ভদ্রলোকের খেলা হিসেবে পরিচিত ক্রিকেট। শুরুতে এটি ছেলেদের প্রধান খেলা হিসেবে পরিচিতি ছিল। তবে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) অনবদ্য প্রচেষ্টায় সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ক্রিকেটে নারীদের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।
ক্রিকেট বিশ্বে বেশ কিছু নারী খেলোয়াড় মাঠের পারফরম্যান্সে অসামান্য অবদান রেখে নিজেদের কিংবদন্তিদের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আজ আমরা এমন কয়েকজন নারী ক্রিকেটার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব, যারা ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে একের পর এক রেকর্ড গড়ে ভবিষ্যত প্রজন্মের আইডল হয়ে আছেন।
১. রাচেল হেইহো ফ্লিন্ট
এ তালিকায় শীর্ষে আছেন রাচেল হেইহো ফ্লিন্ট। রাচেল হেইহো ফ্লিন্ট নিঃসন্দেহে সর্বকালের একজন সর্বশ্রেষ্ঠ নারী ক্রিকেটার। ১৯৭৩ সালে নারীদের প্রথম বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা তারকা ছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হিসেবে তিনি তার দলকে উদ্বোধনী আসরেই শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। হেইহো ফ্লিন্ট শুধু খেলেননি, ক্রিকেটকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তার খেলা দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা স্টেডিয়ামে উপস্থিত হতেন।
তিনি টেস্ট আর ওয়ানডে মিলে ৫৫ ম্যাচে অংশ নিয়ে ৪টি সেঞ্চুরি আর ১৪টি ফিফটির সাহায্যে ২ হাজার ২৩৭ রান সংগ্রহের পাশাপাশি বল হাতে শিকার করেন ৪ উইকেট। মাত্র কয়েকজন নারী ক্রিকেটার তার সঙ্গে মাঠের লড়াইয়ে চেষ্টা করেছেন। মাঠে তার উপস্থিতি স্টেডিয়ামের দর্শকদের কাছে প্রেরণার ছিল।
২. স্ট্যাফানি টেলর
মাত্র ১৭ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় স্ট্যাফানি টেলরের। জ্যামাইকান এই তারকা ক্রিকেটার প্রথম ক্রিকেটার যিনি একই সঙ্গে ওয়ানডেতে ও বোলারদের অলরাউন্ড র্যাংকিংয়ে শীর্ষে আছেন। টেলর তিনটি আইসিসি বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন। তিনি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলে ২৮৫ ম্যাচে অংশ নিয়ে ৭টি সেঞ্চুরি আর ৬৩টি ফিফটির সাহায্যে ৯ হাজার ১১৫ রান করার পাশাপাশি বল হাতে শিকার করেন ২৫৩ উইকেট।
৩. বেলিন্ডা ক্লার্ক
অস্ট্রেলিয়ান তারকা বেলিন্ডা ক্লার্ক ক্রিকেট খেলার ধরন বদলে দিয়েছেন। তিনি ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রথম নারী। তিনি নারী ক্রিকেটের পথপ্রদর্শক, উদীয়মান ক্রিকেটারদের খেলাকে ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। ক্লার্কের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া দুটি বিশ্বকাপ জিতেছে। তার ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে নারী ক্রিকেটের জন্য সোনার মান নির্ধারণ করেছে। তিনি টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি মিলে ১৩৪ ম্যাচে অংশ নিয়ে ৭টি সেঞ্চুরি আর ৩৬টি ফিফটির সাহায্যে ৫ হাজার ৭৬৭ রান করার পাশাপাশি বল হাতে শিকার করেন ৪ উইকেট।
মিতালি রাজ একজন ভারতীয় তারকা। তিনি নারী ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেছেন। একমাত্র ভারতীয় অধিনায়ক তিনি, তার দলকে দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ক্রিকেট মাঠে অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য মিতালি কিংবদন্তি হয়ে আছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, ক্রিকেট শুধু একটি খেলা নয়; এটি একটি শিল্প। তিনি টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি মিলে ৩৩৩ ম্যাচে অংশ নিয়ে ৮টি সেঞ্চুরি আর ৮৫টি ফিফটির সাহায্যে রেকর্ড সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৮৬৮ রান সংগ্রহের পাশাপাশি বল হাতে শিকার করেন ৮ উইকেট।
৫. ক্যাথরিন ফিটজপ্যাট্রিক
ক্যাথরিন ফিটজপ্যাট্রিক অস্ট্রেলিয়ান তারকা। নারী ক্রিকেটে দ্রুততম বোলার হিসেবে তিনি ব্যাটসম্যানদের মনে ভয় ধরিয়ে দিতেন। ওয়ানডেতে ১০০টিরও বেশি উইকেট শিকার করে কিংবদন্তি হয়ে আছেন। ২০১৯ সালে ক্যাথরিন অস্ট্রেলিয়া (আইসিসি) ক্রিকেট হল অব ফেমে জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি মিলে ১২৪ ম্যাচে অংশ নিয়ে ১টি ফিফটির সাহায্যে ৮০৩ রান সংগ্রহের পাশাপাশি বল হাতে শিকার করেন ২৪০ উইকেট।
এলিস পেরি অস্ট্রেলিয়ান একজন তারকা ক্রিকেটার। সমসাময়িক সেরা ক্রিকেটারের মধ্যে তিনি অন্যতম। তিনি একজন অলরাউন্ডার। তিনি দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও বেশ পারদর্শী। তিনিই একমাত্র নারী ক্রিকেটার যিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৫ হাজার রান করেছেন এবং ৩০০ উইকেট নিয়েছেন।
এলিস পেরি শুধু ক্রিকেট মাঠেই নয়, ফুটবল মাঠেও বেশ জনপ্রিয়। তিনি ফিফা বিশ্বকাপে খেলেছেন। আইসিসির বর্ষসেরা নারী ক্রিকেটারের পুরস্কার এক-দুইবার নয়, তিনবার জিতেছেন। তিনি টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি মিলে ৩৩৪ ম্যাচে অংশ নিয়ে ৫টি সেঞ্চুরি আর ৪৮টি ফিফটির সাহায্যে ৭ হাজার ২২৬ সংগ্রহের পাশাপাশি বল হাতে শিকার করেন ৩৩১ উইকেট।