Logo
Logo
×

খেলা

ফুটবলের ‘থ্রি আর’ ব্রাজিলের আনন্দ ও বেদনার কাব্য

শান্ত রিমন

শান্ত রিমন

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:০২ পিএম

ফুটবলের ‘থ্রি আর’ ব্রাজিলের আনন্দ ও বেদনার কাব্য

ছবি: সংগৃহীত

এখানে ফুটবল নিছক একটি খেলা নয়। ফুটবল এক আরাধনার নাম। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহর দেশটির সর্বত এটিকে লালন করা হয়। এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে গেছেন কোন দেশের কথা বলছি। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন ‘ব্রাজিল’। ফুটবলে যেই দেশটির রেকর্ড পাঁচটি বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব আছে। জানলে অবাক হবেন এই দেশটির নামই বদলে গিয়েছিল তিন ফুটবলারের কল্যাণে।

২০০২ বিশ্বকাপ জয়ের পর অনেক ফুটবলবোদ্ধা ব্রাজিলকে ‘ব্রারাজিল’ বলতে শুরু করেন। আর এই নামটি যে যথার্থ তা বিশ্বমঞ্চে প্রমাণ করে দেখিয়েছিলেন ব্রাজিল ফুটবলের ‘থ্রি আর’ খ্যাত ত্রয়ী রোনালদো, রিভালদো এবং রোনালদিনহো। এই ত্রয়ী বিশ্বকাপে নিজেদের নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। একটা আক্রমণভাগ কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে এই ত্রয়ী হয়ে উঠেছিলেন তার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ।

ফুটবলে ব্রাজিলের আনন্দ ও বেদনার মহাকাব্যেও জড়িয়ে এই ত্রয়ীর নাম। এই ত্রয়ীর পর যে আর কখনোই বলার মতো কিছু করে দেখাতে পারেনি সেলেসাওরা। ফুটবলে এই ত্রয়ীর চেয়ে বড় নাম হয়তো ব্রাজিল পেয়েছে। তবে সেই অর্থে তারা কেউই তাদের মতো করে নিজেদের আলাদা করতে পারেননি। তারা কেবল ক্লাব ফুটবলেই নিজেদের উঁচুতে নিতে পেরেছেন। তবে ব্রাজিল তাতে খুব বেশি লাভবান হতে পারেনি।


এই ত্রয়ীর বিদায়ের এত বছর পরও তাই তাদের মতো একটা আক্রমণভাগ গড়ে তুলতে না পারা ব্রাজিলকে ভোগাচ্ছে। বিশ্বমঞ্চে শিরোপার দাবি নিয়ে মাঠে নামা দলকে ফিরতে হচ্ছে শূন্য হাতে। আর দলটির সমর্থকদের আফসোস করতে হচ্ছে কেন- এত বছর পরও দলে রোনালদো, রিভালদো কিংবা রোনালদিনহোর মতো কেউ আসেনি তা নিয়ে।

অথচ, এই ত্রয়ীকে নিয়েও একটা সময় সন্দেহ ছিল। ১৯৯৯ সালে ব্যালন ডি’অর জেতা রিভালদোকে বরাবরই সমালোচিত হতে হয়েছে। তাকে বলা হতো তিনি বার্সেলোনার ফুটবলার। ব্রাজিল নয়। তাই এখানে এলেই নিজেকে গুটিয়ে ফেলেন তিনি। এসব সমালোচনার জবাবটা রিভালোদো দিয়েছিলেন ২০০২ বিশ্বকাপে। সেই আসরে ব্রাজিলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫টি গোল এসেছিল তার পা থেকে। আক্রমণভাগে গড়ে তুলেছিলেন এক অসাধারণ ত্রয়ী। এই ত্রয়ী বিশ্বকাপে ব্রাজিলের দেওয়া ১৮টি গোলের মধ্যে ১৫টিতেই অবদান রেখেছেন। যেখানে সর্বাধিক ৮ গোল দিয়ে গোল্ডেন বুট জিতেছেন রোনালদো। আর রোনালদিনহোর গোল ২টি।


রোনালদো: ১৯৯৩ সালে ব্রাজিল ফুটবলে পা রাখার পর বিশ্বকাপ জয়ের আগেই তিনি তারকা হয়ে উঠেছেন। ১৯৯৬ সালে সবচেয়ে কম বয়সে ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার হন। ১৯৯৭ সালে জেতেন ক্যারিয়ারের প্রথম ব্যালন ডি’অর। এরপর আরও দুটি ব্যালন ডি’অর জিতেছেন তিনি। আর মাঝের সময়টাতে ব্রাজিলকে জিতিয়েছেন একটি বিশ্বকাপ। এর মধ্যে ২০০২ বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে জোড়া গোলের কীর্তিও আছে তার। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ব্রাজিলের হয়ে ৯৮ ম্যাচে তার গোল সংখ্যা ৬২টি।


রিভালদো: ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলের জার্সিতে ৭৪ ম্যাচে ৩৫টি গোল করেছেন রিভালদো। এ সময়ে ব্রাজিল ও ক্লাবের হয়ে সম্ভাব্য সব পুরস্কার তার জেতা হয়েছে। ১৯৯৯ সালে জিতেছেন ব্যালন ডি’অর। তাছাড়া তিনি নবম ফুটবলার; যার কিনা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ব্যালন ডি’অর জয়ের কীর্তি আছে।


রোনালদিনহো: ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলকে সার্ভিস দিয়েছেন তিনি। ৯৭ ম্যাচে তার গোল ৩৩টি। তবে পথে বহু কীর্তি গড়ে দেখিয়েছেন রোনালদিনহো। মাঠে ফুটবল নিয়ে নিপুণ শৈলী দেখিয়ে ভক্তদের মন জয় করে আছেন তিনি। মাঠে ফুটবল নিয়ে তার মতো দক্ষতা খুব কম ফুটবলারই দেখাতে পেরেছে। ফুটবলের যে আলাদা সৌন্দর্য আছে; রোনালদিনহোর ফুটবল শৈলী সেটারই বাস্তব উদাহরণ হয়ে আছে আজও।

এই ত্রয়ীর পর ব্রাজিলের গল্পটা কেবলই হতাশার। এই ত্রয়ীর পর কাকা, রবিনহো, নেইমার কিংবা এসময়ের ভিনিসিয়ুস ও রুদ্রিগোরা নিঃসন্দেহে অনেক বড় নাম। তবে দিন শেষে জাতীয় দলের হয়ে তাদের অর্জনটা শূন্য। আরও একটা বিশ্বকাপ দোরগোড়ায়। আগামী বছরই মাঠে গড়াবে গ্রেটেস্ট শোন অন আর্থ খ্যাত ফুটবল বিশ্বকাপ। আর সেই বিশ্বকাপের আগে তাই দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে আক্রমণভাবে রোনালদো, রিভালদো ও রোনালদিনহোর মতো ‘থ্রি আর’ হয়ে ওঠা। যারা প্রতিপক্ষের সকল বাধা ডিঙিয়ে বল জালে জড়িয়ে দলকে এনে দেবে একটা স্বপ্নের বিশ্বকাপ। ঘুচবে ব্রাজিলের হেক্সা স্বপ্নের দীর্ঘ লালিত আক্ষেপ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম