
প্রিন্ট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২১ পিএম
লিটন দাস কি সত্যিই দুর্ভাগা?
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৬ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন
লিটন দাস অনেকটা এমন চক্রে চলেন—ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রচুর রান করবেন, জাতীয় দলে ফিরবেন, আশা দেখাবেন, ব্যর্থ হবেন এবং বাদ পড়বেন। সব হারিয়ে আবার শূন্য থেকে শুরু। টাইগার এই ব্যাটারের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলে সমালোচনা। কখনও অফ ফর্মের কারণে, কখনও দৃষ্টিকটু শটে আত্মাহুতি দিয়ে। সমালোচনা হয় কাটকাট উত্তর দেওয়ার কারণেও। কিন্তু এই লিটনই ‘কাট’ হয়েছেন শতবার। ফিরেছেনও দোর্দণ্ডপ্রতাপ দেখিয়ে।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে লিটন জানিয়েছেন, তিনি দুর্ভাগা। ব্যাখাও করেছেন। আনলাকি মনে করার পেছনে যুক্তি হিসেবে লিটন টেনেছেন—তিনি যেদিন খুব ভালো খেলেন, সেদিন দল ব্যর্থ হয়। ম্যাচ হেরে যায় বাংলাদেশ। যতটা আলোচনা হওয়া দরকার ততটা হয় না। কথাটি ধ্রুব সত্য। কিন্তু লিটনের ক্রিকেট খেরোখাতা উল্টালে বরং উল্টো পক্ষে মত দেবেন। লিটনকে সৌভাগ্যবান দুর্ভাগাও বলতে পারেন।

সৌভাগ্যবান আবার দুর্ভাগা হয় কিভাবে, জিজ্ঞাসাটি ওঠা স্বাভাবিক। উত্তরও সোজাসাপ্টা। দেশের ক্রিকেটে বাজে খেলার কারণে লিটন যে পরিমাণ সমালোচিত হয়েছেন, তা আর কেউ বোধহয় হয়নি। কতবার বাদ পড়েছেন, ফিরেছেনও। এখানেও নিশ্চয়ই আছে ভাগ্য দেবতার ছোঁয়া। জাতীয় দলের জার্সিতে প্রায় আড়াইশ ম্যাচ খেলে ফেলা লিটন এখনও তরুণদের খাতায়। বাদ পড়েন, হাল ধরতে গিয়ে মুখ ধুবড়ে পড়েন। প্রয়োজনের দিনে লিটন ব্যর্থ হন। লিটন যখন বল শূন্যে উড়িয়ে মাথা নিচু করে ফেরেন, তখন প্রায়ই একটা কথা ভেসে আছে, ‘ভেরি আনলাকি লিটন, ভেরি আনলাকি।’
লিটন যতবার জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন, ততবার দলের অধিনায়ক বা কোচ একটা কথাই বলেছেন, ‘তার বাদ পড়া দুর্ভাগ্যজনক।’ লিটনকে আদপে খুব দরকার। সেই চাওয়া একেবারেই মেটাতে পারেননি বলে লিটন বাদ পড়তেন। বর্তমান সময়ে দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং কৌশলের কথা বলতে গেলে ওপরের দিকে থাকবেন লিটন। তবে ধারাবাহিকতার প্রসঙ্গ উঠতে তলানিতে পৌঁছাতে পারেন। কদিন আগেও দল থেকে বাদ পড়েছেন। বারবার ব্যর্থ হওয়ার কারণে তাকে নিয়ে বাজে রকমের সমালোচনায়ও হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘লিটন ডিসকাউন্ট’ নামে একটা বাজে প্রতিযোগিতাও চলছিল। লিটন সেখানেই পিছিয়ে পড়েন। লিটন নিজেকেই পিছিয়ে নিচ্ছেন বারবার।

তবে লিটন আশা দেখান, স্বপ্ন বাস্তব করতে লড়েন। ধারাবাহিকতার কারণে তাকে দলে রাখা নিয়ে যখন প্রশ্ন ওঠে, তখনই ঘরোয়া ক্রিকেট কিংবা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দাপট দেখান লিটন। জাতীয় দলের দরজাও খুলে যায়। ভাগ্যবান বটে। সাকিব আল হাসানের পর লিটন এখন কুড়ি কুড়ির ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে অন্যতম চয়েজ। তার শর্ট সিলেকশন, আগ্রাসন এবং বড় শট খেলার দক্ষতা বাকিদের চেয়ে আলাদা করেছে। লিটন ডাক পেয়েছিলেন আইপিএল থেকে, পিএসএল থেকেও। কদিন আগে রান খরায় ফেটে চৌচির হওয়া লিটন নিজেকে আবারও যোগ্য প্রমাণ করেছেন। ডিপিএলে দারুণ ফর্ম দেখিয়েছেন। কিন্তু ওই যে সৌভাগ্যবান দুর্ভাগা, সেটিই ঘটেছে।
লিটনকে পিএসএল থেকে ফিরতে হচ্ছে, কোনো ম্যাচ না খেলে। এতদিনের পরিশ্রম সব গেল জলে। লিটন তাই অকপটে জানান, ‘সো স্যাডলি, মাই মিশন ইজ ওভার বিফোর ইন ইভেন বিগান।’ বাংলা তর্মজা এমন—দুঃখজনক ভাবে আমার মিশন শুরুর আগেই থেমে যাচে টাইগার উইকেটকিপার ব্যাটার ধুপ করে পড়ে যান, আবার হুট করেই আকাশে ওড়েন। তাকে নিয়ে আশার গল্প ফাঁদা হয়, লেখা হয় হতাশার আখ্যান। লিটন এসব বুঝে গেছেন।

একবার তাই বলেছিলেন, ‘সমালোচনা—এই জিনিসটা হবে। আমার যেহেতু জীবনটা ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে, ভালো খেললে বাহবা দিবেন বা জনগণ বাহবা দিবে। খারাপ খেললে একই জিনিসটা (প্রতিক্রিয়া) দিবে। তারা চায় আমি পারফর্ম করি। এই জিনিসটা এখন আর আমাকে ভাবায় না।’
সৌভাগ্যবান দুর্ভাগা লিটন পাকিস্তানে গিয়েছিলেন, অনুশীলনেই পেয়েছেন চোট। যা তাকে ছিটকে দিয়েছে, দেশের বিমানেও হয়ত ইতোমধ্যে বসেছেন লিটন। দেশের ক্রিকেটে যার এত অর্জন, যার ব্যাট হাসলে বাংলাদেশও হাসে—তাকে তো ফিরতেই হবে। দুর্ভাগা বলে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার মতো অজুহাত লিটন দেন না। ওটা যদি দিতেন তবে এই লেখায় ‘লিটন’ নামটা থাকত না।