ফেসবুক গ্রুপ ডিএসই-এর স্বেচ্ছাসেবীরা এভাবেই নানান ইস্যুতে কাজ করেন একদম বিনামূল্যে
অনলাইনের যুগে কমে এসেছে ব্যক্তিগত জীবনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলো, বেড়ে যাচ্ছে অনলাইন সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মের উপর মানুষের নির্ভরতা। যে কোনো বয়সসীমার মানুষ তার দিনের একটা বড় সময় কাটাচ্ছে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপগুলোতে।
হাজার হাজার কিংবা লক্ষ লক্ষ ফেসবুক কমিউনিটি বা গ্রুপগুলোর খবর হয়তো আমরা অনেকেই রাখি না। কিন্তু আমাদের প্রতিনিধি হাসিব ফিরোজের বাঁচনে উঠে এসেছে এমন একটি ফেসবুক কমিউনিটির কথা যা শুধু একটি ফেসবুক গ্রুপ নয়, তিন লক্ষ ছাব্বিশ হাজার মানুষের একটি পরিবার, যেখানে কোনো সস্তা ট্রল বা মানুষকে হেয় করে কোনো সস্তা বিনোদন থাকে নজরবন্দি। চলে ব্যতিক্রমী কার্যক্রম, যা মানুষের উপকার বই ক্ষতি করে না।
এমনই একটি ব্যতিক্রমধর্মী গ্রুপ কিংবা ফেসবুক কমিউনিটি ডিএসই (ডু সামথিং এক্সেপশনাল)। যেখানে কথা নয় বরং কাজকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই ব্যতিক্রমধর্মী কমিউনিটিতে রয়েছে এমন সব ফ্রি সেবা, যা হয়তো আজকের এই ব্যস্ত সময়ে অনেক আত্মীয়ের কাছেও পাওয়া সম্ভবপর হয় না।
চিকিৎসা সেবা নিতে আমরা যেভাবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হই ঠিক সেভাবেই ইমার্জেন্সি চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে ডিএসই গ্রুপটি এবং তা সম্পূর্ণ বিনা ফি তে! কেননা, এই গ্রুপে আছেন স্বনামধন্য চিকিৎসকদের প্যানেল, যারা দিনে এবং রাতের যেকোনো সময় বাড়িয়ে দেন মেডিক্যাল সহায়তার হাত।
এখানে আছে ‘রক্তের শক্তি’ টিম। এরা জরুরি রক্ত জোগাড় করার কাজ নিয়ে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করে। রক্তের প্রয়োজন হলেই শুধু একটি পোস্ট, হোক সেটা দুর্লভ রক্ত আর কমন! স্বেচ্ছাসেবক আর গ্রুপের সদস্যরা বাড়িয়ে দেবেন সাহায্যের হাত।
জরুরি হারানো বিজ্ঞপ্তি দিতে চাচ্ছেন? ডিএসসি আছে না! রেকর্ড আছে যেখানে শুধু একটা পোস্ট এর কারণে একজন খুঁজে পেয়েছেন ১০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া তার বাবাকে কিংবা খুঁজে বের করতে পারেন হারিয়ে যাওয়া ছোটবেলার কোনো প্রিয় বন্ধুকে, এই গ্রুপের ‘হারানো বন্ধুর খোঁজে’ সেশনে।
আইনি সহায়তা তো হাতের মুঠোয়! এখান থেকে আপনি যেকোনো আইনি পরামর্শ নিতে পারেন কোনো ধরনের সহিংসতার শিকার হলে এবং তা সম্পূর্ণ ফ্রি! ডিএসইতে আছে চাকরি। ডিএসইর ক্যারিয়ার পোস্ট হতে পারে আপনার ক্যারিয়ারের দিকে এক ধাপ। স্বপ্নের চাকরিটা হয়তো আপনাকেই খুঁজছে।
মোদের গরব মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা! কতোটা সচেতন এই বাংলা ভাষার প্রয়োগে? চোখে পড়ছে আশপাশের কোনো অসংগতি? শুদ্ধ বাংলার প্রসার নিয়ে কাজ করছে ডিএসইর গ্রুপ ‘বর্ণ নিয়ে’।
কী নেই এখানে? পছন্দসই একটা চলচ্চিত্র খুঁজে বেড়াচ্ছেন দেখবেন বলে? অথবা মনমতো একটা গল্পের বই? অথবা ইন্টেরিয়র ডেকোরশনের আইডিয়া চাচ্ছেন ঘর সাজাতে? অপরিচিত এলাকায় রাস্তা হারিয়েছেন অথবা পাচ্ছেন না খুঁজে? সব কিছুই পাবেন ডিএসই তে!
চোখের সামনে কোনো অন্যায় দেখেছেন? সমাজের আর দশটা মানুষকেও তা জানিয়ে দিতে চান? পোস্ট করে দিন ডিএসইর দেয়ালে। হোক না প্রতিরোধ। গুজব শুনে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে কল করুন ৯৯৯ এ। এমনই সব সচেতনতার জন্ম দিচ্ছে ডিএসই। গণপরিবহণে যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদে ৯৯৯ এর প্রচারণা এই ডিএসই থেকেই শুরু। ভলান্টিয়ার টিম কাজ করেছে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ১০টি পয়েন্টে।
পাত্র পাত্রী চেয়ে পোস্ট দিতে পারেন। সিঙ্গেলদের জন্য রয়েছে ডিএসইর ম্যাচ মেকিং সেশন। সম্প্রতি এই গ্রুপের বেশ জনপ্রিয় একজন সদস্য এবং মডারেটর এই গ্রুপের ম্যাচমেকিং থেকেই গাঁটছড়া বেঁধেছেন।
একটু সৃজনশীলতা বিস্তৃত করে দিতে পারেন যেকোনো কিছু বিক্রির পোস্টও। বিক্রি করে জোগাড় করতে পারেন প্রয়োজনীয় অর্থ। যেমন ধরুন, সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছেন? হাতে টাকা নেই কিন্তু আছে ব্যবসার আইডিয়া? অথবা হাতে বিনিয়োগ করার মতো টাকা আছে কিন্তু নেই কোনো ব্যবসায়িক জ্ঞান? নিশ্চিন্তে শেয়ার করতে পারেন এখানে, দশ মাথা মিলে নিজের সঠিক পথ খুঁজে নিন এখানে।
টেকনোলোজি বিষয়ে সহায়তা দরকার? স্মার্ট যুগে পিসি কাজ করছে না অথবা অ্যান্ড্রয়েডের সমস্যা? টেক হেল্প নিতে পারেন ডিএসইতে পোস্ট দিয়ে। এখানে আছে মোটিভেশন। কোনো বিশেষ ব্যক্তি আসবে আপনার মধ্যরাতের অতিথি হয়ে, যার গল্পটা আপনাকে যোগাবে অনুপ্রেরণা। জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে গড়তে পারেন নিজেকেও। গ্রুপের এডমিনরা আয়োজন করেন মধ্যরাতের বিনোদন সেশন, যেখানে চলে সাম্প্রতিক কোনো বিষয় নিয়ে হিউমারাস কথাবার্তা।
এছাড়াও খুব শিগগির মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেবার জন্য তারা শুরু করার পরিকল্পনা করছেন একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ বিভাগের,যার প্রস্তাবিত নাম 'মানবসেবা'। যেখানে বিনা ভাবনায় খুলে দিতে পারেন, নিজের মনের দরজা।
গ্রুপটি চালু করেছে প্রত্যাবর্তন নামক এক অভূতপূর্ব ব্যবস্থার। যেখানে গ্রুপের সদস্য রিমুভ হয়ে গেলে গ্রুপে আবার ফিরে আসতে পারে কোনো ভালো কাজের মাধ্যমে। হতে পারে সেটা পথশিশুদের এক বেলা খাওয়ানো বা কাউকে কোনো বই দেয়া! কিছু ব্যতিক্রমী ভালো করে প্রমাণ দিন, ফিরে পান সদস্যপদ!
সমাজে আজকাল এমন অনেক কিছু চট করে ভাইরাল হয়ে যায় যা নেতিবাচক, সামাজিকভাবে বর্জনীয়।ডিএসইর নীতিমালা একটাই,যতোই জনপ্রিয় হোক,প্রসঙ্গটিকে নৈতিক মানদণ্ডের আওতায় থাকতে হবে।নতুবা তা কখনোই এই গ্রুপে ঠাঁই পাবে না।
গ্রুপটি ২০১৪ সালের ১৩ মার্চে যাত্রা শুরু করেছিলো আশফাকুল ইসলাম নামক এক যুবকের সৃজনশীল হাত ধরে। তার সঙ্গে ২০১৫ সালে সংযুক্ত হন গ্রুপের বর্তমান মুখপাত্র হাসিব ফিরোজ। সেই ছোট্ট গ্রুপটা হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ পরিণত হয়েছে ফেসবুকের অন্যতম বড় গ্রুপে। এটা শুধু একটা ফেসবুক গ্রুপ না; এটা একটা অনন্যধর্মী স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন। যেখানেই হাত বাড়ালেই ধরতে পারবেন কিছু অক্লান্ত সেবার হাত।