রকি ফ্লিনটফ/সংগৃহীত
ফ্লিনটফ। নামটা শুনলে আপনার কী মনে পড়ে? অতি অবশ্যই ২০০৫ অ্যাশেজ মনে পড়তে বাধ্য। এক একটা উইকেট তুলে নিচ্ছেন আর বিধ্বংসী সব উদযাপন, প্রতিপক্ষকে ছিঁড়ে-খুঁড়ে ফেলার তীব্র অভিপ্রায় ঠিকরে বেরিয়ে আসছে তার চোখ মুখ থেকে– দুই দশক আগের অ্যাশেজে এমন দৃশ্যটা বেশ নিয়মিতই হয়ে গিয়েছিল। সেবার ইংল্যান্ড যে রিকি পন্টিংয়ের অজেয় অস্ট্রেলিয়াকে হতভম্ব করে ২-১ ব্যবধানে শিরোপাটা জিতেছিল, তাতে বড় অবদান তো ফ্লিনটফেরই ছিল। তবে তিনি ছিলেন অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ।
এবার ইংলিশ ক্রিকেটে নিজের আবাহন শোনাচ্ছেন আরেক ফ্লিনটফ। তার নাম রকি ফ্লিনটফ। নাম শুনে যদি কিছু আঁচ করতে পারেন, তাহলে আপনার নিশানা লেগে গিয়েছে একেবারে সঠিক জায়গায়— তিনি অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের ছেলেই।
বাবা-ছেলে বাদেও দুজনের আরও একটা সম্পর্ক আছে। সে সম্পর্কটা গুরু-শিষ্যের। ইংল্যান্ড লায়ন্স অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সফর করছে এখন। সে দলের কোচ অ্যান্ড্রু আর দলের একজন সদস্য রকি। বাবাকে ডাগ আউটে রেখে অবিস্মরণীয় একটা কীর্তি গড়ে বসেছেন রকি। ১০৮ রানের অনবদ্য এক সেঞ্চুরি করেছেন– যা আবার তার ক্যারিয়ারেরই প্রথম।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে রকি যখন ব্যাট হাতে নিয়ে নামছেন, তখন দলের ৭ উইকেট পড়ে গিয়েছে। নবম ব্যাটার হিসেবে নেমেছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল স্রেফ টেল এন্ডারদের উপস্থিতি। তবে সেসব বিরুদ্ধ পরিস্থিতির নিকুচি করে তিনি হাঁকিয়েছেন সেঞ্চুরি।
ইংল্যান্ড লায়নসের হয়ে রকি সেঞ্চুরিটি করেছেন ৯ নম্বরে নেমে। সাবেক ইংলিশ অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের ছেলের সেঞ্চুরিই তাঁর দলকে বড় লিড এনে দিয়েছে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া একাদশের ২১৪ রানের জবাব দিতে নেমে ইংলিশরা ১৬১ রানে ৭ উইকেট খুইয়ে বসেছিল।
এরপর রকি এসে ফ্রেডি ম্যাককানকে সঙ্গে নিয়ে গড়েন ৬৬ রানের জুটি। সেই ম্যাকান আউট হন ৫১ রানে। এরপর দশম উইকেটে মিশেল স্ট্যানলিকে সঙ্গে নিয়ে গড়েন ৭২ রানের জুটি। সেখানে স্ট্যানলি করেছিলেন মোটে ৪ রান। রকির ব্যাটেই যে সচল ছিল দলের রানের চাকা, তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।
প্রতি আক্রমণের কৌশলে রকি সেঞ্চুরিটা করেছেন। ১২৭ বলে তিনি করেছেন ১০৮ রান। তার ৭২ রান এসেছে বাউন্ডারি থেকে, চার মেরেছেন ৯টি, ছয় মেরেছেন ৬টি। শেষ ব্যাটার হিসেবে তিনি যখন আউট হলেন, তখন দলের রান ৩১৬, লিড পেয়ে গেছে ১০২ রানের।
সেঞ্চুরি বিষয়টাই ব্যাটারদের জন্য পরম আরাধ্য। প্রথম সেঞ্চুরিটা আরও বিশেষ কিছু। রকির কাছে এই সেঞ্চুরির মাহাত্ম্য বোধ হয় আরও বেশি। বাবাকে কোচ হিসেবে ডাগ আউটে রেখে প্রথম সেঞ্চুরির সাক্ষী বানাতে পারেন ক’জন? রকি সেটা পেরেছেন।
তবে তার একটা আফসোস থেকে যেতেই পারে। ম্যাচটা ট্যুর ম্যাচ, আনুষ্ঠানিক ম্যাচ নয়, সেটা হলে হয়তো রেকর্ডের পাতাতেও উঠে যেতে পারত তার নাম। ইংল্যান্ড লায়ন্সের হয়ে সর্বকনিষ্ট সেঞ্চুরিয়ান বনে যাওয়ার সে রেকর্ডটা কার জানেন? অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের। ২০ বছর ২৮ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করে রেকর্ডটা গড়েছিলেন রকির বাবা। আর রকি তা করলেন ১৬ বছর ২৯১ দিনে। ট্যুর ম্যাচে না হলে রেকর্ডটা একান্তই নিজের করে নিতে পারতেন রকি। বিশেষ সেঞ্চুরির দিনে কি এ আক্ষেপটা পোড়াবে নতুন ফ্লিনটফকে?