
প্রিন্ট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫৮ পিএম
চাটগাঁ ভাষায় জনপ্রিয় হচ্ছে আলমগীর অপুর সিপ্লাসটিভি

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ১২:১৭ এএম

আরও পড়ুন
চট্টগ্রামের ভাষাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের ভাষায় পরিচালিত ফেসবুক ও ইউটিউবসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভিত্তিক ফ্লাটফর্ম সিপ্লাসটিভি।
বাংলাদেশে বর্তমানে বাংলাসহ ৪১টি ভাষা প্রচলিত আছে। যার সবকটি ভাষা এখনো জীবিত।দেশে যে আঞ্চলিক ভাষাগুলো নিয়ে বেশি আলোচনা হয় এবং বেশি মানুষ যে আঞ্চলিক ভাষাগুলোতে কথা বলে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চাটগাঁইয়া ও সিলেটি ভাষা।
এছাড়াও নোয়াখালী, বরিশাল, খুলনা, ময়মনসিংহ, নাটোরসহ আরো বেশ কিছু আলোচিত স্থানীয় ভাষা রয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি মানুষের কথ্যভাষা চাটগাঁইয়া।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট davidpbrown.co.uk এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১৪ মিলিয়ন অধিবাসী চাটগাঁইয়া ভাষায় কথা বলে। বিশ্বের ১০০টি সর্বাধিক কথ্য ভাষার র্যাঙ্কিংয়ে চাটগাঁইয়া ৬৭তম স্থানে রয়েছে।যা ২০১৮ সালেও ছিলো ৮৮ তম অবস্থানে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ নানা স্থানে চাটগাঁ ভাষার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে ও জনপ্রিয় হচ্ছে বিধায় দিনে দিনে তার ব্যাপকতাও বাড়ছে।
তবে বাংলা ভাষার ব্যবহার যেখানে সার্বজনীন ঠিক সে রকম চট্টগ্রামের চাটগাঁইয়া ভাষা নিয়ে খুব একটা ব্যবহার হচ্ছে না বললেই চলে। কারণ হিসেবে বলা যায়- ভাষাটির এখনো কোন লেখ্য রূপ সৃষ্টি হয়নি। তবে বহুল ব্যবহৃত এই ভাষাটিকে যে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া যায় তা করে দেখিয়েছে চাটগাঁইয়া ভাষায় পরিচালিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমভিত্তিক ডিজিটাল প্লাটফর্ম সিপ্লাসটিভি (CPLUSTV)।
আরটিভি ও এটিএন নিউজে সাংবাদিকতায় কাজ করা সাংবাদিক আলমগীর অপু পাড়ি জমিয়েছিলেন ২০১৪ সালে আমেরিকায়। আমেরিকা থেকে স্বপরিবারে ফিরে এসে শুরু করেছিলেন সিপ্লাসটিভি।
২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অনলাইন ভিত্তিক এই চ্যানেলটি চট্টগামের ভাষায় সংবাদ প্রদান করার পাশাপাশি কাজ করছে চট্টগ্রামের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সামাজিক কুসংস্কার নিয়ে।
বর্তমান প্রজন্মের কথা বিবেচনা করে সিপ্লাসটিভি নিজেরাই নতুন নতুন গান, নাটক তৈরি করছে। তবে শুরুর দিকে সিপ্লাসটিভিতে যখন চাটগাঁইয়া ভাষায় সংবাদ পরিবেশন শুরু করে, তখন এই অঞ্চলের লোকেরা প্রাথমিকভাবে তাদের গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি।
যদিও মানসম্পন্ন ও জনমুখি এবং বিনোদনমূলক কনটেন্ট দেয়ার মাধ্যমে তারা দর্শকদের মন জয় করে নেয়। বর্তমানে সিপ্লাসটিভি এই অঞ্চলের অন্যতম জনপ্রিয় অনলাইন চ্যানেল।
ফেসবুকে ২.২ মিলিয়নেরও বেশি ফলোয়ার এবং ইউটিউবে এক মিলিয়নের অধিক সাবস্ক্রাইবার রয়েছে চ্যানেলটির।
সম্প্রতি ১ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার হওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ ইউটিউব থেকে 'গোল্ডেন বাটন' অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছে তারা।
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ থেকে একমাত্র ডিজিটাল কন্টেন্ট ক্যাটাগরিতে চ্যানেল হিসেবে সিপ্লাসটিভি কাতারে অনুষ্ঠিত ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল কাভার করেছিলো। গত ৭ বছরে চ্যানেলটি চাটগাইয়া ভাষায় ২০ হাজারের বেশি অডিওভিজ্যুয়াল কন্টেন্ট আপলোড করেছে। যার মধ্যে ২৫০টিরও বেশি বিষয়বস্তু ১০ মিলিয়নের বেশি ভিউ পেয়েছে।
চ্যানেলটির সর্বাধিক জনপ্রিয় বিষয়বস্তু ফেসবুকে ৪৬ মিলিয়ন ভিউ এবং ইউটিউবে ১৩ মিলিয়ন ভিউ পেয়েছে। শুধু চট্টগ্রামের মানুষই নয়, চট্টগ্রামের বাইরে অন্যান্য জেলার মানুষও এই চ্যানেলের ভিডিওগুলো দেখেন এবং উপভোগ করেন। আর এই ফ্লাটফর্মের মূল কারিগর সাংবাদিক আলমগীর অপু।
সিপ্লাসটিভির প্রধান সম্পাদক আলমগীর অপু বলেন, আমার পরিচিত মহলের অনেকজনকেই দেখেছি জনসমক্ষে চাটগাঁইয়া ভাষায় কথা বলতে লজ্জা বোধ করতেন। অথচ এই ভাষা আমাদের মায়ের ভাষা। শহরে কিংবা গ্রামে উভয় ক্ষেত্রেই অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিজের আঞ্চলিক ভাষার পরিবর্তে প্রমিত বাংলা শেখাতে দেখা যায় আর চাটগাঁ ভাষাকে পঁচা ভাষা বলে অনীহা দেখায়। তাই চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে ভাষাটিকে সংরক্ষণ ও জনপ্রিয় করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, আমি সিপ্লাসটিভি প্রতিষ্ঠা করেছি । এর অংশ হিসেবে আমরা সংস্কৃতির সব অংশে বিচরণ করছি। যেমন সংবাদ, নাটক, গান, পুঁথি সবই করেছি। আমাদের আঞ্চলিকভাবে কথ্য শ্লোকগুলো নিয়ে 'হাজারো প্রবাদ-প্রবচনে চাটগাঁ' নামে একটি বইও প্রকাশ করেছি।
আলমগীর অপু সংকলিত বইটিতে চাটগাইয়া ভাষার এক হাজারেরও বেশি প্রবাদ প্রবচন এখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে, যার অধিকাংশই বিলুপ্তির পথে। প্রকাশের পরপরই, বইটি দেশ বিদেশে সমালোচক, গবেষক এবং সাধারণ পাঠকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, বইয়ের ২য় সংস্করণে চাটগাইয়া ও প্রমিত বাংলায় অনুবাদ ও মর্মার্থ দেয়ার পাশাপাশি প্রবাদ-প্রবচন গুলোর ইংরেজি অনুবাদও দেয়া হয়েছে। বইটির তৃতীয় সংস্করণ হয়েছে লন্ডন থেকে যা amazon.com.uk তে পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্ববিখ্যাত Oxford ও Cambridge university লাইব্রেরিতেও বইটির ক্যাটালগ করার জন্য বইটি নেয়া হয়েছে। ভাষাতত্ত্বের শিক্ষার্থীদের জন্য বইটি নেয়া হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ।