এত অভিযোগ তবুও বহাল বাঘাইছড়ির পিআইও
সুশীল প্রসাদ চাকমা, রাঙামাটি
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২১, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অনিয়ম-দুর্নীতি-অসদাচরণ যেন নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার পিআইও (প্রকল্প কর্মকর্তা) নুরুন্নবী সরকারের। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে গতবছর তাকে শাস্তিমূলক বদলি করে বাঘাইছড়িতে দেওয়া হলেও এখানে তিনি যেন আরও বেপরোয়া। কমিশন ছাড়া তিনি কোনো কিছু বোঝেনই না। তার দুর্নীতি নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা প্রকাশ্যে সোচ্চার হলেও নুরুন্নবী রয়েছেন বহাল তবিয়তে। গত ডিসেম্বরে ইউএনও সভাপতিত্বে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়েছে। নানা অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর তাকে শাস্তি হিসাবে ইতোমধ্যেই পদাবনতি দিয়েছে।
জানতে চাইলে বাঘাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা বলেন, পিআইও নুরুন্নবীর চাকরি কীভাবে আছে-আমার কাছে খুব অবাক মনে হচ্ছে। আমি যতদূর শুনেছি, তিনি ছুটি নিয়ে তদবিরে গেছেন।
সাজেক ইউপি সদস্য হীরানন্দ ত্রিপুরা ও বঙ্গলতলী ইউপি সদস্য তরুণ বিকাশ চাকমা জানান, যে কোনো কাজে নুরুন্নবী সরকার ১৫ ভাগ কমিশন আদায় করেন। বঙ্গলতলী ইউপি সদস্য নীতিশ চাকমা জানান, তার ৭৫ হাজার টাকার বিল থেকে পিআইও নুরুন্নবী ২৪ হাজার টাকা অফিস খরচ বাবদ কেটে রেখেছেন।
মারিশ্যা ইউপি সদস্য মোফাজ্জল হোসেন ও রিপেল চাকমা, আমতলী ইউপি সদস্য শমসের আলী জানিয়েছেন, ১৫ ভাগ চাঁদা দিয়ে নুরুন্নবীর কাছ থেকে টিআর-কাবিখা প্রকল্পগুলোর চেক নিতে হয়। বাঘাইছড়ি সদর ইউপি সদস্য প্রিয় বিকাশ চাকমা ও জমির আলী মেম্বার জানিয়েছেন, অফিস খরচ দিয়েই বিলের চেক নিতে হয়। রূপকারি ইউপি সদস্য আবদুল হামিদ জানিয়েছেন, আমার কাছে নগদ টাকা না থাকায় অনেক বুঝিয়ে পিআইও’র কাছ থেকে চেক বুঝে নিয়ে পরে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে ১৫ ভাগ হারে কমিশনের টাকা দিতে হয়েছে।
আমতলী ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী বলেন, বাধ্য হয়েই বাঘাইছড়ির ব্যবসায়ী শাহ আলমের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা পিআইওকে দিতে হয়েছে। ব্যবসায়ী শাহ আলম মুঠোফোনে বিষয়টি স্বীকার করেছেন। বাঘাইছড়ি উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান কাইয়ুম জানিয়েছেন, নিয়মনীতি অনুসরণ না করে গুচ্ছগ্রামের বেশকিছু রেশন কার্ড অন্যদের নামে বরাদ্দ দিয়েছেন পিআইও। জানতে চাইলে বাঘাইছড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পিআইও’র বিরুদ্ধে আমাদের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও মাসিক সভায় যেহেতু বিষয়গুলো উঠেছে, সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখব। বক্তব্য জানতে পিআইও নুরুন্নবী সরকারকে বেশ কয়েকবার তার ব্যবহার করা মোবাইলে ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।