গ্রাহকরা গ্রামীণফোন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন
এম. মিজানুর রহমান সোহেল
প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১০:২৫ পিএম
গ্রাহকরা গ্রামীণফোন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ছবি: যুগান্তর
নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলের সেবা মোবাইল নম্বর পোর্টেবেলিটি বা এমএনপি গত বছর ১ অক্টোবর চালু হওয়ার পর থেকে বিপাকে পড়েছে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন। গত চার মাস (অক্টোবর ২০১৮-জানুয়ারি ২০১৯) আগে এ সেবাটি চালু হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক হারিয়েছে অপারেটরটি।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার মাসে মোট ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬২১ জন গ্রাহক অপারেটর বদল করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬২ হাজার ৩১৭ জন গ্রাহক গ্রামীণফোন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
সর্বশেষ জানুয়ারি মাসেও গ্রামীণফোন থেকে তুলনামূলক বেশি গ্রাহক অন্য অপারেটরে গেছেন। এ মাসে গ্রামীণফোন ছেড়েছেন ১২ হাজার ৬৫৯ গ্রাহক। রবি ছেড়েছেন ৩ হাজার ৫০৫ জন, বাংলালিংক ১০ হাজার ৮৩৬ জন ও টেলিটক ছেড়েছেন ৪৪৮ জন। জানুয়ারিতে ২৭ হাজার ৪৪৮ জন গ্রাহক অপারেটর বদল করেছেন।
বিভিন্ন অপারেটর অভিযোগ করে বলছে, এমএনপি চালু হওয়ার পর থেকে যখন গ্রামীণফোন থেকে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক চলে যাচ্ছিল, তখন নানান অজুহাতে গ্রাহকদের আটকে রেখেছিল অপারেটরটি। বিটিআরসির প্রতিবেদনেও এ চিত্র স্পষ্ট। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, চার মাসে মোট ৩৯ হাজার ৮৫৭ জন গ্রাহক গ্রামীণফোন ছাড়তে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
তবে অন্য অপারেটর থেকে গ্রামীণফোনে গ্রাহক আসার সংখ্যাও আশাব্যঞ্জক নয়। গত চার মাসে অন্য অপারেটর থেকে গ্রামীণফোনে এসেছেন মাত্র ১২ হাজার ৩৪৬ জন গ্রাহক। এ সময় রবি থেকে অন্য অপারেটরে গেছেন ২৩ হাজার ৯১১ জন। অপারেটর পরিবর্তনে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন ১৪ হাজার। আর অন্য অপারেটর থেকে রবিতে এসেছেন সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৯৩ হাজার গ্রাহক।
বাংলালিংক পরিবর্তন করে অন্য অপারেটরে গিয়েছেন ৪৫ হাজার গ্রাহক। অপারেটর পরিবর্তনে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন ৪৪ হাজার গ্রাহক। আর অপারেটর পরিবর্তন করে বাংলালিংকে এসেছেন ২৫ হাজার গ্রাহক। টেলিটক ছেড়েছেন ২ হাজার ৩০১ জন গ্রাহক। আর টেলিটকে এসেছেন ২ হাজার ২ জন গ্রাহক।
গত বছরের ১ অক্টোবর এমএনপি সেবা চালু হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ২১ অক্টোবর। এর ফলে আগের নম্বর ঠিক রেখে এক অপারেটরের গ্রাহক অন্য অপারেটরে যেতে পারছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ সেবা চালু আছে। আর সম্প্রতি অপারেটর বদলে খরচ কমিয়ে ৫৮ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। পূর্বে এ খরচ ছিল ১৫৮ টাকা। ১৩ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও স্লোভেনিয়ার ব্যবসায়ীদের কনসোর্টিয়াম ইনফোজিলিয়ান টেলিটেক বিডি এ দেশে এমএনপি সেবা দিচ্ছে। শুরুতে অপারেটর পরিবর্তনে ১৫৮ টাকা খরচ পড়লেও এখন ৫৮ টাকায় এই সেবা পাচ্ছেন গ্রাহকরা।
গ্রামীণফোনের গ্রাহক হারানোর বিষয়ে জানতে অপারেটরটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
তবে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক পাওয়া অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেডের হেড অব করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স সাহেদ আলম বলেন, আমাদের নেটওয়ার্ক ও সেবার মান প্রতিযোগীদের চেয়ে অনেক উন্নত হওয়ার কারণেই এমএনপির মাধ্যমে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক গ্রাহক রবিকে বেছে নিয়েছেন বলে আমরা মনে করি।