ডিপসিক ও ওপেনএআইয়ের পার্থক্য যেখানে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:১৯ পিএম
তথ্য প্রযুক্তির নেতৃত্ব দেওয়া এ যুগে শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। এর পেছনে কাজ করছে ডিপসিক এআই ও ওপেনএআইয়ের মতো বিভিন্ন কোম্পানি।
কোম্পানিগুলো তাদের অত্যাধুনিক এআই মডেলের জন্য বেশ পরিচিত। তবে সমস্যা সমাধানে ভিন্নতা রয়েছে তাদের। বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কোম্পানি দুটির পার্থক্য।
চ্যাটজিপিটির মতো এআই চ্যাটবট মডেল তৈরির জন্য সুপরিচিত ওপেনএআই। যেটি চ্যাটজিপিটির প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে, প্রবন্ধ লিখতে পারে ও কারো সঙ্গে কথোপকথনও চালিয়ে যেতে পারে। বহুমুখী কাজের জন্য উপযুক্ত ওপেনএআইয়ের এসব এআই মডেল।
ওপেনএআই নিজেদের বিভিন্ন মডেলকে প্রশিক্ষণের জন্য বিশাল ডেটাসেট ও শক্তিশালী কম্পিউটারের ওপর নির্ভর করে। তবে এ পদ্ধতি ব্যবহারে অনেক অর্থ ও শক্তির খরচ করছে টেক জায়ান্টটি।
অন্যদিকে, এআইকে আরও সক্ষম ও সহজে ব্যবহারের উপযোগী করার দিকে মনোযোগ দিয়েছে ডিপসিক এআই। তাদের বিভিন্ন এআই মডেল বহুমুখী কাজ করতে পারে।
ডিপসিক নিজেদের এআই মডেলকে প্রশিক্ষণ ও এগুলোকে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় নানা সংস্থানও কমিয়ে আনার ওপর জোর দিচ্ছে।
গবেষণা বলছে, প্রশিক্ষণের সময় ওপেনএআইয়ের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম শক্তি ব্যবহার করে একইরকম নির্ভুল উত্তর দিতে পারে আর এ বিষয়টি ডিপসিকের পদ্ধতিকে আরও টেকসই ও সাশ্রয়ী করে তোলে।
দুই কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে মনোযোগের ক্ষেত্র। ওপেনএআইয়ের বিভিন্ন এআই মডেল মূলত ‘লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল’। যা সংশ্লিষ্ট কাজের দিকে লক্ষ্য রাখে। যেমন– চ্যাটিং, টেক্সট বিশ্লেষণ ও কনটেন্ট তৈরি।
এই মডেলকে বিশাল ডেটাসেটের ওপর প্রশিক্ষণ দেয় কোস্পানিটি। যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের টেক্সট, যা এদেরকে সব ধরনের বিষয় বুঝতে ও সাড়া দিতে সাহায্য করে। যার কারণেই ওপেনএআইয়ের বিভিন্ন টুল গ্রাহকদের সহায়তায়, সৃজনশীল লেখা ও শিক্ষার মতো কাজের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
এদিকে, ডিপসিক এআই আরও বিশেষায়িত পদ্ধতি গ্রহণ করে থাকে। স্বাস্থ্যসেবা, অর্থ ও কৃষির মতো নির্দিষ্ট শিল্পের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার দিকে কর্মকর্তাদের নজর ছিল মডেলগুলো ডিজাইন করার ক্ষেত্রে।
ডিপসিক এমন টুল তৈরি করেছে, যা ডাক্তারদের রোগ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ছবি বিশ্লেষণ করে বা স্যাটেলাইট ডেটা ব্যবহার করে ফসলের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণে কৃষকদের সহায়তা করতে সাহায্য করে। নির্দিষ্ট শিল্পে এআই প্রয়োগের বিষয়টি বাস্তব বিশ্বের সমস্যা সমাধানের জন্য বিশেষভাবে কার্যকর করে তোলে ডিপসিককে, যেখানে নির্ভুলতা ও দক্ষতার বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
দুটি কোম্পানির মধ্যে আরও একটি বড় পার্থক্য হচ্ছে, এআইয়ের নৈতিকতা ও স্বচ্ছতার দিকটি। নিজেদের বিভিন্ন মডেলকে নিরাপদ ও নিরপেক্ষ করার জন্য অনেক কাজ করছে ওপেনএআই। দায়িত্বশীল এআই ব্যবহারকে প্রচারের জন্য গবেষণা পত্র ও নির্দেশিকাও প্রকাশ করেছে কোম্পানিটি।
অন্যদিকে নৈতিকতাকেও গুরুত্ব দিয়ে কোনোকিছু ব্যাখ্যা করার জন্য সহজ সিস্টেম তৈরি করে এ বিষয়টিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে ডিপসিক। যার অর্থ- এটি এমনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, যা ভালোভাবে বুঝতে পারেন ব্যবহারকারীরা। যা স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে ভুলের গুরুতর পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
সার্বিক প্রভাবের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে ওপেনএআইয়ে বিভিন্ন মডেল আরও সরল, সৃজনশীল ও চ্যাটিংয়ের কাজে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে নির্দিষ্ট বিভিন্ন শিল্পে উজ্জ্বল ভূমিকা রাখছে ডিপসিক এআই, যেখানে সক্ষমতা, নির্ভুলতা ও অভিযোজনযোগ্যতা গুরুত্বপূর্ণ।
এআইয়ের বিভিন্ন ভাষা মডেলের তুলনা করে এক গবেষণায় উঠে এসেছে, সৃজনশীলতা ও চ্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে বেশি স্কোর করেছে ওপেনএআইয়ের এআই মডেল। এদিকে মেডিকেল ডায়াগনস্টিকস ও আর্থিক পূর্বাভাসের মতো নির্দিষ্ট কাজে সক্ষমতা দেখিয়েছে ডিপসিকের এআই সিস্টেম।
দুটি কোম্পানিই এআই ক্ষেত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি এ প্রযুক্তিটি ব্যবহারকারীদের জীবনকে উন্নত করতে পারে এমন অনেক উপায় তুলে ধরেছে তাদের মধ্যকার এসব পার্থক্য।