যুগান্তরের অনুসন্ধান
ফাহামেদুলের বিদায়ের নেপথ্যে

মোজাম্মেল হক চঞ্চল
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৯:১১ এএম

ছবি: সংগৃহীত
অনেক আশা নিয়ে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন ফাহামেদুল। ইতালি প্রবাসী এই লেফট উইঙ্গারের আশা ছিল, বাংলাদেশের লাল-সবুজ জার্সি গায়ে খেলবেন। শিলংয়ে ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উঁচুতে তুলে ধরবেন, এমন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন সমর্থকরা। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে রূপ নিয়েছে। দেশে আসতে পারেননি এই প্রতিভাবান ফুটবলার। সৌদি আরব থেকে ইতালি ফিরে যেতে হয়েছে তাকে। জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ফাহামেদুলকে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘তোমাকে দলে নেওয়া হচ্ছে না।’
অথচ, কাবরেরা ফাহা4দুলকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন। বলেছিলেন, ‘ফাহামেদুল লাল-সবুজের নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠবে।’ কী ঘটেছিল কোচ ও ফাহামেদুলের মধ্যে? কেন এত প্রশংসা? আবার কেনইবা ছুড়ে ফেলে দেওয়া? যুগান্তর এ নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে। সৌদি আরব থেকে ফিরে আসা দলের প্রত্যেকের মুখে কুলুপ আঁটা। কেউ মুখ খুলতে চাননি। পাছে কোচের বিরাগভাজন হতে হয়। একজন রাজি হলেন মুখ খুলতে। তবে শর্ত নাম প্রকাশ করা যাবে না। শর্ত মানার প্রতিশ্রুতি দিতেই বের হয়ে এলো ভয়ংকর তথ্য।
সূত্র জানায়, ‘ফাহামেদুল দলে যোগ দেওয়ার পর কোচের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। যেন রাজ্য জয় করে ফেলেছেন। অনুশীলনে কারিশমা দেখিয়েছেন ফাহামেদুল। এটাই ওর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। শুরু হয় সতীর্থদের অসহযোগিতা। গোলকিপার শ্রাবণ ফাহামেদুলকে বল দিচ্ছিলেন না। একবার-দুবার নয়, বেশ কয়েকবার এই ঘটনা ঘটে। মেজাজ হারিয়ে ফাহামেদুল কোচের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কৈফিয়ত চান, এই ধরনের আচরণ কেন? কাবরেরা কিছুই বলেননি। দু-এক কথায় কোচও মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। শেষ পর্যন্ত দল থেকে ফাহামেদুলের বিদায়ের মধ্য দিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটে।’
দলে যোগ দেওয়া লন্ডন প্রবাসী হামজা চৌধুরীর মতো ফাহামেদুলও অসাধারণ ফুটবলার। ইতালির চতুর্থ বিভাগে খেলেন। এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের প্রাথমিক স্কোয়াডে রাখা হয়েছিল তাকে। ২০১৩ সালে প্রবাসী ফুটবলার হিসাবে জামাল ভূঁইয়া প্রথম আসেন। তার পথ ধরে বাংলাদেশে প্রবাসী ফুটবলাররা আসতে শুরু করেন। যার সর্বশেষ সংযোজন হামজা-ফাহামেদুল। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচকে ঘিরে পরিকল্পনায় ছিলেন ফাহামেদুল। কোচ কাবরেরাও তার বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু কাবরেরার বিতর্কিত সিদ্ধান্তে সব কিছু ওলটপালট হয়ে যায়।
কাবরেরার এই সিদ্ধান্ত ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় সমালোচনা। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন দল গঠনে কোচের ভূমিকা নিয়ে। আকস্মিকভাবে ফাহামেদুলের বাদ পড়ায় বিক্ষোভ
কর্মসূচি পালন করেছেন সমর্থকরা। মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর মতিঝিলের মেট্রো স্টেশনের নিচে ও বাফুফে ভবনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন ফুটবলপ্রেমীরা।
বুধবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে হামজারা যখন সংবাদ সম্মেলন করছিলেন, তখন বাইরে সমর্থকরা বিক্ষোভ করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ডাকতে হয়। বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল ক্ষুব্ধ সমর্থকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। কিন্তু আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। ফাহামেদুলকে দলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে অনড় থাকেন সমর্থকরা। তারা চরমপত্র দিয়েছেন, ‘ফাহামেদুলকে দলে না নিলে ভারতগামী বিমান ধরতে যাওয়া টিম বাসকে হোটেলের গেট থেকে বের হতে দেওয়া হবে না।’