‘বয়স শুধু একটি সংখ্যা মাত্র’ — কথাটা তাদের দেখলেই যেন মনে আসে। ৩৫ বয়সটা যেখানে ফুরিয়ে যাওয়ার, সেখানে ৩৫ এ যেন তাদের পুনর্জন্মই হয়েছে। শচীন টেন্ডুলকার, ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, লিওনেল মেসি, রজার ফেদেরাররা তা করে দেখিয়েছেন। তাদের মতো আরও অনেক খেলোয়াড়ই আছেন যারা বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লড়ে গেছেন আরও বহুদূর।
আজ আমরা এমন কিছু ক্রিকেটার, ফুটবলার এবং টেনিস খেলোয়াড়ের কথা বলব, যারা বয়সের সীমা পেরিয়েও তাদের দক্ষতা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে ইতিহাস তৈরি করেছেন। এমন খেলোয়াড়দের আলাপ তুললে সবার আগে আসবে শচীন টেন্ডুলকারের নাম। ৩৫ পেরোনোর পর ২৬টি সেঞ্চুরি, ভাবা যায়? এই সংখ্যার সেঞ্চুরি থাকলে গড়পড়তার চেয়েও অনেক উঁচু মানের ব্যাটার কিছুটা তৃপ্তির ঢেঁকুর নিয়ে অবসরে যাবেন, সেখানে শচীন এতগুলো সেঞ্চুরি ৩৫তম বসন্ত পেরোনোর পর করেছেন, ভাবুন একবার!
সব মিলিয়েও তার পরিসংখ্যানটা বেশ ভালো। ৩৫-এর পর টেস্টে ৫৪.৬৯ গড়ে ৩,৫০০ রানের বেশি, ওডিআইতে ৪৮.৭৮ গড়ে ৪,০০০ রানেরও বেশি করেছেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, তার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন, বিশ্বকাপের শিরোপাটা তিনি জিতেছিলেন ৩৭ বছর বয়সে গিয়ে।
ক্রিস গেইলের নামটাও আনা যায় চাইলে। ২০১৫ থেকে ২০২১ পর্যন্ত টি২০ ক্রিকেটে ৩৫-এর পরেও ১০টি সেঞ্চুরি করেছেন। জিতেছেন ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা, তার আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ানও বনে গিয়েছিলেন তিনি।
এই তালিকায় মাইক হাসিও আসবেন। তার ৩৫-এর পরের পারফর্মেন্সটা দেখুন– ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত টেস্টে ৩৫-এর পরেও ৫টি সেঞ্চুরি করেছেন। রান তুলেছেন ৫০ গড়ে। মিসবাহ-উল-হক আসবেন এরপর। তিনি ৩৫ বছরে পা দিয়েছেন ২০১৩ সালে। এরপর থেকে ২০১৭ পর্যন্ত টেস্টে ৩৫-এর পরেও ১০টি সেঞ্চুরি করেছেন। ৫৫ গড়ে রান তুলেছেন, পাকিস্তানকে করেছেন বিশ্বসেরা টেস্ট দলও।
বোলারদের ভেতর জেমস অ্যান্ডারসন এই তালিকায় অবশ্যই আসবেন। ২০১৭ সালে ৩৫ পেরোনোর পর থেকে ২০২৩ পর্যন্ত টেস্টে ২০০ উইকেট নিয়েছেন, গড়টাও চোখে পড়ার মতো ২২.৫০!
মুত্তিয়া মুরালিধরন তার পুরো ক্যারিয়ারের নৈপুণ্যটা শেষ বয়সে এসেও ধরে রেখেছিলেন। ৩৫ পেরিয়েছেন ২০০৭ সালে। সেই থেকে ২০১০ পর্যন্ত টেস্টে ১৫০ উইকেট নিয়েছেন, ২৪.৫০ গড়ে। মুরালিধরনের কথা আনলে রঙ্গনা হেরাথও অবশ্যই আসবেন। একটা বড় সময় ধরে মুরালির ছায়ায় ছিলেন, যখন বেরোলেন, তখন নিজের কারিশমা দেখালেন ভালোভাবে। ২০১৩ সালে ৩৫ ছোঁয়ার পর তিনি খেলেছেন ৫ বছর। ২৫.২ গড়ে তিনি নিয়েছেন ১৫০ উইকেট।
ফুটবলে এই তালিকায় ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো না এসেই পারেন না। পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে তিনি যেমন গোল পেয়েছেন নিয়মিত, ৩৫ পেরিয়েও তাতে ভাটা পড়েনি। ২০২০ সালে ৩৫ পেরোনোর পর থেকে তিনি করেছেন ১০০রও বেশি গোল।
গোলের সংখ্যায় তাকে ছাড়াতে পারেননি। তবে লিওনেল মেসি অর্জনের দিক থেকে তাকে ছাড়িয়ে এগিয়ে গেছেন অনেক দূর। ২০২২ বিশ্বকাপ জিতেছেন ৩৫ পেরোনোর পর। এরপর ২০২৪ সালে কোপা আমেরিকাও জিতেছেন তিনি। এ সময় তিনি করেছেন ৫০ এরও বেশি গোল। রোনাল্ডোর কাতারে জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচও পড়বেন। ৩৫ এর পর থেকে অবসরের আগ পর্যন্ত তিন অঙ্কের গোলসংখ্যা আছে তারও। জিয়ানলুইজি বুফনও ঢুকে পড়বেন এই তালিকায়। ২০১৭ সালের বিশ্বসেরা গোলরক্ষক বনেছিলেন তিনি, তখন তার বয়স ছিল ৩৯! তার স্বদেশী পাওলো মালদিনিও পড়বেন তার কাতারে। ৩৫-এর পরে ২০০৩ আর ২০০৭ সালে এসি মিলানের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন তিনি।
টেনিসেও ৩৫ পেরোনোর পর দারুণ অর্জনের কীর্তি আছে বেশ। সবচেয়ে বড়টা বোধ হয় রজার ফেডেরারের। ৩৫-এর পরে তিনি ২০১৭ এবং ২০১৮ উইম্বলডন জিতেছিলেন। সেরেনা উইলিয়ামসও ৩৫ এর পর সফল হয়েছিলেন। ২০১৭ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেছিলেন।
এই খেলোয়াড়রা প্রমাণ করেছেন যে বয়স শুধু একটি সংখ্যা, এবং অধ্যবসায় ও দক্ষতা দিয়ে যে কোনো বয়সেই সাফল্য অর্জন সম্ভব।