Logo
Logo
×

খেলা

খেলা দেখতে অ্যালার্ম দেওয়া তারকাই এখন প্রতিপক্ষের জন্য অ্যালার্মিং

Icon

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৬ এএম

খেলা দেখতে অ্যালার্ম দেওয়া তারকাই এখন প্রতিপক্ষের জন্য অ্যালার্মিং

গত দুমাসে নিজেকে ভিন্ন রূপে আবিষ্কার করেছেন নীতিশ— ছবি: সংগৃহীত

স্কুল থেকে মাঠ, মাঠ থেকে ঘর হয়ে আবারও স্কুল— নীতিশ রেড্ডি বিষিয়ে পড়েছিলেন। সারাদিন শুধু ক্রিকেট, তার সঙ্গে রাজ্যের পড়া নিতে পারছিলেন না। একসময় হালও ছেড়ে দেন। বিশাখাপত্তনম জেলা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন থেকে বাবা মুত্যালা রেড্ডির কাছে পরামর্শ আসে, নীতিশকে দিয়ে আর যা হোক, ব্যাট-বলের ক্রিকেটটা হবে না। বইটা অন্তত ভালো করে পড়ুক, চাকরি-বাকরি করে খেতে পারবে।’ সরকারি চাকুরে বাবার খুব কষ্ট হল। নীতিশের বদলানো শুরু তখন থেকেই। সেই ডানপিটে নীতিশ শেষ দুমাসে বদলে গেছেন আরও অনেকটা।

পুরোনো গল্পই বলি। ভারতের একাদশে জায়গা অনেকটা পাঁকা করে নেওয়া নীতিশের একসময় ক্রিকেটে মনই বসত না। কিন্তু বাবার অদম্য চেষ্টা আর আগ্রহে নিজেকে না করতে পারেননি। ২০১৩ সালে জেলা ক্রিকেট থেকে তিরস্কার শোনার পর জেদ চেপে বসে। বাড়ি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে মিউনিসিপাল স্টেডিয়ামে শুরু হয় কঠোর প্রাকটিস। ঝড়-বৃষ্টি-রোদ কোনো কিছুতেই থামেনা চেষ্টা। কদিন পরে সেখান থেকে চলে আসেন ৩০ কিমি দূরের আরেকটি স্টেডিয়ামে। নীতিশ ও তার বাবার লক্ষ্য ওখানকার সেরা বোলারদের মোকাবিলা করা। নীতিশ পেরেছেন।

ভারতের জাতীয় দলে কদিন আগে আসা নীতিশ ছাপ রেখেছেন বিশাল। অজিভূমে ভারত যখন ভূপাতিত হচ্ছিল তখন অনেকটা একা কাঁথে দলকে সামলেছিলেন নীতিশ। বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই ভালো খেলেছেন। হয়তো বড় রান করতে পারেননি, কিন্তু ভারতকে একাধিকবার বিপদসীমা থেকে উদ্ধার করেছেন। ২১ বর্ষী তরুণ তুর্কির ব্যাটে যে বড় রান আসতে চলেছে, তার পূর্বাভাস ছিল। সেটা আসে মেলবোর্নে, বক্সিং ডে টেস্টে। ভারতের যখন খুব প্রয়োজন ঠিক তখন। নীতিশ পারেন। নিজে জেতেন, ভারতকে লড়াইয়েও রাখেন। ভারতের জার্সিতে এখনো তার অনেক বাকি। লড়াই করে বাঁচা নীতিশ হাল ছাড়তে রাজি নন।

তাইতো সোশ্যাল মিডিয়ায় অকপটে শুনিয়েছেন সেদিন আর এদিনের গল্প। একসময় সকালে অ্যালার্ম দিতেন অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ দেখতে। মাস দুই আগে তিনিই অস্ট্রেলিয়ার অ্যালার্ম বাজিয়েছিলেন। নীতিশের চোখ এখন অনেক দূর, অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট ম্যাচ দেখার জন্য অ্যালার্ম দিয়ে ভোরবেলায় ওঠা থেকে নিজেই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে গিয়ে খেলা— গত দুমাসে একজন খেলোয়াড় এবং ব্যক্তি হিসাবে নিজের অনেক উন্নতি করার সুযোগ পেয়েছি। যে ভাবে চেয়েছিলাম সে ভাবে সিরিজ শেষ হয়নি ঠিকই। তবে আমরা শক্তিশালী হয়ে ফিরব।’

গত বছরের আইপিএলে হায়দরাবাদের হয়ে ভাল খেলে নজর কেড়েছিলেন নীতিশ। অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে কোচ গৌতম গম্ভীর কার্যত জোর করেই তার নাম ঢুকিয়েছিলেন দলে। নীতিশও দাম রাখেন। পার্থ টেস্ট অভিষেক হয় নীতিশের। তারপরে  খেলেছেন বাকি চার টেস্টেও। মেলবোর্নে ভারত না জিতলেও নীতীশের শতরান কাড়ে নজর। পুরো সিরিজে ৩৭.২৫ গড়ে ২৯৮ রান করেছেন। বল হাতে পেয়েছেন পাঁচটি উইকেট।

দুই মাসে অনেকখানি বদলে গেছে নীতিশের জীবন। ভারত দলে জায়গা পাকা হয়েছে। আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দ্রবাদ তাকে ৬ কোটি রূপিতে রেখে দিয়েছে। কদিন পর ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও দলে আছেন নীতিশ। অথচ ক্রিকেটেই তিনি বিষিয়ে উঠেছিলেন। নীতিশের বদলে যাবার শুরু কখন-কিভাবে? কদিন আগে নীতিশ শুনিয়েছিলেন সেই গল্প, শুরুর দিকে ক্রিকেট নিয়ে আমি সিরিয়াস ছিলাম না। বাবা আমার জন্য কাজ ছেড়ে দিয়েছিলেন। আমার উত্থানের পিছনে বহু ত্যাগ রয়েছে। একদিন দেখি, আমার বাবা টাকাপয়সার সমস্যার জন্য কাঁদছেন। আমি তখন ভাবি, এভাবে চললে হবে না। যেখানে আমার বাবা কষ্ট করছেন, সেখানে ক্রিকেটকে শুধু মজা হিসেবে নিলে চলবে না।’

সেই সিরিয়াসনেস নীতিশকে বিশ্বে চিনিয়েছে। ব্যাট কিংবা বল হাতে হুট করেই জ্বলে ওঠা নীতিশ এখন প্রতিপক্ষের কাছে এক আতঙ্কের নাম। দৈর্ঘ্যে-প্রস্তে সেই নাম বহুদূর ছড়িয়ে দিতে চান ২১ বর্ষী তারকা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম