Logo
Logo
×

খেলা

ইমরান খান: হাল ছেড়ে দেওয়া যার অভিধানে নেই

Icon

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:২২ পিএম

ইমরান খান: হাল ছেড়ে দেওয়া যার অভিধানে নেই

সতীর্থদের কাঁধে চড়েই ক্রিকেট ছাড়েন ইমরান খান, তার আগে করেন নিজের ও পাকিস্তানের কোটি মানুষের স্বপ্নপূরণ— ছবি: সংগৃহীত

১৯৯০ সাল। ইমরান খান সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন, ‘অনেক হয়েছে, এবার ব্যাড-প্যাড তুলে রাখব।’ ইমরানের ক্রিকেট ছাড়ার সেই সিদ্ধান্ত মুহুর্তেই টক অব দ্য কান্ট্রি। কত অনুরোধ-অনুনয়। ইমরান নাছোড়বান্দা, ‘আজ কিংবা কাল—ক্রিকেট তো ছাড়তেই হবে। দেরি করে কি লাভ!’ কিন্তু কিংবদন্তি হওয়ার জন্য যার জন্ম, তাকে সময় দেরি তো করাবেই! ইমরানও সেদিন অবসর নিতে পারেননি।

এই অবসর নিয়েও কত কাণ্ড! ইমরানকে ডেকে পাঠালেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক। খুব করে অনুরোধ করলেন অন্তত বিশ্বকাপটা খেলে যেতে। দুই বছর পর অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে বসবে পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপ। ইমরান চাইলেন না। প্রেসিডেন্ট তবুও নাছোড়বান্দা। ইমরানকে ক্রিকেটে ফিরিয়েই তবে ছেড়েছেন। ইমরানও ছেড়েছেন মহানায়ক হয়েই।

দায়িত্ব ইস্যুতে একটা কথা আছে, ‘তখনই ছেড়ে যাও, যখন লোকে তোমাকে চাইবে।’ ক্যারিয়ারের শেষদিকে থাকা ইমরান খান সেই কথাটি শুনেছিলেন। ব্যর্থও হয়েছিলেন। কিন্তু নিজে ব্যর্থ হয়ে পাকিস্তানকে গড়ে দিয়েছেন এক ইতিহাস। এর আগে যা দেখেনি পাকিস্তান, সেই উপলক্ষেই রঙিন হয়েছিল লাহোর থেকে ইসলামাবাদ হয়ে করাচি।

১৯৯২ সালের ২৫ মার্চ। দিনটি চাইলেও ভুলতে পারবে না পাকিস্তান। সেবার সবার অনুরোধে একটা ভাঙাচোরা দল নিয়ে বিশ্বকাপে যান ইমরান খান। একে তো দলীয় কোন্দল, সঙ্গে খেলোয়াড়দের ইনজুরি। একের পর এক বাজে ঘটনা আর ড্রেসিংরুমের উত্তপ্ত পরিস্থিতি—সব মিলিয়ে কঠিন এক সময়ের মধ্যদিয়ে যায় পাকিস্তান।

মরার ওপর খাঁড়ার ঘাঁ হয়ে আসে টানা হার। ইমরান ব্রিগেড গ্রুপ পর্বের পাঁচ ম্যাচের চারটিতে হেরে বসে। পরের পর্বে যাওয়া নিয়ে যখন শঙ্কা তখন জেগে ওঠে পুরো শিবির। দুর্দান্ত বোলিংয়ের পাশাপাশি দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে পাকিস্তান পায় টানা তিন জয়। এরপর সেমিফোইনালে নিউজিল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে শিরোপার মঞ্চ। স্বপ্নের অনুভূতি পাচ্ছিলেন ইমরান খান। সফল হতে তখন এক ম্যাচ দূরত্ব। ইমরান কথা রাখেন।

পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা ছিল সত্যিই বিস্ময়কর। এমন দ্বন্দ্ব আর ভাঙাচোরা দল নিয়েও যে বিশ্বকাপ জেতা যায়, তা বোধহয় কেউ ভাবতেও পারেনি। ভাবার অবকাশও ছিল না। তখন পর্যন্ত পাকিস্তান বিশ্বকাপে যেত সেমির স্বপ্ন নিয়ে। তিনবার পেরেছিল, বাকি সময় শুরুতেই ফেরে।

তবে ওশেনিয়া অঞ্চলে সফর তাদের দুহাত ভরিয়ে দিয়েছে। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ফাইনালেও তেমন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জাভেদ মিয়াঁদাদের ৫৮ ও ইমরানের ৭২ রানে বেশ ভালো ভিত পেয়ে যায় পাকিস্তান। এরপর সেমির নায়ক ইনজামামের ৩৫ বলে ৪২ ও ওয়াসিম আকরামের ১৮ বলে ৩৩ রানের ঝোড়ো ইনিংসে ৬ উইকেটে তোলে ২৪৯ রান। জবাবে বাজে শুরুর পর মিডলে ইংলিশরা লড়াইয়ে ফেরে। তবে এক ওয়াসিমই দেন সব ধসিয়ে। শিরোপার স্বপ্নও ইংলিশদের মাটি হয় সেখানেই।

ওই ম্যাচে ইমরান শুধু ব্যাটে আর বোলিংয়ে নয়, অধিনায়কত্বেও দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা। ওলটপালট করে বোলিংয়ে আনা, ওয়াসিমকে সাহস জোগানো এবং হাল না ছাড়া— সব মিলিয়ে নিজের করে তুলেছিলেন দিনটা। ক্রিকেটটাও ছেড়ে দিলেন সেদিনই। এমন উপলক্ষ্য কজনের আসে। ইমরানকে নিয়ে পুরো মাঠ ঘুরলেন তার সতীর্থরা। কিংবদন্তি মাইক্রোফোন হাতে নিয়েই বললেন, ‘ইংলিশদের জন্য সমবেদনা। এটি জিততে চেয়েছি। বিশ্বকাপ জেতার অর্থ দিয়ে ক্যান্সার হাসপাতাল হবে। আমি এটাই চেয়েছি।’

২০০৯ সালে আইসিসি তাদের ‘হল অফ ফেমে’ লেখে ইমরানের নাম। তখন তাদের ওয়েবসাইটে পাকিস্তানের কিংবদন্তির পরিচয় লেখা হয়—‘একজন যোদ্ধা যিনি শেষ বল পর্যন্ত লড়েছেন।’

ভিন্ন লড়াইয়ে এখনো লড়ছেন ইমরান খান। তার আর অবসরের ফুরসত কই!

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম