পরিচালকের বিরুদ্ধে ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ
সিরাজগঞ্জের নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০১৮, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে উত্তরবঙ্গে প্রতিষ্ঠিত প্রথম বেসরকারি নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজের পরিচালক (প্রশাসন) আরমান আলী মিঠুর বিরুদ্ধে মেধা স্কোরকে পাশ কাটিয়ে ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের তথ্য অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ভর্তি বাণিজ্যের ভয়াবহ চিত্র। জানা যায়, নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজের পরিচালক ও সিন্ডিকেট প্রধান আরমান আলী মিঠু তার অধীনস্থ সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার উৎপল কান্তি ঘোষ, সিনিয়র অফিস সহকারী সাইফুর রহমানসহ অন্যান্য স্টাফ ও দালালদের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তিনি মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে মেধা স্কোর পাশ কাটিয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তি, ভুয়া বিল-ভাওচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, ইন্টার্নশিপের জন্য সার্টিফিকেট নিতে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে প্রতি বছর হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। সম্প্রতি ভর্তি বাণিজ্য বিষয়ে কথা হয় প্রথম বর্ষের ছাত্র শাহরিয়ার ফারুকের বাবা সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ফুলকোচা গ্রামের আবদুল হামিদের সঙ্গে। তিনি জানান, আমার ছেলেকে ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি করাতে চার লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ছেলের মেরিট স্কোর কম হওয়ায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ নেই বলে জানান কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরে নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের জুনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাসিস্টেন্ট এহিয়া আকন্দ হীরা এবং সদর উপজেলার ফুলকোচা গ্রামের আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে পল্লী চিকিৎসক ও ভর্তি বাণিজ্যের দালাল বলে পরিচিত ফরহাদ আলীর মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে ছেলেকে ভর্তি করি।
এছাড়া একই শিক্ষাবর্ষে অসচ্ছল মেধাবী কোঠায় (ফ্রি কোঠা) ভর্তিচ্ছু ছাত্র পাবনা বেড়া থানার অনিন্দ্র কুমার দত্তের বাবা আনন্দ কুমার দত্ত বলেন, আমার ছেলে অসচ্ছল মেধাবী কোঠায় ২৬৮.৫ মেরিট স্কোর নিয়ে তালিকায় এক নম্বরে ছিল। তালিকা অনুযায়ী এমনিতেই ভর্তি হওয়ার কথা। কিন্তু কলেজের লোকজন আমার কাছে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। আমার আর্থিক অবস্থা ভালো নয় বিধায় টাকা দিতে না পারায় ছেলেকে ভর্তি করাতে পারিনি।
তাড়াশ উপজেলার তৃতীয় বর্ষের ছাত্র জাহিদুল ইসলামের বাবা আবদুল মান্নান জানান, ভর্তির নির্ধারিত সময়সীমা পার হওয়ায় ছেলেকে সাধারণ কোঠায় ভর্তি করাতে না পেরে দালাল ধরে পরিচালক আরমান আলীকে অতিরিক্ত আট লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে বিদেশি কোঠায় ছেলেকে ভর্তি করি। একই বর্ষের আরেক ছাত্র সুব্রত বসাক জানান, সাধারণ কোঠায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ না থাকায় বিদেশি কোঠায় ভর্তি করার জন্য আমার বাবার কাছ থেকে পরিচালক আরমান আলী ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার উৎপল পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজে সব কোঠা মিলে মোট আসন সংখ্যা ৮৫টি। ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সাধারণ কোঠায় প্রথম মেধা তালিকা থেকে ১১ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়। ৩৫টি আসন দ্বিতীয় মেধা তালিকা থেকে নেয়ার কথা থাকলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ অনেক ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের জানিয়ে দেন প্রথম মেধা তালিকার সবাই ভর্তি হয়েছে, আসন ফাঁকা নেই। পরবর্তীতে ওই ফাঁকা আসনগুলো মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে পূরণ করা হয়। ভর্তি বাণিজ্য ও অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে কলেজ পরিচালক আরমান আলী মিঠুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এএসএম আকরাম হোসেন বলেন, স্বচ্ছতারভিত্তিতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এমএ মুকিত বলেন, সবখানেই কমবেশি অনিয়ম দুর্নীতি আছে। এখানে নেই তা বলা যাবে না। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।