পদ্মা সেতুর চেয়েও বেশি খরচে স্টেডিয়াম বানাচ্ছে ইউরোপের ক্লাব

ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ০৭:৩১ পিএম

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তাদের ঐতিহ্যবাহী ওল্ড ট্রাফোর্ড ভেঙে ১,০০,০০০ আসন বিশিষ্ট এক নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। ক্লাবের অংশীদার স্যার জিম র্যাটক্লিফ এই প্রকল্পকে ‘বিশ্বের সেরা ফুটবল স্টেডিয়াম’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বিশ্ববিখ্যাত ব্রিটিশ স্থপতি লর্ড নরম্যান ফস্টারের পরিকল্পিত এই স্টেডিয়াম থাকবে বিশাল এক ‘ছাতা’-এর নিচে, যা দর্শকদের বৃষ্টিতে ভেজার হাত থেকে রক্ষা করবে। এই ছাদকে ধরে রাখবে তিনটি সুবিশাল টাওয়ার, যা ইউনাইটেডের লোগোতে থাকা ত্রিশূলের অনুপ্রেরণায় নির্মিত। পুরো এলাকা জুড়ে থাকবে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এক বিশাল প্লাজা, যা ট্রাফালগার স্কয়ারের দ্বিগুণ আকারের। ‘ওয়েম্বলি ওয়ে’র মতো এক প্রশস্ত রাস্তা স্টেডিয়ামের দিকে যাবে।
স্টেডিয়ামের ভেতরে থাকবে বিশাল স্কোরবোর্ড, তিনতলা বিশিষ্ট জাদুঘর এবং একটি নৌকা-তীরবর্তী রেস্তোরাঁসহ সমর্থকদের জন্য বিশেষ ফ্যান ভিলেজ। নতুন ওল্ড ট্রাফোর্ডকে বিশ্বের বৃহত্তম আবৃত স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এই প্রকল্পটি মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করেছে।
লর্ড ফস্টার এই স্টেডিয়ামকে ‘সমর্থকদের মাঠের সবচেয়ে কাছাকাছি এনে দেয়ার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যেখানে ‘শব্দের প্রতিধ্বনি যেন বিশাল এক গর্জন তৈরি করে’। গ্যারি নেভিলের বর্ণনামূলক ভিডিওতে এই প্রকল্পকে বলা হয়েছে ‘নতুন এক মঞ্চ, যেখানে স্বপ্নগুলো বাস্তবায়িত হবে’। তিনি আরও বলেছেন, ‘১,০০,০০০ সমর্থক একত্রে, যেন এক লাল সমুদ্র… সবচেয়ে জোরালো গর্জন। এক মহিমান্বিত অ্যারেনা, যেখানে অতীত ও ভবিষ্যৎ মিলে যাবে।’
স্যার জিম র্যাটক্লিফ বলেন, ‘আমাদের বর্তমান স্টেডিয়াম গত ১১৫ বছর ধরে অসাধারণ সেবা দিয়েছে, কিন্তু এটি এখন বিশ্বমানের স্টেডিয়ামগুলোর তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে। আমরা আমাদের ঐতিহ্য রক্ষা করেই এক নতুন, আধুনিক স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে চাই।’
বিশেষজ্ঞদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রকল্প বৃহত্তর ম্যানচেস্টারের জন্য ‘লন্ডন ২০১২ অলিম্পিকের চেয়েও বড় এবং ভালো’ হতে পারে। এটি ৯২,০০০ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, অর্থনীতিতে ৭.৩ বিলিয়ন পাউন্ডের অবদান রাখবে এবং প্রতিবছর অতিরিক্ত ১.৮ মিলিয়ন দর্শনার্থী আকৃষ্ট করবে।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তাদের নিজস্ব অর্থায়নে আনুমানিক ২ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করবে, তবে তারা সরকারের কাছ থেকে পরিবহন ও অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সমর্থন চাইবে। এই অর্থ বাংলাদেশি টাকায় ৩২ হাজার কোটি টাকা। যা পদ্মাসেতু তৈরির খরচের চেয়েও নিদেনপক্ষে ১ হাজার কোটি টাকা বেশি।
ক্লাবের কিংবদন্তি কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনও এই প্রকল্পের পক্ষে নিজের মত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সবসময়ই সেরাটার জন্য চেষ্টা করে, আর সেটি মাঠের পাশাপাশি স্টেডিয়ামের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ওল্ড ট্রাফোর্ড আমার জন্য অসংখ্য স্মৃতি বহন করে, কিন্তু আমাদের সাহসী হতে হবে এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন ঘর তৈরি করতে হবে, যেখানে নতুন ইতিহাস লেখা হবে।’
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সিইও ওমর বেরাদা বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হলো বিশ্বের সেরা ফুটবল দলকে বিশ্বের সেরা স্টেডিয়ামে খেলার সুযোগ করে দেয়া। আমরা এখন আরও পরামর্শ ও আলোচনা চালিয়ে যাব, যাতে সমর্থক ও স্থানীয়দের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।’