
সতীর্থদের কাঁধে চড়েই ক্রিকেট ছাড়েন ইমরান খান, তার আগে করেন নিজের ও পাকিস্তানের কোটি মানুষের স্বপ্নপূরণ— ছবি: সংগৃহীত
১৯৯০ সাল। ইমরান খান সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন, ‘অনেক হয়েছে, এবার ব্যাড-প্যাড তুলে রাখব।’ ইমরানের ক্রিকেট ছাড়ার সেই সিদ্ধান্ত মুহুর্তেই টক অব দ্য কান্ট্রি। কত অনুরোধ-অনুনয়। ইমরান নাছোড়বান্দা, ‘আজ কিংবা কাল—ক্রিকেট তো ছাড়তেই হবে। দেরি করে কি লাভ!’ কিন্তু কিংবদন্তি হওয়ার জন্য যার জন্ম, তাকে সময় দেরি তো করাবেই! ইমরানও সেদিন অবসর নিতে পারেননি।
এই অবসর নিয়েও কত কাণ্ড! ইমরানকে ডেকে পাঠালেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক। খুব করে অনুরোধ করলেন অন্তত বিশ্বকাপটা খেলে যেতে। দুই বছর পর অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে বসবে পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপ। ইমরান চাইলেন না। প্রেসিডেন্ট তবুও নাছোড়বান্দা। ইমরানকে ক্রিকেটে ফিরিয়েই তবে ছেড়েছেন। ইমরানও ছেড়েছেন মহানায়ক হয়েই।
মরার ওপর খাঁড়ার ঘাঁ হয়ে আসে টানা হার।
ইমরান ব্রিগেড গ্রুপ পর্বের পাঁচ ম্যাচের চারটিতে হেরে বসে। পরের পর্বে যাওয়া নিয়ে
যখন শঙ্কা তখন জেগে ওঠে পুরো শিবির। দুর্দান্ত বোলিংয়ের পাশাপাশি দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে
পাকিস্তান পায় টানা তিন জয়। এরপর সেমিফোইনালে নিউজিল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে শিরোপার মঞ্চ।
স্বপ্নের অনুভূতি পাচ্ছিলেন ইমরান খান। সফল হতে তখন এক ম্যাচ দূরত্ব। ইমরান কথা রাখেন।
পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা ছিল সত্যিই বিস্ময়কর।
এমন দ্বন্দ্ব আর ভাঙাচোরা দল নিয়েও যে বিশ্বকাপ জেতা যায়, তা বোধহয় কেউ ভাবতেও পারেনি।
ভাবার অবকাশও ছিল না। তখন পর্যন্ত পাকিস্তান বিশ্বকাপে যেত সেমির স্বপ্ন নিয়ে। তিনবার
পেরেছিল, বাকি সময় শুরুতেই ফেরে।
তবে ওশেনিয়া অঞ্চলে সফর তাদের দুহাত ভরিয়ে দিয়েছে। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ফাইনালেও তেমন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জাভেদ মিয়াঁদাদের ৫৮ ও ইমরানের ৭২ রানে বেশ ভালো ভিত পেয়ে যায় পাকিস্তান। এরপর সেমির নায়ক ইনজামামের ৩৫ বলে ৪২ ও ওয়াসিম আকরামের ১৮ বলে ৩৩ রানের ঝোড়ো ইনিংসে ৬ উইকেটে তোলে ২৪৯ রান। জবাবে বাজে শুরুর পর মিডলে ইংলিশরা লড়াইয়ে ফেরে। তবে এক ওয়াসিমই দেন সব ধসিয়ে। শিরোপার স্বপ্নও ইংলিশদের মাটি হয় সেখানেই।
২০০৯ সালে আইসিসি তাদের ‘হল অফ ফেমে’ লেখে ইমরানের নাম। তখন তাদের ওয়েবসাইটে পাকিস্তানের কিংবদন্তির পরিচয় লেখা হয়—‘একজন যোদ্ধা যিনি শেষ বল পর্যন্ত লড়েছেন।’
ভিন্ন লড়াইয়ে এখনো লড়ছেন ইমরান খান। তার আর অবসরের ফুরসত কই!