Logo
Logo
×

খেলা

যে ৪ কারণে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ব্যর্থ পাকিস্তান

Icon

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৩৪ পিএম

যে ৪ কারণে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ব্যর্থ পাকিস্তান

প্রায় ৩ দশক পর পাকিস্তান কোনো আইসিসি ইভেন্টের আয়োজক বনেছিল। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এই টুর্নামেন্ট মাঠে গড়ালেও তাদের আনন্দটা টিকল না বেশিক্ষণ। টুর্নামেন্টের এক সপ্তাহ না যেতেই যে দলটার বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে। 

নিউজিল্যান্ডের কাছে ৬০ রানের হার দিয়ে যাত্রাটা শুরু করেছিল মোহাম্মদ রিজওয়ানের দল। এরপর ভারতের কাছে ৬ উইকেটের হার তাদের নিয়ে যায় খাদের কিনারে। তবু গাণিতিক সমীকরণের মারপ্যাঁচে একটা সুযোগ ছিল তাদের। কিন্তু সোমবার বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে বসলে সেটাও শেষ হয়ে যায়।

পাকিস্তানের ম্যাচ আরও একটা বাকি আছে। বৃহস্পতিবার স্বাগতিকরা বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের শেষ ম্যাচ খেলবে। তবে টুর্নামেন্টে টিকে থাকার আর কোনো সুযোগ নেই তাদের। 

তাদের এই হতাশাজনক যাত্রার পেছনে আছে অন্তত ৪টি কারণ। কী সেগুলো? চলুন দেখে নেওয়া যাক—

সাইম আইয়ুবের চোট
পাকিস্তানের অধিনায়ক হিসেবে মোহাম্মদ রিজওয়ানকে গত বছরের অক্টোবর মাসে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার নেতৃত্বে দল অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে ২২ বছর পর প্রথমবারের মতো দেশটিতে সিরিজ জিতেছিল। এ ছাড়া, তারা জিম্বাবুয়েতেও জয় পেয়েছিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো তাদের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করেছিল।

দলটা এমন পারফর্ম্যান্স উপহার দিচ্ছিল মূলত সাইম আইয়ুবের ব্যাটে চড়ে। গত নভেম্বরে অভিষেকের পর থেকে ৯ ইনিংস খেলে তিনি করেছেন ৫১৫ রান, সেঞ্চুরি ৩টি, ফিফটি আছে ১টি। তবে ইনিংসের শুরুতে তার আগ্রাসী ব্যাটিং দলের পারফর্ম্যান্সের সুরটা বেধে দিত। সে তিন সিরিজে দারুণ পারফর্ম্যান্সের নিয়ামক হয়ে উঠেছিল বিষয়টা।

তবে এরপরই বাধে বিপত্তি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি টেস্টে গোড়ালিতে চোট পান। তাকে দলে পেতে পাকিস্তান তাদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল ঘোষণা করতে দেরিও করেছিল, অপেক্ষা করেছিল তার ফিট হওয়ার জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি সুস্থ হতে পারেননি। ফলে তাকে ছাড়াই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আসতে হয় দলটাকে।

এরপরও বিপদ আরও বাড়ে আরেক ওপেনার ফখর জামানের চোটে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই তিনি চোট পেয়ে বসেন। এরপর তিনি সে ম্যাচে খেললেও টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যান ম্যাচ শেষেই। যা পাকিস্তানকে পিছিয়ে দিয়েছে বেশ।

পেসারদের ব্যর্থতা
টুর্নামেন্টের আগে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা ধরা হচ্ছিল পেস আক্রমণকে। তবে তাদের সে নন্দিত পেস আক্রমণ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ছিলেন পুরোপুরি ম্লান। শাহীন আফ্রিদি, নাসিম শাহ ও হারিস রউফ— এদের সবারই ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা আছে বেশ। কিন্তু এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে ত্রয়ীর কেউই পারফর্ম করতে পারেননি ঠিকঠাক।

টেস্ট সিরিজে বিশ্রামে দেওয়া হয়েছিল তাদের তিনজনকে। তবে এরপরও তারা ফিটনেস ফিরে পাননি ঠিকঠাক। যার ছাপ এবারের আসরেও দেখা গেছে। ডেথ ওভারগুলোতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলেন সবাই।

তিনজনের বোলিং বিশ্লেষণটাই দেখুন। নিউজিল্যান্ড ম্যাচে শাহীন ১০ ওভারে রান দিয়েছেন ৬৮, উইকেট পাননি; নাসিম ২ উইকেট পেলেও রান দিয়েছেন ৬৩; হারিস রউফের অবস্থা আরও বাজে ছিল সে ম্যাচে, ২ উইকেট পেয়েছিলেন ৮৩ রান খরচায়। ভারত ম্যাচে শাহীন ২ উইকেট পেয়েছেন ৭৪ রানে, হারিস ৭ ওভারে দিয়েছিলেন ৫২ রান, এদিকে নাসিম শাহ ৮ ওভারে ৩৭ রান দিলেও উইকেটের দেখা পাননি।

তিনজনের এমন বিবর্ণ বোলিংয়ের খেসারতটা দিয়েছে পাকিস্তান। প্রথম দুই ম্যাচে হেরে বিদায় নিয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকেই।

ভুল স্কোয়াড নির্বাচন
টুর্নামেন্টের আগে একাধিক স্পিনার দলে নেওয়ার দাবি উঠেছিল সাবেকদের পক্ষ থেকে। তবে পাকিস্তানের নির্বাচকরা তা উপেক্ষা করে স্কোয়াডে মাত্র একজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে আবরার আহমেদকে দলে নেন।

তারা দলে পার্ট-টাইম স্পিনার সালমান আগা ও খুশদিল শাহকে রেখেছিলেন, কিন্তু দুই ম্যাচে তারা মাত্র একটি উইকেট নিতে পেরেছেন।

পাকিস্তান দলে কোনো নির্ভরযোগ্য ওপেনার না রেখে ফর্মহীন বাবর আজমকে ওপেনিং করানোর ঝুঁকি নিয়েছিল। ফখর জামান ছিটকে যাওয়ার পর ইমাম-উল-হককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, কিন্তু তিনি ভারতের বিপক্ষে মাত্র ১০ রান করতে পারেন।

অপ্রত্যাশিতভাবে পাকিস্তান স্কোয়াডে খুশদিল শাহ ও ফাহিম আশরাফকে অন্তর্ভুক্ত করে, যারা বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি লিগে ভালো খেললেও ওয়ানডে ফরম্যাটে দীর্ঘদিন পর দলে ফিরেছিলেন। ফাহিম আশরাফ শেষবার ওয়ানডে খেলেছিলেন দুই বছর আগে এবং খুশদিল শাহ তিন বছর আগে। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও বিশ্লেষক রশিদ লতিফ একে ‘রাজনৈতিক নির্বাচন’ বলে অভিহিত করেন এবং বাহ্যিক প্রভাবকে দোষারোপ করেন।

‘মান্ধাতার আমলের ক্রিকেট’
পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও জনপ্রিয় অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি পাকিস্তানকে ‘মান্ধাতার আমলের ক্রিকেট’ খেলার জন্য তীব্র সমালোচনা করেন।

শহীদ আফ্রিদি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘২০২৫ সালে অন্য দলগুলো যখন আধুনিক ও আগ্রাসী কৌশল গ্রহণ করেছে, তখন পাকিস্তান ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকের স্টাইলে ক্রিকেট খেলেছে। অতিরিক্ত ডট বল খেলার প্রবণতাও আমাদের ব্যাটিংকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’

ভারতের বিপক্ষে ২৪১ রানে অলআউট হওয়ার (৪৯.৪ ওভারে) সময় পাকিস্তান ১৫২টি ডট বল খেলেছে, যার মধ্যে প্রথম ছয় ওভারে ২৮টি বল স্কোরহীন ছিল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৬০ রানে (৪৭.২ ওভারে) অলআউট হওয়ার ম্যাচে তারা ১৬২টি ডট বল খেলেছে।

তিনি জানান পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের আধুনিক ক্রিকেট খেলার মানসিকতাই নেই। তার ভাষ্য, ‘পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের মানসিকতা আধুনিক ক্রিকেটের সাথে মেলে না। আমাদের পুরো সিস্টেম বদলে ফেলা দরকার, যেন আমরা আগ্রাসী মানসিকতার খেলোয়াড় তৈরি করতে পারি।’

ঘটনাপ্রবাহ: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫


আরও পড়ুন

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম