে বর্তমানে জঙ্গলে রূপ নিয়েছে ভবনটি।
কলেজ কর্তৃপক্ষ বার বার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও গণপূর্ত অধিদফতরকে (পিডব্লিউডি) চিঠি দিলেও ভবনটি নির্মাণে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। কলেজ কর্তৃপক্ষের বার বার চাহিদাপত্র প্রেরণের পরিপ্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারি মাসে বুয়েটের একদল বিশেষজ্ঞ এসে মাটি পরীক্ষা করেন।
তারা পুরাতন কলামগুলোর ওপর নতুন করে নির্মাণ কাজ শুরু যায় কি-না তার সম্ভাব্য যাচাইয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা করেন। তাদের পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেলে নির্মাণ কাজের দরপত্র চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছে পিডব্লিউডির একাধিক সূত্র।
এছাড়া কলেজের একমাত্র ছাত্রী নিবাসটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় ছাত্রীরা আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছে। ছাত্রী হোস্টেলের স্থান সংকুলাণ না হওয়ায় প্রায় সিটে ডাবলিং করে থাকতে হচ্ছে ছাত্রীদের।
সায়মা জাহান, লাবিবা, কামরুন্নাহারসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী যুগান্তরকে বলেন, কলেজে পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ নেই, হলে পড়াশোনা ও শোয়ার যায়গা নেই। এমন পরিস্থিতিতে অসামর্র্থতার কারণে বাইরে থাকারও কোনো সুযোগ নেই। বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীরা হলে থাকছে বলে জানান তারা।
ছাত্রলীগে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি রাতুল শিকদার যুগান্তরকে জানান, কলেজের একমাত্র খেলার মাঠটি দীর্ঘদিন ধরে বেদখলে রয়েছে। দ্রুত এসব ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন ভবন নির্মাণ করে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধান করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
পিডব্লিউডি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাইনুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবনটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর ঘোষিত হ্যারিটেজ বিল্ডিং।
তাই এটির পরিবর্তন-পরিবর্ধন অথবা ভাঙতে সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমতির প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে পিডব্লিউডির কিছু করার থাকে না। পিডব্লিউডি শুধুমাত্র সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে থাকে। নতুন ভবনটি নির্মাণের জন্য অচিরেই টেন্ডার আহ্বান করা হবে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক বিল্লাল আলম যুগান্তরকে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কলেজের সমস্যাগুলো জানানো হয়েছে। নতুন ভবন নির্মিত হলে অচিরেই সমস্যাগুলো সমাধান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।