
প্রিন্ট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১৪ এএম
সাক্ষাৎকারে সাবেক তারকা ফুটবলার ও কোচ গোলাম সারোয়ার টিপু
‘হামজা তো আর একা খেলবে না, বাকিরা কী করবে’

ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩৫ এএম

ছবি: বাফুফে
আরও পড়ুন
বাংলাদেশকে তিনদিন মাতিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় ফুটবল দলের সঙ্গে ভারতে উড়ে গেলেন হামজা চৌধুরী। ২৫ মার্চ শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাই ম্যাচে লাল-সবুজ জার্সিতে অভিষেকের অপেক্ষায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ইংলিশ ফুটবলার। জাতীয় দলে তার অন্তর্ভুক্তি কতটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বাংলাদেশের ফুটবলে? সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন সাবেক তারকা ফুটবলার ও কোচ গোলাম সারোয়ার টিপু।
প্রশ্ন : জাতীয় দলে হামজা চৌধুরী যোগ দেওয়ায় কতটা উপকৃত হবে দেশের ফুটবল?
গোলাম সারোয়ার টিপু : হামজা খুবই ভালোমানের ফুটবলার, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আমাদের বাকি ১০ জন যারা মাঠে খেলবে, তাদেরও পারফর্ম করতে হবে। এটা তো টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন নয়। ফুটবল দলগত খেলা। ১১ জনের খেলা। আমার সামর্থ্য দিয়ে আমি খেলা শেষ করে দিলাম। হামজা নিজের খেলা খেলল। বাকি ১০ জনেরও সাপোর্ট লাগবে।
প্রশ্ন : আপনার কী মনে হচ্ছে?
গোলাম সারোয়ার : একটি জিনিস দেখে আমি কষ্ট পাচ্ছি। হামজা আসার পর আমাদের পত্রপত্রিকায় যেভাবে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচার করা হয়েছে, তাতে মনে হয় বাংলাদেশ এখনই এশিয়ার সেরা দল হয়ে গেছে। এটা ঠিক না। এতে দর্শকদের প্রত্যাশা বেড়ে যায়। পরে খেলতে না পারলে সমালোচনা আরও বেশি হবে। হামজার খবর প্রচার হচ্ছে, হোক। তবে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেবে, দাঁড়াতে দেবে না-এগুলো বলা ঠিক না। অবিশ্বাস্য কিছু কথাবার্তা বলা হচ্ছে মিডিয়ায়, যা খুবই দুঃখজনক।
প্রশ্ন : দেশের ফুটবলের উন্নতি তো হবে?
গোলাম সারোয়ার : হামজা এসেছে, বাংলাদেশের ফুটবলের ভালো হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে সে তো আর একা খেলবে না। বাকিরা কী করবে? ফুটবল ১১ জনের খেলা। টিম গেম। আগে থেকে এত কিছু লিখলে তার ওপর চাপ তৈরি হবে। আর চাপ তৈরি হলে সে খেলতে পারবে না। তখন কী হবে? হামজা পেশাদার ফুটবলার। হয়তো সে এসব কিছু মনে করবে না। আশা করি, দলের যেন উপকার হয়। সে দলে নিয়মিত হোক। যাতে সে অস্বস্তিতে না পড়ে, সেদিকে আমাদের নজর দেওয়া উচিত।
বিদেশি থাকুক, এতে কোনো আপত্তি নেই। তবে প্রবাসী ফুটবলারদের ওপর নির্ভরশীল হওয়া যাবে না। এখানেও দেখার বিষয়, হামজা কতদিন সার্ভিস দিতে পারে আমাদেরকে
প্রশ্ন : অনেকে বলছেন হামজা আসায় বাংলাদেশের শক্তি বেড়েছে। সেই শক্তির মোকাবিলা করতেই কী সুনীল ছেত্রীকে ভারত তাদের দলে ফিরিয়েছে?
গোলাম সারোয়ার : আমি জানি না। হতে পারে। কোনো প্লেয়ারই অবসরে যেতে চায় না। আমাদের উপমহাদেশে সবাই চায় থাকতে। আমি কোনো কমেন্ট করব না। তবে সুনীল খুবই ভালোমানের ফুটবলার। ভারতীয় দলে সে খুব ভালো সার্ভিস দিয়েছে।
প্রশ্ন : হামজার মতো এমন ফুটবলার আরও বেশি এলে কি দেশের ফুটবল এগিয়ে যাবে?
গোলাম সারোয়ার : হামজা এই মুহূর্তে আমাদের জাতীয় দলের সেরা ফুটবলার। জাতীয় দলের হয়ে যদি প্রবাসীরা খেলতে চায়, ভালো। খেলে যদি দেশকে কিছু দিতে চায়, ভালো। কিন্তু দেশের ভেতরেও ভালোমানের ফুটবলার খুঁজে বের করা উচিত। তাই বলে সুবর্ণচরে খুঁজে তো আর লাভ নেই।
যেখানে খেলা হয় সেখানে প্রতিভা অন্বেষণ করা যায়। দেশে তো ফুটবল খেলাই নাই। যেসব ভেন্যুতে প্রফেশনাল ফুটবল খেলা হয়, তার বাইরের জেলাগুলোতে খেলা হয় না। তাহলে ফুটবলার পাবে কোথায় বাফুফে। আগে ক্লাব কর্মকর্তারা খেলোয়াড় খুঁজে নিয়ে আসতেন। এখন সেটা দেখা যায় না।
প্রশ্ন : বাফুফের কর্তাদের প্রতি আপনার কী বার্তা থাকবে?
গোলাম সারোয়ার : দেশের ফুটবলে উন্নতি করতে চাইলে আমাদের নিয়মিত জেলা ফুটবল লিগ আয়োজন করতে হবে। সেখান থেকে ফুটবলার আনতে হবে। বিদেশি থাকুক, এতে কোনো আপত্তি নেই। তবে প্রবাসী ফুটবলারদের ওপর নির্ভরশীল হওয়া যাবে না। এখানেও দেখার বিষয়, হামজা কতদিন সার্ভিস দিতে পারে আমাদেরকে।