দাগনভূঞার জমিদার বাড়ি বখাটেদের অভয়াশ্রম

দাগনভূঞা (ফেনী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২০, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রবাদ আছে ‘রাজা যায় রাজা আসে’ কিন্তু দাগনভূঞার রাজবাড়ির রাজা গেছেন, রাজা আসেননি। সেখানে প্রতিনিয়নত আছে বখাটেদের দখলদারিত্ব আর আড্ডাখানা। প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরনো দাগনভূঞা উপজেলার প্রতাপপুর জমিদার বাড়িটি প্রকৃত মালিকদের অনুপস্থিতিতে দিন দিন ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। সংস্কারহীনতায় এখন এ বাড়ি ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। মাঝে মধ্যে কিছু দর্শনার্থী এখানে ঘুরতে এলেও বখাটেদের উৎপাতের কারণে তারা আগ্রহ হারাচ্ছেন। উপরন্তু বিশাল এ বাড়িটি কুক্ষিগত করার জন্য একটি প্রভাবশালী মহল ছিদ্র খুঁজছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দাগনভূঞা উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের প্রতাপপুর গ্রামে জমিদার বাড়িটির অবস্থান। দাগনভূঞায় কয়েকটি চৌধুরী, ভূঞা ও জমিদার বংশের মধ্যে প্রতাপপুর জমিদারদের অবস্থান ছিল শীর্ষে। তারা ছিল আশপাশ এলাকার জন্য প্রভাবশালী। ব্রিটিশ আমলে বাড়ির জমিদার রাজকৃঞ্চ সাহা এ বাড়িতে বসেই এ এলাকার শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। তিনি ও তার পাঁচ ছেলে জমিজমার খাজনাদি আদায় করতেন। জানা যায়, ১৮৫০ কিংবা ১৮৬০ সালে জমিদার রাজকৃঞ্চ সাহা ৮০০ শতক জায়গায় দৃষ্টিনন্দন করে বাড়িটি নির্মাণ করেন। বাড়িটিতে রয়েছে ১০টি ছোট-বড় দালান। এখানকার ১৩টি পুকুর পুরো বাড়িকে করেছে আকর্ষণীয়। ওই সময়ে বাড়িটি ছিল আশপাশের এলাকার জন্য দর্শনীয়। তৎকালীন সময়ে অন্যান্য স্থানের জমিদাররা এ বাড়িতে সফরবিরতি করতেন। জমিদারদের চাহিদা অনুযায়ী বাড়িটি ৮০০ থেকে ১ হাজার ৬৪৪ শতাংশে বর্ধিত করা হয়। এক পর্যায়ে জমিদার প্রথার বিলুপ্তি ঘটলে এ বাড়ির প্রভাব-প্রতিপত্তি কমতে শুরু করে। জমিদার বাড়ির সদস্যরা দেশ-বিদেশে পাড়ি দিলে বাড়িটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকে। স্থানীয়রা জানান, ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত রাজকৃষ্ণ সাহার উত্তরাধিকারীরা এ বাড়িতে অবস্থান করতেন। পরে ওই বাড়িটি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা দখলে নিতে নানাভাবে হেনস্তা করতে থাকেন। এ সময় কয়েকবার বাড়িটিতে বসবাসকারীদের ওপর হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। স্থানীয় নেতাদের লোলুপদৃষ্টি আর নির্যাতনের কারণে এক পর্যায়ে তারা ওই বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন। বর্তমানে তারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আবাস গড়ে তুলেছেন। বাড়িটি সংরক্ষণের ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, বাড়িটি এখনও ব্যক্তিমালিকানায় রয়েছে। ফলে আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে এখানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু করা যাচ্ছে না। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মালিকদের কোনো তত্ত্বাবধান না থাকায় এটি স্থানীয়রা দখল করে নিতে পারে বলে তিনি মনে করেন। এর আগে বিষয়টি নিয়ে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে ঐতিহ্যবাহী এ বাড়ির প্রতি উপজেলা প্রশাসনের তীক্ষè নজরদারি রয়েছে।