Logo
Logo
×

খেলা

যে ৪ কারণে ভারতের কাছে হারল বাংলাদেশ

নেয়ামত উল্লাহ

নেয়ামত উল্লাহ

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:১৪ এএম

যে ৪ কারণে ভারতের কাছে হারল বাংলাদেশ

এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিটা বাংলাদেশের জন্য একটু অন্যরকম। কোনো আইসিসি টুর্নামেন্টের জন্য ঢাকা ছাড়ছে দল, তার আগে অধিনায়ক ঘোষণা দিচ্ছেন– ট্রফি জিততেই দেশ ছাড়ছে দল, এমন আর কখনো হয়নি, এবারই প্রথম।

তবে মাঠের ক্রিকেটটা অন্যরকম হলো না। পুরোনো দৃশ্যেরই পুনর্মঞ্চায়ন হলো দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। পুরোনো সব প্যাটার্নের দেখা মিলল আবারও। অথচ যে ঘোষণাটা দিয়েছিলেন শান্ত, তারপর বৃহস্পতিবারের ম্যাচটা হওয়ার কথা ছিল একটা বার্তা দেওয়ার ম্যাচ। দেশ ছাড়ার আগে অধিনায়কের কথাগুলো যে ফাঁকা বুলি নয়, তা প্রমাণ করার ম্যাচ। 

সেসব হয়নি ৪টি ভুলে। কী সে ভুলগুলো? চলুন দেখে নেওয়া যাক—

১. গোড়ায় গলদ, কন্ডিশন পড়তে পারেনি বাংলাদেশ
ভারতের স্কোয়াডে স্পিনারের সংখ্যা কত জানেন? ৫ জন। এ নিয়ে সাবেকরা একহাত নিয়েছেন কোচ গৌতম গম্ভীরসহ ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টকে। তবে সে সিদ্ধান্তটা কেন নিয়েছে ভারত, তার যথার্থতা মিলল গত ম্যাচে। দুবাইয়ের উইকেট খানিকটা মন্থর গতির। তার সঙ্গে তাল মেলাতে গতকালও ৩ স্পিনার– অক্ষর পাটেল, কুলদীপ যাদব আর রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে একাদশ সাজিয়েছিল।

বাংলাদেশ তাদের দলে রেখেছিল ২ স্পিনারকে। তার ফলটা দেখা গেল চোখের সামনে। দুই স্পিনার রিশাদ হোসেন আর মেহেদি হাসান মিরাজ যেখানে ২০ ওভারে রান দিলেন ৭৫, সেখানে তাসকিন আহমেদ বাদে দুই পেসার তানজিম হাসান সাকিব আর মুস্তাফিজুর রহমান ১৭.৩ ওভার বল করে রান দিলেন ওভারপ্রতি ৭ এর কাছাকাছি করে!

২. ‘পোস্ট বিপিএল ব্লু’ নাকি ‘ব্যাটিং ব্লু’?
বিপিএলের পরপরই বাংলাদেশ যখন ওয়ানডে ক্রিকেটে খেলতে নামে, তখন অবধারিতভাবে ভোগান্তির মুখে পড়ে দলের ব্যাটিং লাইন আপ। টি-টোয়েন্টির মারকাটারি ক্রিকেট থেকে ওয়ানডের স্থিতধী ঘরানার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় তো লাগবেই। শেষ তিন বিপিএলের পর ওয়ানডেতে এমন কিছুর দেখা মিলেছিল, ২০২২ সালে আফগানিস্তান, ২০২৩ সালে ইংল্যান্ড, ২০২৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিপাকে পড়তে হয়েছিল ব্যাটারদের। এবারও ব্যতিক্রম হলো না।

গতকাল ১০ ওভারের আগেই ৫ উইকেট হাওয়া হয়ে গিয়েছিল। শেষবার যখন পাওয়ারপ্লেতে ৫ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ, সেটা ছিল ২০২২ সালে আফগানিস্তান সিরিজে। বিপিএল শেষ করে এসেই এই সিরিজে নেমেছিল তামিম ইকবালের দল, তার প্রথম ম্যাচেই ২৮ রানে ৫ উইকেট খুইয়ে বসেছিল দলটা।

তবে এমন কিছু যে বিপিএলের রেশ কেটে যাওয়ার পরও হয় না, তাও বা কীভাবে বলা যায়! ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ এমন ধসের শিকার হয়েছিল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৯-৪, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৬-৪, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮১-৬, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৭০-৬ এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৩-৩—প্রতিটি ম্যাচেই তারা শুরুতে ধাক্কা খায় টাইগাররা।

অধিনায়ক শান্ত ম্যাচের আগে বলেছিলেন বিপিএল থেকে এসে মানিয়ে নিতে সমস্যা হবে না দলের ব্যাটারদের। তবে পুরোনো সে বৃত্ত থেকে গতকালও বের হওয়া হলো না দলের।

৩. হতাশ করেছে বোলিংও 
উইকেটটা সময় যত গড়াচ্ছিল, মন্থর আচরণ করছিল। ব্যাটে বল আসছিল না সহজে। কি? পরিস্থিতিটা পরিচিত মনে হচ্ছে না? এমন কন্ডিশন তো বাংলাদেশের জন্য রীতিমতো মুখস্থ! মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে এমন উইকেটে কতবার বাংলাদেশ খেলেছে, তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু বোলাররা সে পরিচিত কন্ডিশনের ফায়দাটা নিতে পারলেন কোথায়?

বোলাররা, বিশেষ করে মুস্তাফিজ আর তানজিম সাকিব গতির হেরফের ব্যবহার করলেন না, সঙ্গে উপরি পাওনা হিসেবে ভারতের ব্যাটারদের দিলেন লেগ স্টাম্পের ওপর অনেকগুলো হাফভলি। দুজনের ইকনমিটা তাই রীতিমতো আকাশ ছুঁয়ে গেল, ৭ এর কাছাকাছি রান দিলেন, দল যখন ২২৮ রান পুঁজি নিয়ে লড়ছে।

দুই বোলার যখন এভাবে রান দেবেন, তখন অন্যদের কাজ কঠিন হয়ে যায়। বাংলাদেশ সে কঠিনেরে ভালোবাসতে পারেনি, খেসারত দিয়েছে ম্যাচটা হেরে।

৪. ক্যাচ (রানআউটও) মিস, মানে ম্যাচ মিস
পুঁজি যখন ছোট থাকে, তখন ফিল্ডার আর বোলারদের ওপর দায়িত্বটা বেড়ে যায়। ফিল্ডাররাও সে দায়িত্ব পালন করতে পারলেন কই? ফিল্ডিং দিয়ে কীভাবে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলা যায়, তা এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শুরুর ম্যাচে নিউজিল্যান্ড দেখিয়েছে ভালোভাবে। ৩০ গজের ভেতরের ফিল্ডিং দিয়ে বাবর আজমদের রীতিমতো হাঁসফাঁস করিয়েই ছেড়েছেন তারা। তেমন ফিল্ডিং বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ দেখাতে পারেনি। ফলে স্পিনাররা যখন ভারতকে চেপে ধরছিলেন, সে চাপটা আরও কয়েক গুণ বেশি বাড়ানো যায়নি আর।

সেটা না হয় নাই হলো, কিন্তু রুটিন কাজ, যেমন হাতের ক্যাচ নেওয়া, রান আউটের সুযোগগুলো ঠিকঠাক কাজে লাগানো, তা তো করা উচিত! বাংলাদেশ সেটাও পেরেছে কোথায়? পুরো ভারত ইনিংসে দুটো সুযোগ নষ্ট করেছে, দুটোর খেসারতই দিতে হয়েছে শান্তদের।

প্রথমটার সঙ্গে শান্ত সরাসরি জড়িত, তার মাসুলটাই হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ইনিংসের ২৪তম ওভারে শ্রেয়াস আইয়ার আর শুভমান গিলের ভুল বোঝাবুঝিতে সুযোগ এসেছিল। তবে গিলের প্রান্তের স্টাম্পটা ভাঙতে ব্যর্থ হন শান্ত। গিল তখন ৪৭ রানে ব্যাট করছেন। সেই গিল শেষমেশ ম্যাচটা শেষ করেই ফিরেছেন, মাঠ ছেড়েছেন নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ১০১ রান। তাকে ফিফটির আগেই ফেরানো গেলে কি জয়ের সুযোগটা বেড়ে যেত না?

ম্যাচ শেষে গিলের সঙ্গী ছিলেন লোকেশ রাহুল। সে রাহুলও তো সুযোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে! তাও একবার নয়, দু’বার! ব্যক্তিগত ৯ রানে রাহুল তাসকিনের ওভারে আকাশে তুলে দিয়েছিলেন বল। তবে ডিপ মিড উইকেটে জাকের আলি বলটা হাতে রাখতে পারেননি। এরপর ভারতের রান যখন ২০১, তখনও একটা সুযোগ দিয়েছিলেন রাহুল। এবারও রানআউটের সুযোগটা কাজে লাগানো হয়নি শান্তর ভুলে।

এতসব ভুল যখন হয় এক ম্যাচে, তখন সে ম্যাচ আর জেতা সম্ভব কী করে? চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আরও দুই ম্যাচ বাকি বাংলাদেশের। সে দুই ম্যাচে এই ভুলগুলো শোধরাতে পারবেন শান্তরা?

ঘটনাপ্রবাহ: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫


আরও পড়ুন

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম