
প্রিন্ট: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৭ পিএম
ব্রাজিল যেন দিশাহীন যাত্রী
দিদা-গারিঞ্চার আত্মারা হয়তো কষ্ট পাচ্ছে ভিনিসিয়ুসদের ‘ফিউজ’ হতে দেখে

পারভেজ আলম চৌধুরী
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৯:১১ এএম

ছবি:সংগৃহীত
আরও পড়ুন
১১ বছর আগে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে চূর্ণ হওয়ার দুঃস্মৃতির কার্নিশে ধুলোর আস্তর জমেছিল। মঙ্গলবার সেই হলুদ কান্না ব্রাজিল ফিরিয়ে আনল বুয়েনস এইরেসে। আর্জেন্টিনার কাছে পেলে-সক্রেটিসের দেশের ৪-১ গোলে লাঞ্ছিত হওয়া শুধুই কি ফুটবলীয় পরাজয়? ৯০ মিনিটজুড়ে অবিরল অবমাননাও নয় কী? ব্রাজিলের হলোটা কী?
১৯৬৪-র পর এই প্রথম এভাবে ম্যারাডোনার দেশের কাছে অপদস্থ হওয়ার পর হলুদ-সবুজ রং আরও বিবর্ণ। পতনোন্মুখ পাঁচবারের বিশ্বজয়ীরা যেন ডুবন্ত টাইটানিক। জীর্ণশীর্ণ তাদের ফুটবল গরিমা। রিও দি জেনিরো, সাও পাওলোর কতশত গৃহকোণে নিঃশব্দে হলুদ অশ্রুপাত হয়েছে, কে জানে। রিভালদো, রোমারিও, রোনালদিনহোরা নিশ্চয় এটা মেনে নিতে কুণ্ঠাবোধ করবেন না যে, ব্রাজিল আর ব্রাজিল নেই! আমাজনের দেশের ফুটবলপিপাসুরা নিজেদের দৈন্য-দীর্ণদশা দেখতে দেখতে পরিশ্রান্ত। দিদা-গারিঞ্চার আত্মারা হয়তো কষ্ট পাচ্ছে ভিনিসিয়ুসদের ‘ফিউজ’ হতে দেখে।
অথচ, এই ব্রাজিল দলটির গোলকিপার, সেন্টার ব্যাক, উইঙ্গারদের নিজেদের তাঁবুতে পেলে বিশ্বের যে কোনো দল বর্তে যাবে। এত ভালো সব খেলোয়াড় নিয়ে কী করে একটা দল এত বাজে খেলতে পারে! অতএব, নিশ্চিতভাবে কোপটা পড়তে যাচ্ছে কোচ দরিভাল জুনিয়রের ওপর। আজ ছাঁটাই হতে পারেন তিনি, ফুটবলের দেশে এমন খবর ভেসে বেড়াচ্ছে। দরিভাল না হয় গেলেন। তারপর? ব্রাজিলের রাডারে ছিলেন কার্লো আনচেলত্তি। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের কোচের ‘না’ ব্রাজিলকে ভাবিয়ে তুলেছে। জিকো, কাকা, বেবেতো, রোনালদোর দেশ মাঠেও কাঁপছে, মাঠের বাইরেও।
ব্রাজিলের অতলস্পর্শী ফুটবল যখন টানেলের শেষেও দিশাহীন যাত্রী, আর্জেন্টিনার মোহনীয় ম্যাজিক নিয়ে তখন চর্চা ফুটবলবিশ্বে। ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচের শুরু থেকে ৪২টি নিরবচ্ছিন্ন পাস মেসিবিহীন দলটির শক্তি, সামর্থ্য ও সুষমার এক মনোরম রূপ। এ মৌসুমে এই পর্যন্ত ২৮৯টি ম্যাচ হয়েছে প্রিমিয়ার লিগে। কিক-অফের পর কোনোটিতেই টানা ১১টির বেশি পাস হয়নি। আর্জেন্টিনার অহম, তারা মেসিকে ছাড়াই এমন ম্যাজিক দেখিয়েছে। মাঠে যেন ধরাবাঁধা কোনো পজিশন নেই হুলিয়ান আলভারেজদের। তারা ছিল আনপ্রেডিক্টেবল। প্রতিপক্ষকে পজিশনচ্যুত করতে এই আর্জেন্টিনা দলটির কোনো জুড়ি নেই। এরপর ফাঁকা জায়গা তৈরি করে আচম্বিৎ দৌড়।
আলভারেজ, ফার্নান্দেজদের অদম্য মনোবল, অফুরন্ত প্রাণশক্তি দেখে লিওনেল মেসি কী ভাবছেন, তিনি বুড়ো হয়ে গেছেন! ২০২৬ জুলাইয়ে বিশ্বকাপ যখন দোরঘণ্টা বাজাবে, মেসি তখন ৩৯-এর চৌকাঠ পেরোবেন। কোচ লিওনেল স্কালোনি কি তখন একটা ডিম বাদে সব তাজা ডিম ঝুড়িতে ভরবেন! আর মেসি স্মৃতির মায়াবী গলিতে ঢুঁ মারবেন বাইশের কাতার খুঁজতে! আপাতত তর্কের ট্রেন চলুক!