Logo
Logo
×

খেলা

রাওয়ালপিন্ডিতে ২০২৪ নয়, ফিরল ২০০৩

Icon

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৩২ পিএম

রাওয়ালপিন্ডিতে ২০২৪ নয়, ফিরল ২০০৩

এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিটা কেমন কাটল বাংলাদেশের? প্রশ্নটা করা হলে সর্বসম্মতিক্রমে উত্তরটা হবে– খুবই বাজে। তবে শেষ দিন পর্যন্ত প্রাপ্তির ঝুলিটা ছিল শূন্য। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি যাত্রার একেবারে শেষ দিনে এসে সে শূন্য ঝুলিতে একটা সবেধন নীলমণি পয়েন্ট যোগ হলো। তবে সেটা নিজেদের যোগ্যতায় নয়, বাংলাদেশের ‘লয়্যাল’ বন্ধু বৃষ্টির কল্যাণে।

আইসিসি ইভেন্টের ইতিহাসে বাংলাদেশের সেরা পারফর্ম্যান্স কী? প্রশ্নের জবাবে প্রশ্নের জবাবে অবধারিতভাবেই আসবে ২০১৫ বিশ্বকাপ আর ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির কথা। সে দুই বারই দলটা খেলেছিল যথাক্রমে কোয়ার্টার আর সেমিফাইনালে। পাকেচক্রে ২০০৭ বিশ্বকাপের কথাও চলে আসতে পারে। ভারতকে হারিয়ে সুপার এইটে খেলাটাও কি কম কৃতিত্বের?

তবে এমন অর্জনে বাংলাদেশের পাশাপাশি বৃষ্টির অবদানটা ভুলে গেলেও কিন্তু চলবে না। ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ইংল্যান্ডকে টপকে গিয়েছিল যে তিন পয়েন্টের ব্যবধানে, তার একটা খুচরো পয়েন্ট এসেছিল এই বৃষ্টি থেকে। সেবার ব্রিসবেনের গ্যাবায় ভবিতব্য চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটায় একটা বলও গড়াতে পারেনি মাঠে। সে একটা পয়েন্টই তো দলকে এনে দিয়েছিল দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার বিশ্বাস!

Bangladesh players have a chat near the outfield at the Gabba, Australia v Bangladesh, Group A, World Cup 2015, Brisbane, February 21, 2015

সেবার নাহয় বৃষ্টির অমন সরাসরি হাত ছিল না, পরের বার কিন্তু ঠিকই ছিল। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কেনিংটন ওভালে আবারও প্রতিপক্ষ সেই অস্ট্রেলিয়া। এবারও বৃষ্টির বাগড়া। তবে এবার বিষয়টা যতটা না স্বাভাবিক, তার চেয়ে বেশি ছিল পরিকল্পিত। ১৮২ রানে অলআউট হওয়ার পর অধিনায়ক মাশরাফি বৃষ্টির কথাটা মাথায় রেখে সময়ক্ষেপণ করছিলেন পেসারদের ব্যবহার করে, যে সময়ে নিদেনপক্ষে ২০-২২ ওভার শেষ হয়ে যাওয়ার কথা, সে সময়ে ওভার করা হলো মোটে ১৬টি। ফলে বৃষ্টি যখন নামল, নির্ধারিত কোটা শেষ হলো না, যে কোটা পূরণ হলে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতি আমলে আসে। এবারও বাংলাদেশ পেল মহামূল্য এক পয়েন্ট। যা খুলে দেয় দলের সেমিফাইনাল স্বপ্নের দুয়ার।

Rain threatened Australia's Champions Trophy chances, but not Steven Smith's bat, Australia v Bangladesh, Champions Trophy 2017, The Oval, London, June 5, 2017

২০০৭ সালের বিশ্বকাপেও বৃষ্টির আশির্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেবার বারমুডার বিপক্ষে ম্যাচটা হয়তো এমনিতেও হাবিবুল বাশারের দলই জিতত, তবে ম্যাচটা কার্টেল ওভারে নেমে আসায় তা সহজ হয়েছে আরও। এই তিন আসর ফিরে দেখলে একটা বিষয় নিশ্চিত হয়, বাংলাদেশ যখনই ‘বড়’ অর্জন করেছে কিছু, তাতে বৃষ্টির আশির্বাদ প্রতিবারই পেয়েছে।

The groundstaff bring on the covers once more, Bangladesh v Bermuda, Trinidad, March 25, 2007

বৃষ্টি বাংলাদেশকে লজ্জার হাত থেকেও বাঁচিয়েছে বহুবার। দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ স্মৃতি ২০০৩ সালের ওই আসরে। সেবার দলটা ১৪ দলের ভেতর ১৪তম যে হয়নি, তাতে অবদানটা ছিল বৃষ্টির। সে আসরে বাংলাদেশ কানাডা আর কেনিয়ার কাছেও হেরেছিল। সে কারণে ১৪তম স্থানে চলে যাওয়ার শঙ্কাটা পেয়ে বসেছিল। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বেনোনিতে ম্যাচটা বৃষ্টিতে ভেসে যেতেই বাংলাদেশ সে শঙ্কা থেকে মুক্তি পায়। ঝুলিতে জমা পড়ে দুটো পয়েন্ট। ১৩তম দল হয়ে শেষ করে দলটা। 

World Cup, 2003 - Bangladesh v West Indies at Benoni, 18 February 2003

২০২৫ সালে এসে সেসব গল্প আবারও ফিরে ফিরে দেখা, কারণ আজকের পরিস্থিতি। রাওয়ালপিন্ডিতে বৃষ্টিতে ভেসে গেছে বাংলাদেশ পাকিস্তানের ম্যাচটা। 

শহরটার সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের যোগটা বেশ ভালো। এইতো গেল বছর বাংলাদেশ এই রাওয়ালপিন্ডিতেই ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছিল স্বাগতিকদের। এবার যখন রাওয়ালপিন্ডিতেই খেলা পড়ল দলের, তখন ধারণা করা হচ্ছিল সে ইতিহাস বুঝি অনুপ্রেরণা দেবে দলকে। তবে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের পর সে ধারণা উবে গেছে।

পাকিস্তানের বিপক্ষে এই ম্যাচের আগে তাই শঙ্কা ছিল এমন কিছুর, যার স্বাদ বহু বছর ধরে পায়নি বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বাজে দল হয়ে আসর শেষ করার শঙ্কা। পাকিস্তানের কাছে হেরে বসলেই সে শঙ্কা বাস্তবে রূপ নিত।

‘লয়্যাল’ বন্ধু বৃষ্টির কল্যাণেই সে শঙ্কা উবে গেল। বৃষ্টির পূর্বাভাস আগে থেকেই ছিল। সেটা সত্যি হলো আজ স্থানীয় সময় সকাল ১১টা নাগাদ। সে বৃষ্টির তোড় ক্রমে বেড়েই গেল। শেষমেশ স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৩টা নাগাদ ম্যাচটা পরিত্যক্তই হলো। 

সঙ্গে সঙ্গে ২২ বছর আগের বেনোনির স্মৃতি নেমে এল পিন্ডিতে। ভাগাভাগির পয়েন্ট পেয়ে তলানিতে নেমে যাওয়া ঠেকানোর স্মৃতি। বিস্মরণযোগ্য এক টুর্নামেন্ট থেকে বাংলাদেশ তাই খানিকটা ‘স্বস্তি’ নিয়েই দেশে ফিরছে বৈকি!

ঘটনাপ্রবাহ: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫


আরও পড়ুন

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম