মিয়াঁদাদের ছক্কা থেকে ফখরের সেঞ্চুরি: যুগ যুগ ধরে পাক-ভারত দ্বৈরথ
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:০৯ পিএম
-67b9a25d8f8a4.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
ভারত-পাকিস্তান; একই মানচিত্রের আলাদা দুই ভূখণ্ড, দুই নিকট প্রতিবেশী। অথচ, সীমান্ত সংঘাতসহ রাজনৈতিক নানা ইস্যুতে বিপরীতমুখী অবস্থানে দুদেশ। সংস্কৃতি দুই দেশের মানুষরা জন্মের পর বেড়েই ওঠে একে অন্যকে শত্রু হিসেবে জেনে। মাঠের ক্রিকেটেও যার আঁচ পড়তে দেখা গেছে বহুবার। দুদলের ক্রিকেটারদের যুদ্ধংদেহী মনোভাব এই লড়াইকে দিয়েছে ভিন্ন এক মাত্র। তাই যখনই দুদলের ম্যাচ সামনে আসে, তখন গোটা বিশ্বই তাকিয়ে থাকে এই ম্যাচের দিকে।
কালের আবর্তে এখন আর তেমন উত্তেজনা ছাড়ায় না ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। তবে এখনও ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই ভিন্ন এক লড়াই; আর সেই প্রত্যাশা নিয়েই টেলিভিশনের সামনে বসে সমর্থকরা। তুমুল উত্তেজনাকর ম্যাচটি আগামীকাল আবারও মাঠে গড়াচ্ছে। বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টায় দুবাইয়ে মুখোমুখি হবে ভারত-পাকিস্তান। যা দেখতে এখন মুখিয়ে বিশ্বের কোটি ক্রিকেটপ্রেমি।
বর্তমানে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের একছত্র দাপট থাকলেও একটা সময় ছিল এর উল্টো। যা দু’দলের পরিসংখ্যানে এখনও স্পষ্ট। দুদলের মুখোমুখি ১৩৫ ওয়ানডেতে ভারতের ৫৭ জয়ের বিপরীতে পাকিস্তানের জয় ৭৩ ম্যাচে। তবে এই পরিসংখ্যানের সঙ্গে বর্তমান সময়ের তফাৎ আছে ঢের। পরিসংখ্যান বলছে সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানকে বলেকয়ে হারিয়েছে ভারত।
ভারতের বিপক্ষে সবশেষ পাকিস্তানের জয় ৮ বছর আগে, ২০১৭ সালে। অবশ্য সেই জয়টা এসেছিল এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মঞ্চেই। তাও আসরের ফাইনালে। যা আগামীকাল ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে নিশ্চিতভাবেই দলটির জন্য বাড়তি অনুপ্রেরণা হতে পারে।
জাভেদ মিয়াঁদাদের ছক্কা থেকে ফখরের সেঞ্চুরি এই লড়াইটাকে এখন জিইয়ে রেখেছে। সেই লড়াইটাকে এখন নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বটা রিজওয়ান-শাহিন আফ্রিদিদের। তার আগে দেখে নেওয়া যাক অতীতে ভারত-পাকিস্তানের কিছু স্মরণীয় ওয়ানডে ম্যাচের মুহূর্ত।
মিয়াঁদাদের শেষ বলে ছক্কা (১৮ এপ্রিল, ১৯৮৬ - শারজাহ)
শারজাহর মরুভূমিতে ভারতের বিপক্ষে জাভেদ মিয়াঁদাদের শেষ বলে ছক্কাটি তর্কাতীতভাবে দুই দলের মধ্যে সবচেয়ে নাটকীয় ওয়ানডে জয়ের একটি। কারণ ওই ম্যাচে পাকিস্তান ১ উইকেটের জয় পায় মিয়াঁদাদের ওই ছক্কায়।
সেই ম্যাচে পাকিস্তানের জয়ের জন্য ২৪৬ রান প্রয়োজন ছিল। ৬১ রানে ৩ উইকেট হারালে উইকেটে আসেন মিয়াঁদাদ। শেষ পর্যন্ত ১১৪ বলে ১১৬ রান করে ইনিংসের শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে জেতান তিনি। যেখানে শেষ বলে ম্যাচ জিততে পাকিস্তানকে ৪ রান করতে হতো।
ভারতীয় পেসার চেতন শর্মার ফুল টস বলে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে পাকিস্তানকে স্মরণীয় এক জয় এনে দেন মিয়াঁদাদ। যা এখন পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের স্মরণীয় জয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। যার জন্য পরবর্তীতে একটি সোনার তলোয়ার উপহার পেয়েছেন মিয়াঁদাদ।
ইমরান খানের দংশন (২২ মার্চ, ১৯৮৫ - শারজাহ)
ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ইমরান খানের সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ১৪ রানে ৬ উইকেট। শারজাহ হওয়া সেই ম্যাচে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপকে একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন সাবেক এই অধিনায়ক। তার বোলিং তোপে সেই ম্যাচে ভারত অলআউট হয়ে গিয়েছিল মাত্র ১২৫ রানে।
তবে অবাক করার বিষয় হলো সেই ম্যাচেও জিততে পারেনি পাকিস্তান। সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ৮৭ রানে অলঅউট হয় পাকিস্তান। যেখানে সর্বোচ্চ ২৯ রান আসে রমিজ রাজার ব্যাট থেকে। দুই অংকের দেখা পান মোটে ৪ ব্যাটার।
জাদেজার আগুন (৯ মার্চ, ১৯৯৬ - ব্যাঙ্গালোরু)
ভারতের অজয় জাদেজা সেই ম্যাচে ২৫ বলে ৪৫ রানের একটি ইনিংস খেলে আলাদাভাবে নজর কাড়েন। তার ওই ইনিংসের সুবাদে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পাকিস্তানকে ছিটকে দেয় ভারত।
ম্যাচে পাকিস্তানকে ২৮৮ রানের টার্গেট দেয় ভারত। যার জবাবে শেষ পর্যন্ত ২৪৮ রানে থামে পাকিস্তানের ইনিংস।
গাঙ্গুলীর সেঞ্চুরি (১৮ জানুয়ারি, ১৯৯৮ - ঢাকা)
বাংলাদেশের সিলভার জুবিলি ইন্ডিপেনডেন্স কাপে ঢাকায় হওয়া সেই ম্যাচে সাঈদ আনোয়ারের ১৪০ রানের ইনিংস ছাপিয়ে নায়ক হন সৌরভ গাঙ্গুলী। সেই ম্যাচে পাকিস্তানের ৩১৫ রানের টার্গেট ১ বল হাতে রেখেই টপকে যায় ভারত। যেখানে ১২৪ রানের ইনিংস খেলে ভারতের জয়ের নায়ক হন গাঙ্গুলী।
শচীনের আক্ষেপ ( ১ মার্চ, ২০০৩- সেঞ্চুরিয়ন)
সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়েছিল ভারত। তবে আক্ষেপ রয়ে গিয়েছিল শচীন টেন্ডুলকারের। ৭৫ বলে ৯৮ রানের ইনিংস খেলে মাত্র ২ রান দূরে সাজঘরে ফিরতে হয়েছিল তাকে। অবশ্য ওই ম্যাচে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন সাঈদ আনোয়ার। সাঈদের সেঞ্চুরির সুবাদে পাকিস্তান ২৭৩ রান করে। যা ২৬ বল ও ৬ উইকেট হাতে রেখে টপকে যায় ভারত।
ফখর জামান স্পেশাল ( ১৮ জুন, ২০১৭- লন্ডন)
লন্ডনের দ্য ওভাল স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেই ফাইনালে ভারতকে এক রকম ম্যাচ থেকে একাই ছিটকে দিয়েছিলেন ফখর জামান। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ১০৬ বলে ১১৪ রানের ইনিংস খেলেন ফখর। যার সুবাদে ৩৩৮ রানের শক্ত পুঁজি পায় পাকিস্তান। বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নামা ভারতকে এরপর চেপে ধরেন মোহাম্মদ আমির ও হাসান আলি। এই দুই পেসারের বোলিং তোপে ১৫৮ রানে অলআউট হয়ে ১৮০ রানে হারে ভারত। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি উঁচিয়ে ধরে পাকিস্তান।