কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কতদূর!

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০১৯, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কলেজ প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১১ বছর পরও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ শুরু হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ হাসপাতাল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও নির্মাণ কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। এ অবস্থায় পর্যটন নগরী কক্সবাজারের মানুষ যেমন সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন তেমনি মেডিকেল কলেজে যারা লেখাপড়া করছেন তাদের প্র্যাকটিক্যাল শিক্ষাও ব্যাহত হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের অবহেলা ও উদাসীনতার কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।সূত্র জানায়, ২০১১ সালে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়। এর মাত্র ছয় বছরের মধ্যে ২০১৭ সালের মে মাসে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়। ২০১৩ সালে গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয় এবং মাত্র চার বছরের মধ্যে ২০১৭ এপ্রিলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়। অথচ কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ২০০৮-২০০৯ সেশনে ছাত্রছাত্রী ভর্তি শুরু হয়। এর ১১ বছর পরও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শুরু করা যায়নি। ২০১৭ সালের ৬ মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তবে দুই বছরেও হাসপাতালের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি নেই। কলেজের সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম জানান, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি কলেজ। কিন্তু শুরু থেকে এ কলেজটির প্রতি দরদ দেননি দায়িত্বশীলরা। যে কারণে নানা সীমাবদ্ধতা ও জটিলতার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছিল এ কলেজ। ২০১৫ সালে তিনি যোগ দেয়ার পর সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের চেষ্টা করেন।
সূত্র জানায়, ২০০৮-২০০৯ সেশন থেকে ছাত্র ভর্তি শুরু হলেও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে সর্বক্ষেত্রে ছিল হযবরল অবস্থা। ছিল না ভালো কোনো লাইব্রেরি, লেকচার হল, ভালো ক্লাস রুম, ডিসকাশন হল, ল্যাব, কনফারেন্স রুম ইত্যাদি। ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল নামেমাত্র ১০-১৫ শতাংশ। ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে প্রয়োজনীয় উপস্থিতি না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দেয়া হতো। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ৯ বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা একটি ৫২ সিটের বাস মেরামত করে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে যানবাহন ব্যয়বাবদ বছরে ৪০ লাখ টাকা সরকারের রাজস্ব সাশ্রয় হয়। কলেজে ১৩ লাখ ৬০ হাজার ৯৮৭ টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় প্রায়ই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিয়ে চিঠি দিত বিদ্যুৎ বিভাগ। ভুতুড়ে বিল দেয়ার কারণে কলেজকে বেগ পেতে হয়। মাসিক ৮০ হাজার টাকা থেকে বিদ্যুৎ বিল নেমে আসে ১৫ হাজার টাকায়। শিক্ষক সংকট ছিল প্রকট। কলেজে বিভিন্ন পর্যায়ের ৮৭টি শিক্ষকের পদ থাকলেও শিক্ষক ছিলেন মাত্র ৪২ জন। ১৫টি অধ্যাপক পদের সবগুলোই শূন্য ছিল। সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন ২২ জনের মধ্যে মাত্র ৯ জন, সহকারী অধ্যাপক ছিলেন ২৪ জনের মধ্যে ১০ জন এবং লেকচারার ছিলেন ২৬ জনের মধ্যে ২৪ জন। দেখা যায়, মূলত জুনিয়র শিক্ষকদের দিয়ে কলেজটির কার্যক্রম জোড়াতালি দিয়ে চালাতে হচ্ছিল। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের তীব্র সংকটের কারণেও বিভিন্ন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। পাশাপাশি ছিল কর্মচারী-সংকট। শূন্যপদ পূরণের মাধ্যমে এ সংকট কিছুটা হলেও সমাধানের চেষ্টা করা হয়।