Logo
Logo
×

সুরঞ্জনা

রাষ্ট্রীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: পরিকল্পনামন্ত্রী

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২১, ০৬:১১ পিএম

রাষ্ট্রীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: পরিকল্পনামন্ত্রী

‘নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও একসাথে’ স্লোগানকে সামনে  রেখে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে ২৭ নভেম্বর সকাল সাড়ে দশটা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত নারী-পুরুষ সমতা, নারী-শিশুদের জন্য নিরাপদ ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে  আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট ‘জাতীয় সম্মেলন ২০২১’ অনুষ্ঠিত হয়। 

সহযোগিতায় অক্সফাম এবং গ্লোবাল এফেয়ার্স কানাডা। আলোচ্য সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এম এ মান্নান, এমপি। 

বিশেষ অতিথি আরমা দত্ত এমপি এবং বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র জেলা জজ ও পরিচালক (প্রশিক্ষণ) মো. গোলাম কিবরিয়া। জাতীয় সম্মেলনের সভা প্রধান হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকারকর্মী এবং আমরাই পারি জোটের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল। 

এ ছাড়াও আমরাই পারি জোটের কো-চেয়ারপারসন শাহীন আনাম, অক্সফামের হেড অফ  জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড সোশ্যাল ইনক্লুশেনের মাহমুদা সুলতানাসহ  দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিক, নারী অধিকারকর্মীসহ প্রায় দেড় শতাধিক চেঞ্জমেকার।

সম্মেলনের প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দারিদ্র্য এবং নিরক্ষরতা নির্মূলের মতো আমরা নির্যাতনকে নির্মূল করতে পারিনি। সমাজের সব নির্যাতন এবং অন্যায় দূর করতে সামাজিকভাবে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ের প্রতি অনেক কাজ করতে চান। 

কিন্তু নানা ধরনের বাধা ও প্রতিক‚লতার জন্য সব কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেন না। বাস্তবতার কথা বিবেচনা করে কাজ করতে হবে।

জাতীয় সম্মেলনের প্রথম পর্বে আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট কর্তৃক সম্পাদিত নারীর প্রতি সহিংসতা : আইনের প্রয়োগ, শিখন ও প্রতিবন্ধকতা এবং বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ : আর্থ-সামাজিক চালিকাশক্তি ও আইনের সীমাবদ্ধতা দুটি গবেষণা ও অধ্যয়ন বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। 

মূল আলোচক ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. পারভীন জলি, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাঈদ ফেরদৌস ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফরিদা ইয়াসমীন। 

এ ছাড়াও প্যানেলিস্ট ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি শেহেলা পারভিন, ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. শওকত হোসেন, ইউএনএফপিএর জিবিভি ক্লাস্টার কোঅর্ডিনেটর রুমানা খান, গার্লস নট ব্রাইডস : দি গ্লোবাল পার্টনারশিপ টু অ্যান্ড চাইল্ড ম্যারেজ  সিনিয়র অফিসার ফর এশিয়া, দিব্যা মুকুন্দ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ডিরেক্টর গার্লস রাইট্স কাশফিয়া ফিরোজ এবং ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি লিড তাকবির হুদা।

আমরাই পারি জোটের প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হকের সঞ্চালনায় মূল পর্ব অনুষ্ঠিত হয় বিকাল তিনটায়। সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন অক্সফামের হেড অফ জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড সোশ্যাল ইনক্লুশেন মাহমুদা সুলতানা। 

স্বাগত বক্তব্যে একটি নির্যাতনমুক্ত পরিবেশ কামনা করে আমরাই পারি জোটের কো-চেয়ারপারসন শাহীন আনাম জানান, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও নারীর প্রতি নির্যাতনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতার খর্ব হয়েছে। ভিন্নতা গ্রহণ না করার প্রবণতার ফলশ্রুতিতে বৈষম্য এবং সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। 
আমরা যদি নিজেদের পরিবর্তন না আনি তাহলে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা দিয়ে কোনো কিছুর পরিবর্তন করা সম্ভব না।

সম্মেলনের বিশেষ অতিথি সংসদ সদস্য আরমা দত্ত মুক্তিযুদ্ধের সব শহিদ নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, নারী জন্মগতভাবে চ্যালেঞ্জ টেকার। আশির দশকে রংপুরের প্রান্তিক নারীরা আমাকে বলেছিলেন, গ্রামের স্কুলগুলো ঠিক করতে, মেয়েদের শিক্ষিত করতে। কেননা নারীরা শিক্ষিত হলে নিজেদের সবকিছু থেকে রক্ষা করতে পারবে। 

সিনিয়র জেলা জজ ও বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট পরিচালক (প্রশিক্ষণ) গোলাম কিবরিয়া বলেন, প্রতিবাদী নারী হলে সমাজ থেকে তাকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখা হয়, কটু কথা বলা হয়। আমাদের সামাজিক কাঠামোতে ধর্ষণের কথা লুকাতে চায় যার ফলে অভিযোগ আসতে অনেক দেরি হয়ে যায়। 

এ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার জন্য সামাজিক কাঠামোতে কাজ করতে হবে। মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাদের  জেন্ডার সংবেদনশীলতা প্রতি জোর দিয়ে তিনি নারী ও শিশু সম্পর্কিত আইনগুলো কার্যকরিতা সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কোনো মামলার ক্ষতিপূরণ রায় দেওয়া হলে, ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করা সম্ভব না হলে রাষ্ট্র থেকে সেই নির্যাতিতা নারীর দায়িত্ব যেন নেওয়া হয়।

সভাপ্রধান এবং আমরাই পারি জোটের চেয়ারপারসন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামলা বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে কিন্তু নারীর সম-অবস্থান এখনো তৈরি হয়নি। সভায় উপস্থিত চেঞ্জমেকারদের দেশ গড়ার কাজে যুক্ত থাকতে হবে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের জাতীয় সংগীতের পার্থক্য হচ্ছে আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। তাই একটি অসাম্প্রদায়িক, নির্যাতনমুক্ত, সহিংসতাহীন, সভ্য, সব মানুষের জন্য সমমর্যাদার দেশ গড়ে তোলার কাজ আমাদেরকে করতে হবে।

সম্মেলনে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করায় সারা দেশ থেকে নির্বাচিত ৫ জন ‘আমরাই পারি চেঞ্জমেকারকে’ পুরস্কৃত করা হয়।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম