স্বর্গোদ্যানে অকাল প্রয়াণ
পেসারদের স্বর্গে ঝরে পড়া যত তারা
প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৫, ০৪:১৫ পিএম
-67cac750874ad.jpg)
পাকিস্তান, পেসারদের স্বর্গোদ্যান বলা হয় যাকে। ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, শোয়েব আখতার হয়ে... বর্তমান প্রজন্মের শাহিন শাহ আফ্রিদি ও নাসিম শাহ.. একেকটি নামই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য যথেষ্ট। ক্রিকেটে পেসারদের প্রসঙ্গ উঠলে সেখানে অবধারিতভাবেই থাকবে এই নামগুলো। যা যেকোনো প্রতিপক্ষের জন্যই রীতিমতো হুমকি স্বরূপ। পাকিস্তান কালে কালে এমন বহু পেসার উপহার দিয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটকে। যারা বছরের পর বছর ধরে শাসন করেছে বিশ্ব ক্রিকেট।
এতো গেল মুদ্রার এক পিঠ। উল্টো পিঠটাও আছে। আলোর আড়ালে যেমন লুকিয়ে থাকে অন্ধকার; তেমনি পেসারদের স্বর্গোদ্যানেও বিশ্ব ক্রিকেট দেখেছে বহু অকাল প্রয়াণ। পেস স্বর্গে ঝড়ে পড়েছে বহু তারা। যাদের সম্ভাবনা ছিল, একটু যত্ন নেওয়া গেলেই হয়তো মহীরুহে পরিণত হতে পারত। ফুলে-ফলে সুশোভিত করতে পারত বিশ্ব ক্রিকেট। অথচ, তারা এখন মানুষের মনে রয়ে গেছেন এক আক্ষেপ আর হাহাকারের নাম হয়ে।
পাকিস্তানের সেই সব পেসারদের মধ্যে অন্যতম মোহাম্মদ আসিফ, মোহাম্মদ আমির, সাব্বির আহমেদ, আকিভ জাভেদ, হাসান আলী, মোহাম্মদ সামি, সোহেল তানভীর, মোহাম্মদ ইরফান।
এদের মধ্যে একটা অংশ তাদের ক্যারিয়ার ধ্বংসের পেছনে নিজেরাই দায়ী। স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারির মধ্যে জড়িয়ে সমালোচিত হয়েছেন। কেউ বা ইনজুরির কারণে ক্যারিয়ার লম্বা করতে পারেননি। তবে এর মধ্যে আনেকেই আছেন যারা পাকিস্তানের ক্রিকেট রাজনীতির নির্মম শিকার। যারা চাইলেই হয়তো তাদের ক্যারিয়ারটা আরও বড় করতে পারতেন। তবে বোর্ডের সঙ্গে দ্বন্দ্বে বা নির্বাচকদের পছন্দের তালিকায় না থাকায় জাতীয় দলে থিতু হতে পারেননি।
মোহাম্মদ আসিফ
পাকিস্তানের পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে আক্ষেপের এক নাম। যাকে ওয়াসিম আকরামের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে ভাবা হতো। দুই দিকেই সমানভাবে বল সুইং করাতে পারতেন। প্রতিপক্ষের ব্যাটাররা রীতিমতো বেঁচে যেত আসিফকে মোকাবেলা করতে না হলে। অথচ, সেই তিনি স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে নিজের ক্যারিয়ারটাকে বলি দিয়েছেন ২০১০ সালে। জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পেরেছেন মোটে ২৩টি টেস্ট ও ৩৮টি ওয়ানডে। যেখানে তার উইকেট ১০৬ ও ২৯টি।
মোহাম্মদ আমির
২০১০ সালে স্পট-ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে আসিফের সঙ্গে একই ঘটনায় জড়িয়ে যায় আমিরের নাম। পরবর্তীতে আসিফ ফিরতে না পারলেও আমির অবশ্য কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত করেছেন পাকিস্তানকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতিয়ে। তাই বাকিদের তুলনায় আমিরের কথা একটু আলাদাভাবেই মনে রাখবে পাকিস্তানের সমর্থকরা। তবে যেই ক্যারিয়ারটা পেতে পারতেন তিনি, সেটা কি পেয়েছেন? সেই প্রশ্ন হয়তো আর সবার থেকে আমিরকেই বেশি কষ্ট দেবে?
শাব্বির আহমেদ
পাকিস্তানের হয়ে দ্রুত সময়ে টেস্টে ৫০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়ে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছিলেন শাব্বির আহমেদ। ৬ ফুট ৫ ইঞ্চির বিশাল দেহ নিয়ে তিনি যখন বল নিয়ে ছুটতেন তা প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের জন্য ছিল আতঙ্কের। ওয়াকার ইউনিসের পর ১০ টেস্টে ৫০ উইকেটের মাইলফলক গড়ে ফেলা শাব্বির। কিন্তু পরবর্তীতে বোলিং অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় অকালেই ঝড়ে যেতে হয় তাকে।
আকিব জাভেদ
ওয়াসিম-ওয়াকারের ছায়া হয়ে ছিলেন আকিব। তাকে ভাবা হচ্ছিল পাকিস্তানের পরবর্তী প্রজন্মের সেরা পেসার হবেন। তবে ১৯৯০ এর দশকে ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ায় শেষ হয়ে যায় তার ক্যারিয়ার। পাকিস্তান হারায় একজন পেসারকে।
ইহসানুল্লাহ
একজন প্রতিশ্রুতিশীল পেসার। তরুণ প্রজন্মের পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময়ী ভাবা হতো তাকে। তবে সেই তিনি এখন মাঠের বাইরে। অবশ্য এতে তার যত না দায় তারচেয়ে বেশি দায়ী বোর্ড। কনুইয়ে একটি ভুল অস্ত্রোপচারের কারণে তার ক্যারিয়ারই এখন ধ্বংসের পথে। সেই তিনি আবার কবে ফিরবেন আর ফিরলেও আগের মতো প্রভাব বজায় রাখতে পারবেন কিনা সেটা বলে দেবে সময়।
হাসান আলী
পাকিস্তানের পেস শূন্যতা দূর হয়েছিল হাসান আলী আসায়। পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের অন্যতম নায়ক তিনি। সেই তিনি এখন জাতীয় দলের ছায়া সঙ্গী। চোটের কারণে মাঝে ছিটকে পড়ে ছিলেন। এরপর জাতীয় দলে ফিরলেও সেই সুবিধা করতে পারছেন না তিনি।
এছাড়া মোহাম্মদ সামি, সোহেল তানভীর, মোহাম্মদ ইরফানরা চোটের কারণে মাঠের বাইরে গেলেও পরবর্তীতে বোর্ডের সঙ্গে নানা বিষয়ে বনিবনা না হওয়ায় আর ফিরতে পারেননি। বোর্ডের অযত্ন আর অবহেলায় অকালেই ঝড়ে পড়তে হয়েছে তাদের। যে কারণে বিশ্ব ক্রিকেট তাদের যেভাবে প্রত্যাশা করেছিল তারা ঠিক সেই অর্থে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। যে কারণে সমর্থকদের কাছে আক্ষেপের নাম হয়েই হয়তো কাটাতে হবে তাদের। বাকিটা জীবন কাটাতে হবে ওয়াকার-ওয়াসিমদের ছায়া হয়ে।