রাফিনিয়া-শেজনিতে ভর করে ‘গেরো’ খুলল ১০ জনের বার্সা

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৫, ০৫:১১ এএম

ম্যাচের তখন সবে তিন ভাগের একভাগ শেষ। পাউ কুবারসি তখনই করে বসলেন এক ফাউল, দেখলেন সরাসরি লাল কার্ড। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নকআউটে বার্সার শেষ কয়েক বছরের ইতিহাস মাথায় থাকলে পরের স্ক্রিপ্টটা আপনার ততক্ষণে মনে মনে পড়ে ফেলার কথা। বার্সেলোনা চাপের মুখে নুইয়ে পড়বে, এতদিন এমনটাই ছিল নিয়তি।
তবে স্পোর্তিং লিসবন স্টেডিয়ামে পরে যা ঘটল, তা মনে হচ্ছিল অভূতপূর্ব। ১০ জনের দল নিয়ে যা হওয়ার কথা, হয়েছেও তাই— লিসবন একাধিক গোলের সুযোগ পেয়েছে। তবে ম্যাচের শেষে স্কোরলাইনটা দেখাচ্ছে বার্সেলোনার পক্ষে ১-০। তার কৃতিত্বের যাবে ভয়চেখ শেজনি আর রাফিনিয়ার ঝুলিতে। একের পর এক শট ঠেকিয়ে গেছেন শেজনি, ওপাশে সুযোগ এসেছে কম, তারই একটা কাজে লাগিয়ে ফেলেছেন রাফিনিয়া।
বার্সেলোনা আর বেনফিকা চলতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আরও একবার মুখোমুখি হয়েছে। সপ্তম ম্যাচ দিবসে খেলাটা হয়েছিল ‘অ্যাবসলিউট সিনেমা’, বার্সা জিতেছিল ম্যাচটা ৫-৪ গোলে। কিছুক্ষণ আগে সেই একই ভেন্যুতে যা হলো, তাও সিনেমার চেয়ে কম কীসে? যদিও এবার ‘সিনেমার’ স্ক্রিপ্টটা হলো একেবারে আলাদা।
ম্যাচের একেবারে শুরু থেকে আজকের ‘সিনেমা’র শুরু। তখন ম্যাচে ‘ছিলেন’ দুই গোলরক্ষকই। বার্সেলোনা সুযোগ পেল, রবার্ট লেভান্ডভস্কি, দানি অলমো, লামিন ইয়ামালদের প্রত্যেকের শট ৩ সেকেন্ডের ভেতর ঠেকালেন লিসবন গোলরক্ষক আনাতোলি ত্রুবিন। এরপর শেজনিকেও একাধিক শট ঠেকাতে হলো।
তবে পরিস্থিতিটা বদলে গেল ভেঙ্গেলিস পাভলিডিসকে কুবারসি ফাউল করে বসলে। ম্যাচের তখনও ৭০ মিনিটের মতো বাকি, তখন ১০ জনের দলে পরিণত হওয়ার পর বার্সেলোনা প্রমাদ গুণছিল বাজে কিছুর।
হানসি ফ্লিকের বার্সা যে অন্য ধাতে গড়া, তার প্রমাণটা মিলল এরপর। ডিফেন্ডারের লাল কার্ড সামলে নিতে আধঘণ্টার আগেই বদল আনলেন কোচ ফ্লিক, অলমোর জায়গায় আনলেন রোনাল্ড আরাউহোকে। বার্সেলোনা সামলে নিল, যেভাবে নেওয়া যায় আরকি।
প্রথমার্ধে শট হজম করল বটে, তবে ডিফেন্ডাররা তাদের কাজটা ঠিকঠাক করছিলেন। এরপরও যদি শট ছুটে যেত, শেজনি ছিলেন অতন্দ্র প্রহরী হয়ে। পুরো ম্যাচে বার্সেলোনা ২৮টা শট হজম করেছে। তার মধ্যে ৮টা ছিল লক্ষ্যে, সবকটা শেজনি ঠেকিয়েছেন শক্ত হাতে। ২০০৪ সালের পর এক চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে এতগুলো শট হজম করার পরও গোল হজম করেনি বার্সা, কৃতিত্বটা পোলিশ গোলরক্ষকই পাবেন।
তবে এত কিছুর পরেও ম্যাচটা বার্সেলোনা জিতেছে রাফিনিয়ার গোলে। ৬১তম মিনিটে বেনফিকা রক্ষণের ভুল থেকে বল পেয়ে বক্সের বাইরে থেকে নিলেন শট, তা ত্রুবিনকে ফাঁকি দিয়ে জড়াল জালে। প্রথমার্ধে একটা দারুণ সুযোগ এসেছিল তার সামনে, ত্রুবিন এগিয়ে আসছিলেন, বলটা ছিল তার পায়ে, তার ডানে ছিলেন লেভান্ডভস্কি আর ইয়ামাল, তবে তিনি ইয়ামালকে দিতে গিয়ে সহজ সুযোগটা হারান। ৬১ মিনিটের ওই গোলে যেন তারই প্রায়শ্চিত্ত করলেন রাফিনিয়া, তাতে তার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ গোলসংখ্যা দাঁড়াল ৯ ম্যাচে ৯ গোলে। শেষ গোলটাই বৃহস্পতিবার রাতে বার্সেলোনা আর বেনফিকার পার্থক্য গড়ে দিল।
না, ভুল বলা হলো হয়তো! একটা গোল তো নয়, দুই দলের পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন শেজনি; সঙ্গে ম্যাচসেরা পেদ্রি গনজালেসকে ভুলবেন কী করে? ১০ জনের দল নিয়েও বার্সেলোনা ম্যাচে মাঝমাঠের দখলটা রেখেছে নিজেদের কাছে, তা তো তার কল্যাণেই! সে দখলটা না থাকলে আরও কত শট হজম করতে হতো, কে জানে!
সে যাই হোক, বার্সেলোনা তাতে একটা গেরোও খুলে ফেলেছে। ৭০ মিনিটেরও বেশি সময় ১০ জনের দল নিয়ে খেলে ক্লিনশিট আর জয় নিয়ে বেরোবার রেকর্ড চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নেই একটিও। রাফিনিয়া-শেজনি-পেদ্রিদের কল্যাণে বার্সা আজ সে রেকর্ডটা গড়ে ফেলল।
গেরো ছিল আরও একটা। ২০১৬ সালের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলয় নিজেদের প্রথম ম্যাচে আর জিততে পারেনি বার্সেলোনা। সে গেরোটা খোলা হলো লিসবনে। ১০ বছরের পুরোনো আরও একটা গেরো আছে, এমন এক আত্মবিশ্বাস যোগানো জয়ের পর মৌসুম শেষে নিশ্চয়ই সে গেরোটাও খুলতে চাইবেন কোচ হানসি ফ্লিক আর তার শিষ্যরা!