
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে। এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ডিপসিক এআইয়ের উদ্ভাবনী পদ্ধতি ও যুগান্তকারী অগ্রগতির মাধ্যমে সবার মনোযোগ কেড়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ আগে সিলিকন ভ্যালির মাল্টি বিলিয়ন ডলার এআই প্রযুক্তিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে চীনা প্রযুক্তি দিয়ে নির্মিত ডিপসিক সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপসিকের তৈরি ‘ডিপসিক এআই’ মডেল নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে।
তবে এরমধ্যেই ডিপসিকের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য প্রদান, ব্যক্তিগত তথ্য চুরি, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে যায় এমন সব প্রশ্নের উত্তরে নিরবতা অবলম্বন বা উত্তর প্রদান করে তা মুছে ফেলাসহ নানান অভিযোগ উঠেছে ।
এসবের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যেই তাইওয়ান, দক্ষিন কোরিয়া অস্ট্রেলিয়া তাদের দেশে ডিপসিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এছাড়াও ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডসসহ আরো কয়েকটি দেশ ডিপসিকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সিএনএনের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে চীনের বিরুদ্ধে যায় এমন সব প্রশ্নের ক্ষেত্রে ডিপসিকের দ্বিচারিতা মূলক উত্তর উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮৯ সালের ৪ জুন চীনের তায়ানমান স্কয়ারে ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর চীন সরকারের অভিযানে কয়েকশো মানুষ নিহত ও আহত হয় বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে।
ডিপসিককে এই দিন সম্পর্ক প্রশ্ন করা হলে ডিপসিক প্রথমে সঠিক উত্তর দিলেও পরবর্তীতে নিজে থেকেই উত্তর মুছে ফেলে এবং কিছুক্ষন পর চলো আমরা অংক করি কিংবা অন্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করি বলে প্রশ্ন এড়িয়ে যায়।
ঠিক এই প্রশ্ন যদি চীনে নেটওয়ার্কের ভেতরে ডিপসিককে করা তখন সে বলে আমার জানা নেই এর উত্তর কি।
ডিপসিক উইঘুর, হংকং, তিব্বত, তাইওয়ান সম্পর্কে চীনের বিরুদ্ধে যায় এমন সব প্রশ্নের উত্তরে এমন ভুল তথ্য কিংবা দ্বিচারিতামূলক জবাব দিয়ে প্রশ্নকারীকে সঠিক উত্তর না দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে।
এছাড়াও ব্যক্তিগত ফাইল, ভয়েস রেকর্ড ছবি সংরক্ষন করে পরবর্তীতে সেগুলো ব্যবহার করে চীন সরকার নানান গবেষণার কাজে ব্যবহার করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ডিপসিক মূলত উন্নত এআই মডেল। চীনের হ্যাংজোভিত্তিক একটি গবেষণাগারে তৈরি করা হয়েছে মডেলটি। ২০২৩ সালে গবেষণাগারটি প্রতিষ্ঠা করেন প্রকৌশলী লিয়াং ওয়েনফেং।
ওপেন-সোর্সভিত্তিক এআই মডেলটির চ্যাটবট অ্যাপ অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে উন্মুক্তের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশে চ্যাটজিপিটির তুলনায় বেশিবার নামানো হয়েছে। আর তাই ডিপসিক এআই মডেলটি সিলিকনভ্যালিসহ এআই দুনিয়াকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করছে বলে জানিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকেরা।
ডিপসিকের আগমনের পেছনে রাজনৈতিক কারণ আছে বলে মনে করেন অনেকেই। যুক্তরাষ্ট্র চীনের উন্নত সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। শুধু তাই নয়, এআইখাতে চীনকে চাপে রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ডিপসিক সেই চাপকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের মডেল বাজারে এনে বড় ধরনের চমক তৈরি করছে। যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে প্রশ্ন বিদ্ধ করছে।
ডিপসিকের উত্থান যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারেও প্রভাব ফেলেছে। ডিপসিকের সাফল্যের কারণে এনভিডিয়া, মেটা ও মাইক্রোসফট সহ অনেক এআই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমে গেছে।