Logo
Logo
×

সুরঞ্জনা

প্রান্তিক

চিলমারীতে ভাগ্য বদলের লড়াইয়ে নারীরা

Icon

গোলাম মাহবুব

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চিলমারীতে ভাগ্য বদলের লড়াইয়ে নারীরা

কুড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত করালগ্রাসী ব্রহ্মপুত্র নদ চিলমারী উপজেলার ভূখণ্ডকে বিভিন্নভাবে বিভাজন করেছে। ফলে খরস্রোতা এ নদের বুকে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক চরাঞ্চলের। এতে ৬ ইউনিয়নের মধ্যে উপজেলা শহর থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ৩টি ইউনিয়ন। ফলে প্রতিবছর বন্যা ও নদীভাঙনের কবলে পড়ে গৃহহীন হয় অসংখ্য পরিবার। চরাঞ্চলগুলোয় ঘটে যাওয়া বিভিন্ন দুর্যোগে কৃষি ফসল বিনষ্ট হওয়ায় কৃষিনির্ভর পরিবারগুলো পড়ে যায় চরম সংকটে।

এমন পরিস্থিতিতে বন্যা ও নদীভাঙনের শিকার নারীদের মাধ্যমে ২৪০টি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশ। তারা দুর্যোগকালীন ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার পাশাপাশি পারিবারিকভাবে আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ডে এগিয়ে এসেছে। আর তাদের সহযোগিতায় এসব পরিবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। সেই সঙ্গে পালটে যাচ্ছে তাদের জীবনমান। বিশেষ করে চরঞ্চলের নারীরা এ কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে তাদের ভাগ্য বদলের লড়াইয়ে সফল হচ্ছেন।

২০১৭ সালে ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশের ট্রান্সজিশনাল ফান্ড (এএসডি) প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় চালু করা হয় আয়বর্ধনমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম। এর মধ্যে চলতি বছর উপজেলার চরাঞ্চলীয় তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ২৪০ পরিবারের নারী সদস্যদের কৃষি ও প্রাণিসম্পদের ওপর প্রশিক্ষণ দান, প্রশিক্ষণ শেষে ভেড়া প্রদান, শীতকালীন এবং গ্রীষ্মকালীন সবজির বীজ প্রদান, বস্তায় আদা চাষসহ সবজি চাষের উপকরণ ও জৈবসার প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ এবং বীজ ও সার সহায়তা পেয়ে নারীরা বসতবাড়িতে সবজি উৎপাদন করে নিজেদের পারিবারিক চাহিদা মিটানোর পর বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করে থাকেন।

স্থানীয় চরাঞ্চলের বাসিন্দা সালমা আক্তার জানান, ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড প্রকল্প থেকে তাকে ৪ হাজার ১০০ টাকা দিয়ে একটি ভেড়া প্রদান করা হয়। সেটি থেকে বর্তমানে তার ৪টি ভেড়া হয়েছে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৩০ হাজার টাকা। একই কথা বলেন, ওই গ্রামের রাজমনি রানি। একই গ্রামের রেজিয়া বেগম ও রোসনা বেগম বলেন, ‘আধুনিক পদ্ধতিতে শাকসবজি উৎপাদনের প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর আমার বসতবাড়িতে সবজি উৎপাদন করে এ বছর ২৫ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছি। যা সংসারের বাড়তি আয় হিসাবে জমিয়েছি।’

শাহিনুর বেগম বলেন, ‘প্রকল্প থেকে কেঁচো সার তৈরির প্রশিক্ষণ পেয়েছি। বর্তমানে আমার বসতবাড়িতে কেঁচো সার উৎপাদন করছি এবং প্রতি মাসে ২ হাজার টাকার কেঁচো সার বিক্রি করছি।’ শরিফা বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি ৩০টি বস্তায় আদার চাষ করেছেন এবং প্রতি বস্তায় ১ থেকে দেড় কেজি আদা পাবেন বলে আশাবাদী। এ গ্রামের আরো অনেকেই বস্তায় আদা চাষ, সবজি ও ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন এবং ভেড়া পালন করে পরিবারের আয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে বলেন, আগে হাট থেকে রাসায়নিক সার কিনে আনতাম। এখন আমরা জৈব সার তৈরি করে ব্যবহার করি। ফেরোমন ফাঁদ দিয়ে পোকা মারছি, সরকারি সুযোগ সুবিধা পেতে বিভিন্ন অফিসে যোগাযোগ করছি।

উপজেলা কৃষি অফিসার কুমার প্রণয় বিষাণ দাস জানান, ফ্রেন্ডশিপ প্রকল্পের পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কর্তৃক উপকার ভোগীদের আগের মতো প্রশিক্ষণ প্রদানসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। এ অঞ্চলের নারীরা আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছেন। আশা করছি তারা আরও এগিয়ে যাবেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাগরিকা কার্জ্জী জানান, উপজেলায় ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড প্রকল্পের মাধ্যমে এ বছর ২৪০টি পরিবারকে ভেড়া প্রদান করা হয় এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ফলে পরিবারগুলোর ভেড়া পালনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে অধিক আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেকটি ভেড়াকে টিকা এবং কৃমিনাশক বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। চর এলাকা ভেড়া পালনের জন্য উপযুক্ত। তাই ভেড়া পালনের মাধ্যমে চরাঞ্চলের মানুষ স্বাবলম্বী হবে বলে আশা করছি। বিশেষ করে এ অঞ্চলের নারীরা এসব কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে তাদের জীবনমান উন্নয়ন করছেন। এর সুফল রাষ্ট্রও পাবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম