অলরাউন্ডারনামা: ক্রিকেটের সৌন্দর্য বাড়িয়েছেন যারা
প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ব্যাটারদের খেলা ক্রিকেটে নিজেদের দিনে কম যান না বোলাররাও। দারুণ একটি রানআউট কিংবা অসাধারণ এক ক্যাচ নিয়ে ম্যাচ জেতাতে ভূমিকা রাখতে দেখা যায় ফিল্ডারদেরকেও। তবে ক্রিকেটের সব বিভাগে যারা অবদান রাখেন। ব্যাট, বল ও ফিল্ডিংয়ে সমান তালে অবদান রাখা অলরাউন্ডাররা হয়ে উঠেন দলের প্রাণভ্রমরা। যারা প্রতিটি দলের সম্পদ। যারা নিজ দলকে যেমন ম্যাচ জেতাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন তেমনি তাদের থেকে উপকৃত হয় গোটা ক্রিকেট। বাড়ে এই খেলাটির সৌন্দর্য।
সেই সব কালজয়ী কিংবদন্তি অলরাউন্ডারদের নিয়েই এই প্রতিবেদন। যারা কালে কালে ব্যাট ও বল হাতে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে গোটা বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয় জয় করে আছেন আজও।
গ্যারি সোবার্স
গ্যারি সোবার্স ১৯৫৪-১৯৭৪: ওয়েস্ট ইন্ডিজ
সর্বকালের সেরা ব্যাটারদের একজন স্যার ডন ব্র্যাডম্যান একবার গ্যারি সোবার্সকে নিয়ে বলতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘সে ক্রিকেটের একের ভেতর পাঁচ’। একমাত্র উইকেটকিপিং ব্যতিত গ্যার সোবার্স ক্রিকেট মাঠে করে দেখাননি এমন কিছু নেই। ৯৩ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৫৭.৭৮ গড়ে ৮ হাজার ৩২ রানের সঙ্গে তার উইকেট সংখ্যা ২৩৫টি। তাকে বলা হয় ক্রিকেটের আদি অলরাউন্ডারদের একজন।
কপিল দেব (১৯৭৮-১৯৯৪): ভারত
কী বোলিং কী ব্যাটিং ক্রিকেটের সর্বত্রই বিচরণ ছিল কপিল দেবের। এর বাইরে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার অসাধারণ এক গুন নিয়ে জন্মেছিলেন তিনি। তার হাত ধরে ১৯৮৩ সালে টানা দুইবারের বিশ্বকাপ জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ঘরে তুলে ভারত। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ১৩১টি টেস্ট ও ২২৫টি ওয়ানডে খেলেছেন। যেখানে তার উইকেট সংখ্যা ৪৩৪ ও ২৫৩টি। অন্যদিকে ভিন্ন দুই ফরম্যাটে রান যথাক্রমে ৫২৪৮ ও ৩৭৮৩।
ইমরান খান
ইমরান খান ( ১৯৭১-৯২): পাকিস্তান
পাকিস্তানের সর্বকালের সেরাদের একজন ইমরান খান। তার হাত ধরে ১৯৯৬ বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছে পাকিস্তান। ব্যাট ও বল হাতে ইমরান ছিলেন পাকিস্তান দলের সত্যিকারের নেতা। পাকিস্তানের হয়ে ৮৮টি টেস্ট ও ১৭৫টি ওয়ানডে খেলেছেন ইমরান। যেখানে তার রান ৩৮০৭ ও ৩৭০৯। অন্যদিকে বল হাতে তার উইকেট সংখ্যা ৩৬২ ও ১৮২টি।
সনাথ জয়সুরিয়া (১৯৯১-২০১১): শ্রীলংকা
ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষের বোলারদের কাছে সনাথ জয়সুরিয়া ছিলেন এক আতঙ্কের নাম। ওপেনিংয়ে নেমে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালাতেন তিনি। দলের প্রয়োজনে বল হাতেও ছিলেন যথেষ্ট কার্যকর যা তার পরিসংখ্যান দেখলেই স্পষ্ট হয়। ৩২৩ টি ওয়ানডে উইকেটের সঙ্গে ব্যাট হাতে করেছেন ১৩ হাজার ৪৩০ রান। যা লংকান ক্রিকেটের চতুর্থ সর্বোচ্চ।
শেন ওয়াটসন (২০০২-১৫): অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের এক সম্পদে পরিণত হয়েছিলেন শেন ওয়াটসন। ২০১১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৯৬ বলে ১৫ ছক্কায় ১৮৫ রানের অনবদ্য এক ইনিংস রয়েছে তার। যা তার ক্যারিয়ার সেরা। এর বাইরে ওয়াটসন অজিদের হয়ে ৫৯টি টেস্ট ও ১৯০টি ওয়ানডে ও ৫৮টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। যেখানে তার রান ৩৭৩১ ও ৫৭৫৭। অন্যদিকে বল হাতে তার উইকেট সংখ্যা ৭৫, ১৬৮ ও ৪৮টি। পেস বোলিং অলরাউন্ডার হওয়ার সুবাদে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও বেশ নাম ছিল ওয়াটসনের।
শহীদ আফ্রিদি (১৯৯৬-২০১৫): পাকিস্তান
ক্রিকেটে ৩৬ বলে সেঞ্চুরি থেকে শুরু করে পাকিস্তানের হয়ে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বহু কীর্তি গড়েছেন আফ্রিদি। ব্যাট হাতে আফ্রিদি ছিলেন প্রতিপক্ষের বোলারদের কাছে আতঙ্কের নাম। আর বল হাতে তিনি ছিলেন ঘূর্ণির জাদুকর। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে পাকিস্তানের হয়ে ২৭টি টেস্ট, ৩৯৮টি ওয়ানডে ও ৯৯টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন আফ্রিদি। রান করেছেন ১৭১৬, ৮০৬৪ ও ১৪১৬। অন্যদিকে বল হাতে তার উইকেট সংখ্যা ৪৮, ৩৯৫ ও ৯৮।
বেন স্টোকস (২০১১-বর্তমান): ইংল্যান্ড
আধুনিক ক্রিকেটের সত্যিকারের অলরাউন্ডার যাকে বলে এককথায় বেন স্টোকস তাই। দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে দায়িত্ব নিতে জানেন। একা হাতে ম্যাচ জেতানোর অনন্য কীর্তিও আছে তার। অ্যাশেজে শেষ উইকেটে জ্যাক লিচের সঙ্গে ৮৬ রান তাড়া করে দলকে জিতিয়েছেন স্টোকস। খেলেছেন ১৩৫ রানের ইনিংস। যা তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা। ইংল্যান্ডকে ২০১৯ বিশ্বকাপ জেতানোর অন্যতম রূপকারও তিনি।
সাকিব আল হাসান
সাকিব আল হাসান (২০০৬-বর্তমান): বাংলাদেশ
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা তারকা। বাংলাদেশের বহু কীর্তিতে যার নাম জড়িয়ে। একটা লম্বা সময় যিনি ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ছিলেন। রাজনৈতিক কারণে ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় সাকিবের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেলেও দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বহু সাফল্য এনে দিয়েছেন তিনি। বিশ্ব ক্রিকেটে সম্মানিত হয়েছেন নিজেও। সাকিব দেশের হয়ে খেলেছেন ৭১টি টেস্ট, ২৪৭টি ওয়ানডে ও ১২৯টি টি-টোয়েন্টি। যেখানে তার রান যথাক্রমে ৪৬০৯, ৭৫৭০ ও ২৫৫১। অন্যদিকে বল হাতে তার উইকেট সংখ্যা যথাক্রমে ২৪৬, ৩১৭ ও ১৪৯।
জ্যাক ক্যালিস (১৯৯৫-২০১৪): দক্ষিণ আফ্রিকা
ক্রিকেটের সর্বকালের সেরাদের একজন তিনি। ক্রিকেটে যেই কীর্তি করে দেখিয়েছেন তিনি তা বহুকাল মনে রাখবে ক্রিকেটপ্রেমীরা। অলরাউন্ডার নৈপুণ্যে তিনি সেরাদের একজন। আধুনিক ক্রিকেটে অলরাউন্ডারদের কাছে জ্যাক ক্যালিস এক আদর্শের নাম। বিশ্বের তৃতীয় সর্বাধিক টেস্ট রান তার নামের পাশে। ওয়ানডেতে সপ্তম সেরা। দীর্ঘ ক্রিকেট ক্যারিয়ারে কেলিস খেলেছেন ১৬৬টি টেস্ট, ৩২৮টি ওয়ানডে ও ২৫টি টি-টোয়েন্টি। যেখানে তার রান যথাক্রমে ১৩,২৮৯, ১১,৫৭৯ ও ৬৬৬। অন্যদিকে বল হাতে উইকেট সংখ্যা ২৯২, ২৭৩ ও ১২টি।
এই গ্রেটদের বাইরেও বহু অলরাউন্ডারদের পেয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব। অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স, ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবি ও রশিদ খান, জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজা যার মধ্যে অন্যতম। ক্রিকেটপ্রেমীরা যুগযুগ ধরে মনে রাখবেন এই তারকাদের কীর্তি।