কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিশ্ববাসীর জন্য স্বস্তির নাকি দুর্ভোগের তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই রয়েছে প্রাঞ্জল বিতর্ক। প্রযুক্তির এ বিশেষ ক্ষেত্রটি যখন সবকিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছে, অনেকের মনে তখন চাকরি হারানোর ভয় প্রবল হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ বিতর্কেরই ফলাফল; আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানুষের চাকরি খাবে না বরং সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
এ প্রযুক্তির কল্যাণে ইতোমধ্যেই সহজ হয়েছে নানা রকম কঠিন কাজও। যেমন ই-মেইল লিখতে বসলে প্রায়ই কী লিখতে হবে, কিভাবে লিখতে হবে এমনকি যথার্থ শব্দ না খুঁজে পাওয়ার সমস্যায় পড়তে হতো। কিন্তু এখন কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বিভিন্ন ই-মেইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ব্যাপারটিকে সহজ করে ফেলেছেন। যার মাধ্যমে কোনো বিশেষ প্রচেষ্টা ছাড়াই ই-মেইল লেখা ও পাঠানো সম্ভব।
গ্রাফিক ডিজাইন : গ্রাফিক ডিজাইনের জন্য আমাদের প্রায়ই একজন ডিজাইনারের ধারস্থ হতে হয়। অথচ কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার কল্যাণে এখন ডিজাইনের দক্ষতা ছাড়াই শুধু কয়েক লাইন লিখিত নির্দেশনার মাধ্যমে অসাধারণ সব ডিজাইন করা যায়। এমনকি মোশন গ্রাফিক্সও সম্ভব এ প্রযুক্তির সহায়তায়।
গানের জগৎ : একটি গান তখনই জীবন্ত হয় যখন সেটিতে সুর জুড়ে দেওয়া হয়। অনেকেই আছেন যারা গান লিখতে পারেন কিন্তু সঠিক সুর দিতে পারেন না, তাদের জন্যও সহজ সমাধান রয়েছে এআই এর। এমন অনেক অ্যাপস এবং ওয়েবসাইট আছে যেখানে গানের কথাগুলো আপলোড করলেই সুন্দর সুর তুলে দেবে এ আধুনিক প্রযুক্তি।
খবরও খুঁজে দেয় : ব্যস্ততার কারণে প্রয়োজনীয় খবরটি মিস হয়ে যায়। এমনকি বিশেষ কোনো তথ্যও খুঁজে পাওয়া অনেক সময়ই কঠিন হয়ে পড়ে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ইন্টারনেটে উন্মুক্ত সংবাদ থেকে প্রয়োজনীয় সংবাদগুলো খুঁজে বের করে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করা যায় সহজে। এমনকি চাইলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সংবাদের মূল ঘটনাও সংক্ষেপে জেনে নিতে পারেন।
আঁকতে পারে ছবিও : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে অদেখা কোনো মানুষ বা ঐতিহাসিক কোনো ব্যক্তিত্বের ছবি এখন অবিকল আঁকা সম্ভব। এমনকি কল্পনা করুন ইট পাথর নয় বরং সবুজে ঘেরা ঢাকা। সেটিও ছবিতে এঁকে দেখিয়ে দিতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
ভিডিও কনটেন্ট তৈরি : ক্যামেরার সামনে কথা বলায় অনেকেরই দুর্বলতা থাকে। তা ছাড়া সাউন্ড এবং ব্যাকগ্রাউন্ডসহ নিখুঁত ভিডিও বানানো বেশ সময়সাপেক্ষ ও কষ্টকর। শুধু স্ক্রিপ্ট লিখে দিলেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চরিত্রসহ আকর্ষণীয় ভিডিও বানিয়ে দেয়। প্রয়োজনে নিজের চরিত্রও ব্যবহার করা যায়।
স্বাস্থ্যসেবায় : হৃদরোগসহ ডিমেনশিয়া, মাল্টিপল স্কলেরোসিস, পারকিনসনস, আলঝেইমার, এমনকি সিজোফ্রেনিয়ার মতো রোগও প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা যায় এ প্রযুক্তির মাধ্যমে। এমনকি বিশ্বজুড়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে কিভাবে এ প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা আরও উন্নত করা যায়। সম্প্র্রতি স্তন ক্যানসার নির্ণয়ে এক্স-রে চিত্র পাঠের কাজে এআই ব্যবহার করে ইতিবাচক ফল পেয়েছেন সুইডেনের একদল গবেষক।
মার্কেটিং : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ইউজার ও কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স, প্রোডাক্ট, মার্কেটিং ইত্যাদি অ্যানালাইসিসের কাজগুলো বাড়তি খাটুনি ছাড়াই করে ফেলা যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গবেষকদের জন্যও এটি সহায়ক।
তবে অনেক কাজ সহজ করলেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পাবে না কখন এ প্রযুক্তি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তথ্য বিশ্লেষণ করা গেলেও, কোন তথ্য দিয়ে কী নির্দেশ করে তা বিচার করার ক্ষমতা কেবল মানুষেরই আছে। তথ্য বিবেচনা করে কোনো সিদ্ধান্তের প্রভাব সমাজের প্রেক্ষাপটে সুফল বয়ে আনবে তা যন্ত্র বা সফটওয়্যার বুঝবে না। ঠিক একইভাবে, নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নৈতিকতার মানদণ্ডে কতটুকু ইতিবাচক তা জানার জন্য মানুষের প্রয়োজন অস্বীকার করার উপায় নেই। সিদ্ধান্ত প্রায়ই জটিল হয়ে যায় বিধায় নির্দিষ্ট তথ্য দ্বারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ফলাফল বাতলে দিলেও, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন তথ্য যুক্ত করার ফলে পুনঃসিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সক্ষমতা আছে কেবল মানুষের।