Logo
Logo
×

খেলা

আজও ওয়াকার-ওয়াসিম দ্বন্দ্বের মাশুল গুনছে পাকিস্তান

শান্ত রিমন

শান্ত রিমন

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:০০ পিএম

আজও ওয়াকার-ওয়াসিম দ্বন্দ্বের মাশুল গুনছে পাকিস্তান

ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের ক্রিকেটে তখন সোনালি সময়। অধিনায়ক ইমরান খানের নেতৃত্বে ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনিস রীতিমতো বিশ্ব ক্রিকেট দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। গতির সঙ্গে বাউন্সার, ইনসুং ও আউটসুংয়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের নাকাল করে ছাড়ছেন। ২২ গজে ত্রাসের রাজত্ব করছেন এই ত্রয়ী। অথচ, সর্বকালের সেরা এই পেস ত্রয়ীর ইমরান খান পরবর্তী গল্পটা কেবলই হতাশার। যেখানে বন্ধুত্বের গল্প ছাপিয়ে সামনে এসেছে ওয়াসিম-ওয়াকার দ্বন্দ্ব। এই দুই কিংবদন্তির সম্পর্কে অবনতির মাশুল আজও গুনতে হয় পাকিস্তান ক্রিকেটকে।


ইমরান খানের নেতৃত্বে ১৯৮৪ সালে পাকিস্তান দলে আসা ওয়াসিম আকরাম নিজেকে পাকা করে ফেলেছেন দলে। এর ঠিক ৫ বছর পর ১৯৮৯ সালের দিকে ওয়াকার ইউনুসকে দলে আনেন ইমরান। পরের গল্পটা কেবলই সাফল্যের। ৮০-৯০ দশকে এই দুই মহারথীর মাঠের ক্রিকেটীয় লড়াই ছিল তখন উপভোগের অন্যতম বিষয়। পরবর্তীতে তো এই ত্রয়ী ১৯৯৬ বিশ্বকাপটাও জিতিয়েছেন পাকিস্তানকে।

একই দলের হলেও নিজেদের মধ্যে একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মানসিকতা ছিল দুজনেরই। যাতে করে আখেরে লাভটা হয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেটের। একটা সময় তো এই দুজনের খ্যাতিও ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা বিশ্বে। দুজন হয়ে উঠেছিলেন পেসারদের আইডল। এই জুটি সম্মিলিতভাবে খেলেছেন ৮০৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। শিকার করেছেন ১৭০৭টি উইকেট। এই জুটির গল্পটাও তাই তখন ছিল সবার মুখে মুখে।


পাকিস্তানের ক্রিকেটে আগে আসা ও বয়স বেশি হাওয়ায় ওয়াসিমের ম্যাচের সংখ্যায় বেশি। তবে দুজন আলাদা সময়ে ক্রিকেট শুরু করলেও অদ্ভুতভাবে তাদের শেষটা হয়েছিল একই দিনে (২০০৩ সালের ৪ মার্চ)। তবে সেই গল্পটা পাকিস্তান ক্রিকেটকে এখনও পোড়ায়। সেই গল্পে যাওয়ার আগে এই জুটির কিছু পরিসংখ্যানে চোখ ভুলিয়ে আসা যাক।

ওয়াসিম পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে ১০৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন। এর মধ্যে তার শিকার ৪১৪ উইকেট। গড় ২৩.৬২। অদ্ভুতভাবে ওয়াকার ইউনুসের গড়ও প্রায় একই ২৩.৫৬। তবে তিনি ম্যাচ খেলেছিলেন ৮৭টি। যার বিপরীতে তার শিকার ৩৭৩ উইকেট। ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তিতেও দুজনে সমানে সমান। সমান পাঁচবার করে এই কীর্তি গড়েছেন দুই কিংবদন্তি।


ওয়ানডেতেও পরিসংখ্যানটা বেশ। দুজনে একত্রে মিলে খেলেছেন ৬১ ম্যাচে। সেখানে ওয়াসিমের উইকেট সংখ্যা ২৮২টি। আর ওয়াকার নিয়েছিলেন ২৭৭টি উইকেট। অর্থাৎ দুজনের মধ্যে লড়াইটা ছিল বরাবরই। যা উপভোগ করেছে ক্রিকেটপ্রেমীরা।

অথচ, মাঠের মধুর সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা একটা সময়ে ইগোতে রূপ নেয়। শোনা যায়, একটা সময় একে অন্যের সঙ্গে কথাও বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন দুজনে। যা পরবর্তীতে পুরো দলের ওপরই বাজে প্রভাব ফেলেছে। এ দুজনের ইগো ক্ল্যাশের পর সেই থেকে আর বেড়িয়ে আসতে পারেনি পাকিস্তান ক্রিকেট। বর্তমান সময়েও যা প্রায়শই আলোচনায় আসে। প্রায়শই শোনা যায় দলের মধ্যে ক্রিকেটারদের দ্বন্দ্বের খবর। আর ঘুরেফিরে তখন চলে আসে ওয়াকার-ওয়াসিম দ্বন্দ্বের বিষয়টি। 


২০০৩ সালে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই জুটি তাদের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি খেলেছিলেন। ওয়াসিমের চেয়ে প্রায় ৫ বছরের ছোট হলেও এরপর আর ওয়াকারকে দেখা যায়নি মাঠে। অনেকটা ওয়াসিমের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরেই প্রিয় ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছিলেন ওয়াকার। নয়তো তার ক্যারিয়ারটা আরও সমৃদ্ধ হতে পারত। ওয়াকারের এই অকালে ঝরে পড়ার পেছনে অনেকেই আজও ওয়াসিমকে দায়ী করেন।

তবে এক্ষেত্রে নিজেরও যে দায় আছে সেটা পরবর্তী সময়ে স্বীকার করেছেন ওয়াকার। পাকিস্তানের এই কিংবদন্তি পেসার সে জন্য অনুশোচনায়ও ভুগেন। ওয়াসিমের সঙ্গে বিরোধ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ওয়াসিম ভাইয়ের সঙ্গে আমার ভালো বন্ধুত্ব ছিল। তিনি সবসময়ই বড় ভাই সুলভ। তিনি সবসময় মাঠ এবং মাঠের বাইরে আমাকে সমর্থন করেছেন এবং সাহায্য করেছেন। তবে এটা সত্যি যে, আমাদের মধ্যে সমস্যা ছিল। অবশ্য তার শুধু আমার সাথে সমস্যা ছিল না আমাদের দলেও সমস্যা ছিল। কাজেই আপনি যদি এর জন্য আমাকে সত্য জিজ্ঞাসা করেন- হাতলে আমি বলব, হ্যাঁ আমি মাঝে মাঝে এর জন্য আফসোস করি। কারণ এটি পাকিস্তান ক্রিকেটকে সত্যিই সাহায্য করেনি।’

আসলেই তাই- ওয়াকার-ওয়াসিমের দ্বন্দ্ব পাকিস্তানকে মোটেও সাহায্য করেনি। বরং পদে পদে পাকিস্তান ক্রিকেট একটু একটু করে পিছিয়ে গেছে। এসময় দলের মধ্যে ঐক্য খুব একটা চোখে পড়েনি। এখনও প্রায়শই দলের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টি শোনা যায়। যার চূড়ান্ত ফল দেখা যায় দলটির মাঠের পরফরম্যান্সেও। ইমরান খানের পর এখনও বিশ্বকাপ জিততে পারেনি পাকিস্তান।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম