নাসায় প্রতিযোগীর খবর নেই, মন্ত্রণালয় থেকে যাচ্ছে ৭ জন
এম. মিজানুর রহমান সোহেল
প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০১৯, ০৪:২৩ পিএম
নাসায় প্রতিযোগীরা অংশ নিতে না পারলেও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে সেখানে যাচ্ছেন ৭ জন। ছবি: যুগান্তর
মার্কিনমুলুক ফ্লোরিডায় নাসা কেনেডি স্পেস সেন্টারে আগামী ২১-২৩ জুলাই শুরু হতে যাওয়া একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের চার প্রতিযোগীর। তাদের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে যাওয়ার কথা ছিল তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ছয় কর্মকর্তা, বেসিসের পাঁচজনসহ মোট ১৬ জনের।
নাসার এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক জনপ্রতি দুই লাখ ৭৭ হাজার টাকা করে বাজেট দেয়া হয়েছে। অগ্রিম এয়ার টিকিট, হোটেল ভাড়া করা হয়েছে। কিন্তু ভিসা জটিলতায় ‘মূল আকর্ষণ’ প্রতিযোগী চারজন যেতে পারছেন না। প্রতিযোগীরা ছাড়াও ভিসা পাননি তালিকাভুক্ত বেসিস সদস্য এবং প্রতিযোগীদের মেন্টর। তবে শুধু মন্ত্রণালয়ের ছয়জনের তিন মাস করে ভিসা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় প্রতিযোগীরা গতকাল বুধবার আমেরিকা এম্বাসিতে পুনরায় ভিসার জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু সম্ভাব্য পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেয়ার তারিখ দিয়েছে ২৩ জুলাই। অথচ ওই দিন নাসার অনুষ্ঠান শেষ হবে। ফলে কোনোভাবেই তাদের এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার সুযোগ থাকল না।
জানা গেছে, ‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০১৮’ প্রতিযোগিতায় বিশ্বের দুই হাজার ৭২৯টি দলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে চ্যাম্পিয়ন হয় সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) টিম অলিক। এ টিমে রয়েছে জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের ছাত্র আবু সাবিক মাহদি ও কাজী মইনুল ইসলাম, একই বিভাগের সাব্বির হাসান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এসএম রাফি আদনান।
মাহদি জানান, গত ২৯ মে ও ১২ জুন দুটি আলাদা ই-মেইলের মাধ্যমে তাদের আমন্ত্রণ জানায় নাসা এবং ২১ জুন নাসা থেকে প্রত্যেক সদস্যের নাম উল্লেখ করে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছিল। আমন্ত্রণপত্র পেয়ে তারা ১ জুলাই ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করেন। ভিসার জন্য তারা সাক্ষাৎকার দেন ১১ জুলাই। পরে তাদের ভিসা আইএন-এর ২১৪ (বি) ধারায় (দেশে ফিরে আসবে না এমন সন্দেহ থাকায়) প্রত্যাখ্যান করে দূতাবাস।
মাহদি বলেন, নাসার আমন্ত্রণ রক্ষা করতে হলে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে তাদের নাসাতে উপস্থিত হতে হবে। সেখানে ২১, ২২ ও ২৩ জুলাই নাসার বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। ২১ জুলাই রকেট ফ্যালকন-৯-এর সিআরএস-১৮ মিশনের মহাকাশে উৎক্ষেপণ এবং ২২ ও ২৩ জুলাই অন্যান্য কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
ফলে প্রতিযোগীরা অংশ না নিলেও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি সালমা সিদ্দিকা মাহাতাব, মো. আবুল খায়ের, মো. দিদারুল আলম, হাইটেক পার্কের ডেপুটি সেক্রেটারি মো. আবদুল হাই, আইডিয়া প্রোজেক্টের কাজী হোসনা আরা ও আইসিটি ডিভিশনের প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা একরামুল হক এবং বেসিসের পরিচালক দিদারুল আলম সানি (তিনি আগে থেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভিসা নিয়েছিলেন) এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাচ্ছেন।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইসিটি মন্ত্রণালয় ও বেসিসের সমন্বয়ে ১৬ জনের একটি বিশাল বহরের কারণেই নাসা স্পেস অ্যাপ চ্যালেঞ্জের প্রতিযোগীরাই ভিসা পাননি। তবে এ বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি রাজা মো. আবদুল হাই, যিনি এই বিদেশ ভ্রমণের প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছিলেন।
প্রতিযোগীদের চেয়ে উৎসুক লোকের সংখ্যা বেশি বলেই কি ভিসা হয়নি? উত্তরে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘না। প্রতিযোগীরা আসলে সেখানে এমনিই যাবে। সেখানে তো আর কিছু হবে না। আর নাসা ইনভাইটেশন দেয়ার পরও কর্তৃপক্ষ যদি ভিসা না দেয়, তা হলে তো আমাদের করার কিছু নেই। স্টুডেন্টদের ক্ষেত্রে নাকি শুনলাম কড়াকড়ি, তাই স্টুডেন্টদের ভিসা দিতে চায়নি।’ তবে বেসিসের কেউই কেন ভিসা পাননি সেটির উত্তর দিতে পারেননি।
ভিসা জটিলতায় প্রতিযোগীরা যাচ্ছেন না, তা হলে কি মন্ত্রণালয়ের যে কয়েকজন যাবেন তারা সরকারি খরচে ঘুরতে যাচ্ছেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই তারা সেখানে কাজেই যাবেন, যেটির জন্য নাসা ডেকেছিল। তারা এখান থেকে অনেক কিছু শিখবেন।’
নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০১৮ এর আহ্বায়ক ও বেসিসের পরিচালক দিদারুল আলম সানি। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘ভিসা না হওয়া খুবই দুঃখজনক। এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া আমাদের জন্য অনেক গর্বের ছিল। নিঃসন্দেহে এটি গোটা বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন। যেহেতু সেখানে আমাদের জন্য নাসা ব্যবস্থা করেছে, তাই আমি সেখানে যাচ্ছি। আমরা না গেলে নাসাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে যেকোনো ধরনের উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে।’
তিনি আরও জানান, ‘ভিসা না হওয়ার বিষয়টি নাসাকে অবগত করা হয়েছে। বুধবার নাসা থেকে পাঠানো এক মেইলে প্রতিযোগী চার শিক্ষার্থীকে বাংলাদেশ থেকেই ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিতে বলা হয়েছে। প্রতিযোগীরা বাংলাদেশ থেকেই প্রেজেন্টেশন দেবে।’